বাঘা প্রতিনিধি : রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাউসা মহাবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে গোপনে ও অর্থের বিনিময়ে পছন্দের প্রার্থীদের অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর বাউসা ইউনিয়নের মহাবিদ্যালয়টির সার্বিক উন্নতি এবং এলাকার শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া সুষ্ঠ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য লিখিত একটি অভিযোগ করেছেন ফাহিম মুন্তাসির (প্রান্ত) নামের এক ছাত্র।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের পরিষদের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বাউসা মহাবিদ্যালয়টি। গত ১৬ সেপ্টেম্বর অত্যন্ত গোপনে বাউসা মহাবিদ্যালয়টিতে ৫ টি পদে (অধ্যক্ষ, ল্যাব সহকারী ২টি পদে ও অফিস সহায়ক ও নিরাপত্তাকর্মী) নিয়োগ প্রক্রিয়া অর্থের বিনিময়ে সম্পন্ন করা হয়। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে কলেজটির অধ্যক্ষ ও সভাপতির বিরুদ্ধে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগপত্রে তিনি বলেন, ‘বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের সময়ে বাউসা মহাবিদ্যালয়ে ৫ টি পদে নিয়োগ দেয়া হবে এটি বাউসার জনগণ জানতে পারল না। বুঝতে পারলো না বিষটি শুধু অর্থের বিনিময়ে হয়েছে। কলেজের সার্বিক উন্নতি এলাকার শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষে গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া সুষ্ঠ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বিনীত ভাবে অনুরোধ করছি।’
সম্প্রতি বাউসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত জনতার সামনে এই নিয়োগের বিষয়ে কঠোর সমালোচনা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য দেন। এ থেকেই এলাকাবাসীসহ মহাবিদ্যালয়টির অভিভাবক সদস্যরা অত্যন্ত গোপনে ও অর্থের বিনিময়ে পছন্দের প্রার্থীদের অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়ার বিষয় জানতে পারে। এ ঘটনার পর থেকেঅ এলাকায় ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয় এবং ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেন স্থানীয়রা।
ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য মো: মুন্টু আলী বলেন, ‘নিয়োগের বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। নিয়োগের কয়েকদিন পর লোক মুখে শুনে অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম নান্টু কে ফোন দিয়ে বিষয়টি জিজ্ঞাসা করলে, সে আমাকে বলে– ‘নিয়োগ হয়েছে।’ আমি তখন তাকে প্রশ্ন করলাম নিয়োগ হলো কিন্তু আমাদের জানালেন না, সে বলে– ‘পরে জানতে পারবেন’।
প্রতিষ্ঠানের সম্মান ক্ষুন্ন করে দুর্নীতি-অনিয়মের মাধ্যমে কৌশলে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
অভিযোগকারী (ছাত্র) ফাহিম মুন্তাসির প্রান্ত বলেন, ‘আমাদের কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিজেই নিজেকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দিলেন। ৫০ লক্ষ্য টাকার বিনিময়ে অধ্যক্ষ ও সভাপতি এই নিয়োগ বাণিজ্যের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করেছেন। আমার জানা মতে আমাদের কলেজটিতে কোন ল্যাব নেই তারপরও ল্যাব সহকারী দুটি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক নিয়োগ বঞ্চিত একাধিক প্রার্থী বলেন, অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম নান্টু ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শহিদুল আলম বাবু মিলে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়ে পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিয়েছেন। এই নিয়োগে অধ্যক্ষ ও সভাপতি প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ টাকা বাণিজ্য করেছেন বলে দাবি তাদের৷
বাউসা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, চলতি বছরেই জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। নির্বাচন কে সামনে রেখে অধ্যক্ষ ও সভাপতির এ নিয়োগ বানিজ্যের বিষয়টি নিয়ে জনগণের মনে ব্যপক ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে, এতে করে জাতীয় নির্বাচনে এর বিরুপ প্রতিক্রিয়া পরবে বলে ধারণা করছেন।
এ বিষয়ে বাউসা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম নান্টু বলেন, ‘সরকারি বিধি মোতাবেক নিয়োগ হয়েছে। ৫ টি পদে ১৫ জন রাজশাহী সিটি কলেজে পরীক্ষাতে অংশগ্রহণ করেছে। এখানে টাকা লেনদেন্র ঘটনা নেই।’
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শহিদুল আলম বাবু বলেন, ‘সব কিছু বিধি মোতাবেক হয়েছে। স্বচ্ছভাবে প্রার্থীদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে।’
বাউসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ তুফান ওই বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘একজন প্রিন্সিপাল রাতের অন্ধকারে এলাকার লোকজনের সাথে প্রতারণা করে পরিচালনা কমিটির সকল সদস্যদের না জানিয়ে ৫০ লক্ষ্য টাকার বিনিময়ে ৫ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন। তাহলে এলাকাবাসী প্রতিষ্ঠানটিকে কি সহযোগিতা করবে?’
বাঘা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আ ফ ম হাসান বলেন, ‘বাউসা মহাবিদ্যালয় নিয়োগ বিষয়ে একটি অভিযোগ গতকাল পেয়েছি। আমি তদন্তে যাব,আর আমি নিয়োগ বিষয়ে কোন কিছু জানি না।’
এ বিষয়ে বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আখতার বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার সঠিক জানা নেই, সময় পেলে জেনে জানাতে পারব।’