এস এম সাইফুল ইসলাম, প্রতিনিধি: বাংলাদেশে নতুন কোন ফ্যাসিবাদ কায়েম হতে দেওয়া হবে না বলে হুশিয়ারি দিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর ও চরমোনাই পীর মুফতী সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, যারা বিগত ১৭ বছর দেশের মানুষের উপর জুলুম করেছে, তাদেরকে আর ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার রক্তে রঞ্জিত কোনো সরকারকে আর ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হবে না।
শুক্রবার (৮ নভেম্বর) বিকাল ৩ টায় পুরানা পল্টনস্থ দৈনিক বাংলা মোডে ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
চরমোনাই পীর বলেন, বাংলাদেশের উল্যেখযোগ্য মানুষ শ্রমজীবী। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অর্জিত বাংলাদেশে শ্রমিকদের উপর এখনও বৈষম্য রয়ে গেছে। এই বৈষম্য দূর করার একমাত্র উপায় ইসলামী শ্রমনীতি।
তিনি বলেন, মালিক শ্রমিক সম্পর্ক হতে হবে ভাই ভাই। তাদের সম্পর্ক ভাই ভাই হলে কোনো বৈষম্য থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কোনো দলের লেজুরভিত্তি করে ক্ষমতায় যেতে চায় না। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নিজস্ব শক্তিতে ক্ষমতায় যেতে চায়। ক্ষমতায় আসুক না আসুক ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও তাদের সকল অঙ্গ সংগঠন দেশের যে কোনো সংকট সমস্যায় সবার আগে রাজপথে থকবে।
এসময় তিনি সারাদেশে শ্রমিকদের জন্য সরকারী সুযোগ তৈরির দাবি জানান।
আয়োজিত সমাবেশে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে ১৫ দফা দাবির ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়। দাবিগুলো হলো-
১.শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়ন করতে হবে।
২.শ্রমিক বান্ধব রাজনীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাষ্ট্র পরিচালনায় শ্রমিকদের সরাসরি অংশগ্রহন নিশ্চিত করতে হবে।
৩. বর্তমান নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের দাম আকাশচুম্বী। তাই খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে শ্রমিকের নূন্যতম মজুরী ২৫,০০০ (পঁচিশ হাজার টাকা) নির্ধারণ করতে হবে।
৪.ভর্তুকিমূল্যে শ্রমিক পরিবারকে চাল, ডাল, আটা, ভোজ্যতেল, চিনি, শিশুখাদ্যসহ প্রয়োজনীয় পন্য সামগ্রি সরবরাহ করতে হবে।
৫.অসুস্থ শ্রমিকদের ভাতা প্রদান করতে হবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত শ্রমিকদের ঝুঁকি ভাতা ও বীমা সুবিধার আওতায় আনতে হবে।
৬.বাধ্যতামূলকভাবে সকল শ্রমিকের নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র প্রদান করতে হবে। যথাযথ প্রক্রিয়া ব্যতিত শ্রমিক ছাটাই করা যাবে না।
৭.কৃষকের উৎপাদিত পন্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হবে এবং সুবিধাভোগীদের অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৮. ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা, সিএনজি ও রিক্সার লাইসেন্সের জটিলতা নিরসন করতে হবে।
৯.পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফেরাতে সকল প্রকার চাঁদাবাজি ও হয়রানি বন্ধ করতে হবে। পণ্য পরিবহনে ওয়েস্কেল সংশ্লিষ্ট দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ করতে হবে।
১০.প্রবাসি শ্রমিকদের হয়রানি ও টিকেট সিন্ডিকেট বন্ধ করতে হবে এবং বিদেশগমনের পদ্ধতিগত জটিলতা ও খরচ কমাতে হবে।
১১.সিএনজি ও অটোরিক্সা থেকে দৈনিক বা মাসিক ভিত্তিক চাঁদা আদায় বন্ধ করতে হবে। অকারনে ট্রাফিক মামলা ও হয়রানি বন্ধ করতে হবে এবং যাত্রী ওঠানামা ও অপেক্ষার জন্য নির্ধারিত সিএনজি ও অটোরিক্সা স্ট্যান্ড তৈরী করতে হবে।
১২. নির্মানখাতে অনুমোদনের জটিলতা ও ভোগান্তির কারনে নির্মানখাতে অচলাবস্থা বিরাজ করছে ফলে বহু নির্মাণ শ্রমিক বেকারত্ব বরণ করছে। তাই দ্রুত ও সহজে প্লান অনুমোদনের ব্যবস্থা করতে হবে।
১৩.হকার ও ভ্রাম্যমান হকারদের পুর্নবাসন নিশ্চিত না করে উচ্ছেদ করা যাবেনা। পজিশন ভাড়ার নামে অবৈধ চাঁদাবাজি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
১৪.দোকান কর্মচারী ও হোটেল-রেস্তরা কর্মচারীদের কর্মসময় ৮ ঘন্টা ও অতিরিক্ত কর্মঘণ্টার জন্য ওভারটাইম চালু করতে হরে।
১৫.সকল শিল্প কারখানায় নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থা করতে হবে।
আয়োজিত সমাবেশে ইসলামী সমাবেশে ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি আলহাজ্ব আমিনুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারী জেনারেল আলহাজ্ব মাওলানা খলিলুর রহমান, জয়েন্ট সেক্রেটারী মোস্তফা কামাল ও ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ওমর ফারুক সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমাদ, যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান, কেন্দ্রীয় কৃষি ও শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ও ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ্ব আবদুর রহমান, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি নুরুল বশার আজিজী প্রমুখ।