আন্তর্জাতিক হিফজ কুরআন প্রতিযোগিতায় সারা পৃথিবীতে তৃতীয় স্থান অধিকার করে রীতিমতো আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে বাংলাদেশের সালেহ আহমেদ তাকরিম। বিমানবন্দরে পেয়েছে অজস্র মানুষের ভালোবাসা। তবে সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে তাকরিম কিংবা তিনজনই সেরা হয়নি। মোট ৫ ক্যাটাগরিতে বেছে নেয়া হয়েছে ১৫ জন বিজয়ী। এসবের মাঝে কিছু ক্যাটাগরিতে কঠিন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলো প্রতিযোগীরা।
সৌদি আরবে বাদশাহ আব্দুল আজিজ কোরআন প্রতিযোগিতার ৪২ তম আসরে বাংলাদেশি হাফেজ সালেহ আহমেদ তাকরিম নিজের অংশ নেয়া ক্যাটাগরিতে ৩য় স্থান অধিকার করে। তাকরিমকে এই পুরস্কারের জন্য পরীক্ষা দিতে হয়েছে ১৫তম পারা পর্যন্ত।
সৌদি আরবের পত্রিকা ও মন্ত্রণালয়ের টুইট থেকে জানা যায়, হিজরি ১৪৪৪ সালের সফর মাসের ১৪ থেকে ১৬ তারিখের মধ্যে (১০ থেকে ১২ সেপ্টেম্বর) কোরআন প্রতিযোগিতাটির প্রাথমিক বাছাইপর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১১১ টি দেশের ১৫৩ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন। তার মধ্যে ৯৬ জন চূড়ান্ত পর্বের জন্য মনোনীত হন৷ পুরো প্রতিযোগিতার প্রাইজমানি ২৭ লাখ সৌদি রিয়েল।
পুরো প্রতিযোগিতায় পাচঁটি ক্যাটাগরি ছিলো। এ ক্যাটাগরিগুলো মূলত গুরুত্ব ও মর্যাদার ভিত্তিতে করা। ক্যাটাগরিগুলোর মাঝে ছিলো:
প্রথম ক্যাটাগরি: এ ক্যাটাগরিটি সবচেয়ে সম্মানজনক ও গুরুত্বপূর্ণ। এ শাখায় সাতটি ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ ৩০ পারা কুরআনের মুখস্ত তেলাওয়াত, ও বোধসম্পন্ন ব্যাখ্যার পরীক্ষা নেওয়া হয়। উল্লেখ্য, কুরআন তেলাওয়াত করার অনেকগুলো স্বীকৃত পদ্ধতি আছে। এর মধ্যে সাতটি পদ্ধতিকে খুব প্রসিদ্ধ ধরা হয়। কুরআন পাঠের এই সাতটি পদ্ধতিকে আল শাতিবি তাঁর ‘আশ-শাতিবিয়াহ’ কবিতায় লিপিবদ্ধ করে গেছেন। সুতরাং এ ক্যাটাগরিকে আশ-শাতিবিয়াহ ক্যাটাগরি বলা যেতে পারে। এ শাখায় ভালো করতে হলে আরবি ভাষা সম্পর্কে গভীর জ্ঞান থাকতে হয়। এটি শুধু কুরআন হিফযের প্রতিযোগিতা নয়। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীরা সঠিক বা গ্রহণযোগ্য অর্থে কুরআন বুঝেছেন কি না, আয়াত ও শব্দের ব্যাখ্যা এবং তাৎপর্য অনুধাবন করেছেন কি না, তা এ শাখায় যাচাই করা হয়।
এই অত্যন্ত কঠিন ও শ্রমসাধ্য আশ-শাতিবিয়াহ ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন মিশরের বিলাল আল-সাইদ (পুরস্কারের অর্থমূল্য ৩ লাখ ৫০ হাজার সৌদি রিয়াল), দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন সুদানের আব্দুল লতিফ ওসমান (পুরস্কারের অর্থমূল্য ৩ লাখ ২৫ হাজার সৌদি রিয়াল), এবং তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন সৌদি আরবের মোহাম্মদ ইব্রাহিম আব্দুল সালাম (পুরস্কারের অর্থমূল্য ৩ লাখ সৌদি রিয়াল)।
