শুক্রবার, জানুয়ারি ১৭, ২০২৫
Homeসারাদেশবাছুর দিবে বলে ফটোসেশন শেষে হাতে খিচুড়ি ধরিয়ে দিলো এনজিও

বাছুর দিবে বলে ফটোসেশন শেষে হাতে খিচুড়ি ধরিয়ে দিলো এনজিও

পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের রেলবাজার এলাকার মানবসেবা উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি এনজিওর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পের নামে হতদরিদ্র নারীদের মাঝে গাভীর বাছুর বিতরণ করার কথা বলে তাদের ডেকে এনে শুধু ফটোসেশন করা হয়েছে এবং খিচুড়ি খাইয়ে বিদায় করা হয়েছে, অথচ কোনো বাছুর তাদের দেওয়া হয়নি।

এনজিওটির আওতায় চলমান প্রকল্পের নাম “হতদরিদ্রদের মাঝে উন্নতজাতের গাভীর বাছুর বিতরণ”। এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৫ লাখ টাকা এবং সুফলভোগী হিসেবে ১০ জন দুস্থ নারীকে নির্বাচন করা হয়েছে। প্রকল্পের অধীনে, তাদের গাভীর বাছুর দেওয়া হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু বাস্তবে তাদের হাতে শুধু বাছুর ধরিয়ে ছবি তোলা হয়েছে। এরপর গরুগুলো আবার খামারে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

ভুক্তভোগী নারীরা অভিযোগ করছেন, প্রকল্পের আওতায় তাদের কোনো গাভীর বাছুর দেওয়া হয়নি। ৩০ ডিসেম্বর সকালে বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনের (বিএনএফ) আর্থিক সহায়তায় মানবসেবা উন্নয়ন সংস্থা এই ১০ জন নারীকে রেলবাজারে নিয়ে আসে। এখানে তাদের একটি খামার থেকে ১০টি গাভীর বাছুর নিয়ে আসেন এনজিওর নির্বাহী পরিচালক এম এস আলম বাবলু। এরপর নারীদের দাঁড় করিয়ে ফটোসেশন করা হয় এবং খিচুড়ি ও ডিম খাইয়ে বিদায় করা হয়। পরবর্তীতে, বাছুরগুলো একই গাড়িতে করে খামারে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

ভুক্তভোগী নারীদের মধ্যে খুশি খাতুন, যিনি অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান, বলেন, “আমাদের গাভী দেওয়ার কথা বলে ট্রেনিং এ ডেকে নিয়ে আসছে। গাভীর বাছুর হাতে ধরিয়ে ছবি তোলে, কিন্তু গাভী দেয়নি। বলছে, পরেরবার দেব।” এর আগে, তাকে একটি ছাগল দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তার জন্য ১৩০০ টাকা নেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন তিনি।

অন্য এক গৃহবধূ বলেন, “বাছুর হাতে ধরিয়ে ছবি তোলার পর আমাদের শুধু খিচুড়ি ও ডিম খাওয়ানো হয়েছে। কিন্তু গাভী দেয়নি। আমাদের বলা হয়েছিল, পরে দেওয়া হবে। এখনো পাইনি।”

গরুর বাছুর নিয়ে ঘটিত এই ঘটনা সম্পর্কে গাড়িচালক শুভ দাস বলেন, “আমার গাড়িতে ১০টি বাছুর নিয়ে রেলবাজারে গিয়েছিলাম, কিন্তু পরে সব বাছুর আবার একই খামারে ফেরত নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর বেশি কিছু জানি না।”

এনজিওটির নির্বাহী পরিচালক এম এস আলম বাবলু অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, “১০ জন নারীকে গাভীর বাছুর দেওয়া হয়েছে এবং বাকিদের পরের প্রকল্পে দেওয়া হবে।” তিনি আরও বলেন, “এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি।”

চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুসা নাসের চৌধুরী জানান, তিনি ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না, তবে প্রকল্পের ব্যাপারে বিস্তারিত জানেন না। তিনি বলেন, “আমি এখনও প্রকল্পের রিপোর্ট হাতে পাইনি। যদি কোনো অনিয়ম হয়, তবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনের (বিএনএফ) উপ-মহাব্যবস্থাপক (কর্মসূচি) মোস্তফা কামাল ভূঞা বলেন, “এই প্রকল্পের জন্য ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের কার্যক্রম সন্তোষজনক হলে বাকি ২ লাখ টাকা দেওয়া হবে।” তিনি আরও বলেন, “প্রকল্পের রিপোর্ট ইউএনও থেকে প্রত্যয়ন নিয়ে জমা দেওয়া হবে এবং সেই অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

এদিকে, সচেতন মহলের অভিযোগ, প্রকল্পের নামে এনজিওগুলো ফটোসেশন করে টাকা আত্মসাৎ করার ঘটনা নতুন নয়। এখানেও একই ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। স্থানীয়রা ধারণা করছেন, গণমাধ্যমে বিষয়টি সামনে আসার পর নির্বাহী পরিচালক এম এস আলম বাবলু দুস্থ নারীদের গাভীর বাছুর দেওয়ার চেষ্টা করবেন, তবে প্রকল্পের পুরো টাকা আত্মসাতের অপচেষ্টা যে হয়েছে, তা স্পষ্ট।

spot_img

সর্বশেষ

আরও সংবাদ