শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বিইউবিটিতে আ.লীগের তিন দোসরের আধিপত্য, দুর্নীতির তদন্ত দাবি

বিশেষ প্রতিবেদক
-বিজ্ঞাপণ-spot_img

জুলাই বিপ্লবে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন ঘটলেও আওয়ামী দোষরদের হাতে জিম্মি এখনও দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানে। আওয়ামী লীগের দোসররা এসব প্রতিষ্ঠান দখলে নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির করে হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থ। এমন একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি)।

পতিত আওয়ামী লীগের তিনজন দোসরের বিরুদ্ধে এই বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কিছু অনিয়ম দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। তারা হলেন শেখ রেহানার স্বামী শফিক আহমেদ সিদ্দিক এবং তার দুই সহযোগী এ এফ এম সরওয়ার কামাল ও মো. আবু সালেহ।

এই তিনজনের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক এবং ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা জানান, দীর্ঘ দিন আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্য বিস্তার করেন এবং কোনো নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে আর্থিক লুটপাট করে যাচ্ছেন।

জুলাই বিপ্লবে আওয়ামী লীগের পতন হলেও এখনও বিইউবিটিতে আধিপত্য বজায় রেখেছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া দলটির এই দোসররা। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিইউবিটির ষষ্ঠ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার শের-ই-বাংলা নগরের বিসিএফসিসিতে। এতে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এমেরিটাস অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।

অভিযোগ রয়েছে, মনজুরুল ইসলাম ছিলেন আওয়ামী লীগের বিশেষ সুবিধাভোগীদের অন্যতম ব্যক্তি। তিনি আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সুপরিচিত থিংক ট্যাংক। যথাযথ যোগ্যতা না থাকলেও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সর্বোচ্চ পদ এমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পান জুলাই বিপ্লবের কিছু দিন আগে।
বিইউবিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য শেখ রেহানার স্বামী শফিক আহমেদ সিদ্দিকী। তার সহযোগী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী সমর্থিত নীল দলের নেতা মো. আবু সালেহ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার জন্যে প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও আবু সালেহ দুইবার উপাচার্য পদে নিয়োগ পান। তিনি আওয়ামী আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় শফিক আহমেদ সিদ্দিকের ‘অসীম ক্ষমতা বলে’ আইন ভেঙে এই নিয়োগ পেয়েছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। অথচ একই কারণে অর্থাৎ প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকার ফলে আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে মইনুদ্দিন খানের নিয়োগ বাতিল হয়ে গেছে।

আবু সালেহ এখন বিইউবিটির উপদেষ্টা পদে থেকে একক অধিপতির ভূমিকা রাখছেন। তিনি অবৈধভাবে মাসে প্রায় ১০ লাখ টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জায়গা কেনা এবং ভবন নির্মাণে ব্যাপক দুর্নীতি ও তাহবিল তছরুফ করার অভিযোগও রয়েছে এই উপদেষ্টার বিরুদ্ধে। নির্মাণ কাজে ঠিকাদার থেকে অবৈধভাবে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে সেসব অর্থ ট্রাস্টিদের মধ্যে বণ্টনের ভাগ বাটোয়ারা, শিক্ষার্থীদের ফলাফল ও ভর্তি কেন্দ্রিক নানা কায়দায় অর্থ হাতানোর অভিযোগও রয়েছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তার নেতৃত্বে বিইউবিটি লুটপাটের সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অভিযোগকারীরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট একজন জানান, ‘বিইউবিটির ট্রাস্টি বোর্ডের প্রত্যেক সদস্য মাসে এক লাখ টাকা করে ভাতা নিয়ে থাকেন। এছাড়া উৎসব ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও নিয়ে থাকেন। দুয়েকজন ট্রাস্টির সঙ্গে লুটপাটের বড় অংশ ভাগাভাগি করা হয়। আর এসব অনিয়মের মূলে আছেন আবু সালেহ। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন তদন্ত করলে এসব অনিয়মের বিস্তারিত বেরিয়ে আসবে।’