দ্বিতীয় ক্যাটাগরি: এটিও গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাবান ক্যাটাগরি। কারণ এ ক্যাটাগরিতে সম্পূর্ণ ৩০ পারা কুরআনের তেলাওয়াতের পাশাপাশি সমগ্র কুরআনের বিভিন্ন শব্দের বা ভোকাবুলারির অর্থ ও ব্যাখ্যার পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিযোগী হাফেজটি সম্পূর্ণ কুরআনের অর্থ বুঝতে সক্ষম হয়েছে কি না, এটি এখানে যাচাই করা হয়েছে। ভোকাবুলারি ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন কিরগিজিস্তানের আলি উমারিব (পুরস্কারের অর্থমূল্য ২ লাখ ৫০ হাজার সৌদি রিয়াল), দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন সৌদি আরবের খালিদ সুলাইমান (পুরস্কারের অর্থমূল্য ২ লাখ ৩০ হাজার সৌদি রিয়াল), এবং তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন বাহরাইনের মোতাহের কোলিয়াব (পুরস্কারের অর্থমূল্য ২ লাখ ১০ হাজার সৌদি রিয়াল)।
তৃতীয় ক্যাটাগরি: এটি মূলত কুরআনের হিফজের পরীক্ষা। এক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী কুরআন বুঝেছেন কি না কিংবা কোনো আয়াত ও শব্দের অর্থ বা ব্যাখ্যা জানেন কি না, তা এখানে গুরুত্ব পায়নি। এ শাখায় ৩০ পারা সম্পূর্ণ কুরআনের উপরেই পরীক্ষা করা হয়েছে। এই ক্যাটাগোরিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন মরক্কোর আহমাদ আসিরি (পুরস্কারের অর্থমূল্য ২ লাখ সৌদি রিয়াল), দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন ইন্দোনেশিয়ার জাহরান আওজান (পুরস্কারের অর্থমূল্য ১ লাখ ৮৫ হাজার সৌদি রিয়াল), এবং তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন গাম্বিয়ার আব্দুল্লাহ ইনজায়ি (পুরস্কারের অর্থমূল্য ১ লাখ ৭০ হাজার সৌদি রিয়াল)।
চতুর্থ ক্যাটাগরি: এটিও কুরআন হিফয ক্যাটাগরি বলা যেতে পারে। এ শাখায় ১৫ পারা কোরানের পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। এই ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন লিবিয়ার খলিল হাবিশ (পুরস্কারের অর্থমূল্য ১ লাখ ২০ হাজার সৌদি রিয়াল), দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন কেনিয়ার মুসা আব্দুল্লাহ (পুরস্কারের অর্থমূল্য ১ লাখ ১০ হাজার সৌদি রিয়াল), এবং তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন বাংলাদেশের সালেহ আহমদ তাকরিম (পুরস্কারের অর্থমূল্য ১ লাখ সৌদি রিয়াল)।
পঞ্চম ক্যাটাগরি: এ শাখায় ৫ পারা কোরানের হিফয পরীক্ষা করা হয়েছে। এই ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন থাইল্যান্ডের আহমদ সামু (পুরস্কারের অর্থমূল্য ৫৫ হাজার সৌদি রিয়াল), দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন সেন্ট্রাল আফ্রিকার ইদ্রিস মোহাম্মদ (পুরস্কারের অর্থমূল্য ৫০ হাজার সৌদি রিয়াল), এবং তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন জার্মানির আমিন কানান (পুরস্কারের অর্থমূল্য ৪৫ হাজার সৌদি রিয়াল)।