বান্ধবীর গায়ে কাদা লাগার জের ধরে কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্রলীগ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গিয়েছে। ফুটবল খেলার সময় বলের আঘাতে ছিটকে প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীর গায়ে কাদা লাগে বলে জানা যায়। পরে ছাত্রীর বন্ধুর সহপাঠী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হামলায় লালন শাহ হোস্টেলে ব্যাপক ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার জেরে কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক একাডেমিক কাউন্সিলের এক মিটিং থেকে তিনটি হল বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সব ছাত্রছাত্রীকে হোস্টেল ত্যাগের নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। বলা হয়, ‘পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত মীর মশাররফ হোসেন ও লালন শাহ ছাত্র হোস্টেল এবং তাপসী রাবেয়া ছাত্রী হোস্টেল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’
আজ মঙ্গলবার দুপুর ১টার সময় কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে এই হামলায় আহতদের মধ্যে আসিফ (২০), মাহি (১৮), অন্তর (২২), সেতুসহ (২২) আরো অনেকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুরে বৃষ্টির মধ্যে কুষ্টিয়া পলিটেকনিকের লালন শাহ হোস্টেলের শিক্ষার্থীরা মাঠে ফুটবল খেলছিলেন। পাশ দিয়ে ৫ম পর্বে পড়ুয়া মীর মোশাররফ হোস্টেলের আবাসিক শিক্ষার্থী তার ১ম পর্বে পড়ুয়া ছাত্রী বন্ধুসহ যাচ্ছিলেন।
তখন ওই ছাত্রীর গায়ে কাদা ছিটকে পড়লে লালন শাহ হোস্টেলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন তারা। একপর্যায়ে ওই ছাত্র তার নিজ হোস্টেল মোশাররফ হোসেন ছাত্রাবাসের নেতা ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আনাস পারভেজের কাছে নালিশ করেন। ওই ছাত্রলীগ নেতা তার কর্মী বাহিনীসহ লালন শাহ হোস্টেলের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় আক্রান্ত কক্ষগুলোর জানালা-দরজা-আসবাবপত্রসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ভাঙচুর করা হয়। এ সময় কক্ষে যাদের পাওয়া গেছে তাদের ওপরও হামলা চালানো হয়।
লালন শাহ হোস্টেলের এক শিক্ষার্থী জানান, মাঠে ফুটবল খেলার সময় এক মেয়ে শিক্ষার্থীর গায়ে কাদা লাগায় আমাদের সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর বন্ধুর তর্কাতর্কি হয়। ওই ছেলে বিষয়টি ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আনাসের কাছে নালিশ দেওয়ায় তারা আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে মারধর করে।
অন্যদিকে ৫ম পর্ব কম্পিউটারের শফিকুল বলেন, আজ ক্যাম্পাসে আনাস না থাকলে এমন ঘটনা ঘটতো না। অনেক দিন ধরেই এ রকম একাধিক সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সে। এতে কলেজের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। ওর জন্যই আজ সব শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস ত্যাগ করার মতো ভোগান্তিতে পড়তে হলো।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রলীগ নেতা আনাস পারভেজ বলেন, ‘ঘটনা শোনার পর আমি আমাদের সিকিউরিটি ইনচার্জ রফি উদ্দিন বাবলুকে মোবাইলে কল করে জানাই। তিনি আমাকে ওখানে যেতে বলেন, আমি সেখানে গেলে ওরাই আমার ওপর হামলা চালায়। ’
অভিযোগ রয়েছে, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আনাস পারভেজ এক বছর আগেই তার কোর্স সম্পন্ন করলেও অবৈধভাবে প্রভাব খাটিয়ে হোস্টেলে অবস্থান করছেন। এখানে থেকেই সে নানা অপরাধসহ ইতিপূর্বে অসংখ্যবার শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটিয়েছে।
তবে এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার চূড়ান্ত পরীক্ষা হয়ে গেছে ঠিকই; আমার রেজাল্ট না হওয়া পর্যন্ত হোস্টেলে আমার সিট বৈধভাবেই বরাদ্দ আছে।