শফিক আহমেদ এবং আবু সালেহের আরেক সহযোগী বর্তমানে পলাতক মোস্তফা কামালের বাল্যবন্ধু এ এফ এম সরওয়ার কামাল। ভবন নির্মাণের জন্য গঠিত কমিটির প্রভাবশালী সদস্য সরওয়ার। তিনি কমিটিতে থেকে অনেক অর্থের মালিক হয়েছে এবং সেই অর্থের অংশ বন্ধু মোস্তফা কামালকেও দিয়েছেন। মোস্তফা কামালের ক্যাশিয়ার হিসেবেও অনেকের কাছে পরিচিত সরওয়ার।

সরওয়ার কামাল ছাত্রজীবন থেকেই আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। সেখানে দাঙ্গা হাঙ্গামা করে ভিপি হন। পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে প্রথম শ্রেণির চাকরি না পেলেও আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তিনি সচিব হিসেবে অবসর নিয়েছেন। এই ব্যক্তি নিজেকে বিএনপি ঘরানার হিসেবেও দাবি করেন বলে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে আলোচনা রয়েছে।

শফিক আহমেদ সিদ্দিক, এ এফ এম সরওয়ার কামাল ও মো. আবু সালেহ- এই তিনজন আওয়ামী লীগ দোসরের সঙ্গে রয়েছে শামসুল হুদা মিয়া, লুৎফুর রহমান, এনায়েতসহ আরও কয়েকজন। বিইউবিটির ট্রাস্টি বোর্ডে কয়েকজন পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি থাকলেও গত ১৬ বছরের আওয়ামী লীগের প্রভাবশারীদের ভয়ে এদের মুখ বন্ধ করে রাখতে হয়েছে। সুষ্ঠু তদন্ত করে দুর্নীতিতে জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত এবং বিশ্ববিদ্যালয়টিকে দুর্নীতিমুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

শেয়ার করুন

সর্বশেষ নিউজ

নতুন বাংলাদেশকে ছাত্রদল পৈতৃক সম্পত্তি মনে করেছে: ইবি শিবির সেক্রেটারি

এস.এম. শাহরীয়ার স্বাধীন, ইবি প্রতিনিধিবাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখার সেক্রেটারি ইউসুব আলী বলেছেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী নতুন বাংলাদেশেকে ছাত্রদল তাদের পৈতৃক সম্পত্তি...

ভারতের স্বার্থে শেখ হাসিনা দেশের সবকিছু উজাড় করে দিয়েছিল: রিজভী

এস এম কিবরিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধিবিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ভারতের স্বার্থে শেখ হাসিনা দেশের সবকিছু উজাড় করে দিয়েছিল। দেশের খাল-বিল, নদী-নালা,...

রাবির হল প্রাধ্যক্ষরা ইসলামী ছাত্রী সংস্থা করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে: আমানউল্লাহ আমান

রাবি প্রতিনিধিজাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান বলেছেন, 'রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি ক্যাম্পাস যার রাজনৈতিক সংস্কৃতি অন্যান্য সকল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এখানে...

কুষ্টিয়ায় ভিডব্লিউবি তালিকায় স্বজনপ্রীতির অভিযোগ,চেয়ারম্যান ও সদস্যের স্ত্রীদের নাম

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভিডব্লিউবি (ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট) কর্মসূচির উপকারভোগীর তালিকা নিয়ে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের দাবি, তালিকায় ইউপি চেয়ারম্যান...

সম্পর্কিত নিউজ

নতুন বাংলাদেশকে ছাত্রদল পৈতৃক সম্পত্তি মনে করেছে: ইবি শিবির সেক্রেটারি

এস.এম. শাহরীয়ার স্বাধীন, ইবি প্রতিনিধিবাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখার সেক্রেটারি ইউসুব আলী...

ভারতের স্বার্থে শেখ হাসিনা দেশের সবকিছু উজাড় করে দিয়েছিল: রিজভী

এস এম কিবরিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধিবিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ভারতের স্বার্থে...

রাবির হল প্রাধ্যক্ষরা ইসলামী ছাত্রী সংস্থা করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে: আমানউল্লাহ আমান

রাবি প্রতিনিধিজাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান বলেছেন, 'রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি ক্যাম্পাস...