বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আগামী ২৮শে অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনেই বিএনপির মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। শনিবার ঢাকায় নয়াপল্টস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানের সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। এটাই উপযুক্ত জায়গা।
তিনি বলেন, এখানে আমরা একাধিকবার শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করেছি। এই মহাসমাবেশ হবে নজিরবিহীন, ঐতিহাসিক। সারাদেশের গণতন্ত্রহারা বঞ্চিত মানুষ ঢাকার দিকে ছুটে আসার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়েছে। যদিও সরকারি জুলুম-নির্যাতন, দমন-পীড়ণের কোনো কমতি নেই। অব্যাহত গণগ্রেপ্তারের মধ্যেও দীপ্ত অঙ্গীকারে তারা ঢাকার দিকে ছুটে আসছে।
বুধবার (২৫ অক্টোবর) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূইয়া, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, নির্বাহী কমিটির সদস্য ফজলুর রহমান খোকন প্রমুখ।
এ সময় মহাসমাবেশ নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে রিজভী বলেন, মহানগর পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন- ‘যেখানেই অনুমতি দেয়া হবে সেখানেই বিএনপিকে সমাবেশ করতে হবে’। পুলিশ কর্মকর্তাদের এ রকমের বক্তব্যে এটাই প্রমাণিত হয় যে, বাংলাদেশের জনগণ এখন পরাধীন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড, মতপ্রকাশ ইত্যাদি সবকিছুই এখন পুলিশের ছাড়পত্রের ওপর নির্ভর করবে।
তিনি বলেন, বিএনপিসহ বিরোধী দলের প্রতি অবৈধ প্রধানমন্ত্রী ও পুলিশের ক্রোধ একই রকমভাবে প্রকাশ পাচ্ছে। তারা মনে করে আওয়ামী লীগ ছাড়া আর সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আক্ষরিক অর্থেই শেখ হাসিনার লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে কাজ করছে। অবৈধ সরকারের মন্ত্রীদের সুরে সুর মিলিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের হুমকির মাত্রা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, আওয়ামী মন্ত্রী ও নেতাদের কর্তৃক হত্যার হুমকি, নির্মূলের হুমকি, হেফাজতকে দমনের মতো করে বিএনপি’র সমাবেশ নিয়ে হুমকি এক উপসংহারহীন পরিণতির সৃষ্টিরই ইঙ্গিত করা হচ্ছে। বিষয়টি এমন দাঁড়াচ্ছে যে, আইন আদালতের ভবন আছে, কিন্তু বাস্তবে বাস্তবায়িত হচ্ছে ‘শেখ হাসিনাই হলো আইন’।
বিএনপির এই মুখপাত্র আরও বলেন, পুলিশ কর্মকর্তারা তো প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, তারা তো মালিক নন। তারা কিভাবে নির্ধারণ করে দেয় রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ কোথায় হবে? বিএনপি একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল, যাদের কয়েকবার দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এই দলটি কি জানে না যে, সমাবেশ কোথায় করতে হয়? পুলিশ কর্মকর্তাদের এহেন বক্তব্য রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশে বাধা দান ও সরাসরি হস্তক্ষেপ।
সরকারের মন্ত্রী ও পুলিশ কর্মকর্তারা ২৮শে অক্টোবরের মহাসমাবেশকে নিয়ে ঢাকা মহানগরকে ভয়ঙ্কর আতঙ্কের জায়গা বানাতে চাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে র্যাবের চৌকি বসিয়ে তল্লাশির নামে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। নেতাকর্মীদের বাড়িসহ আত্মীয়স্বজনদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ ও সাদা পোশাকধারী পুলিশ তল্লাশির নামে গ্রেপ্তার ও নানা কায়দায় হয়রানিসহ পরিবারের সদস্যদেরও বিভিন্নভাবে নাজেহাল করছে।
নির্বাচনের আগে সরকার গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তিকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করার জন্যই নানা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে অভিযোগ তুলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আরও বলেন, এর মধ্যে নেতাকর্মীদের তুলে নিয়ে যেয়ে অস্বীকার করা, গণগ্রেফতার, গায়েবি মামলার হিড়িক আর হামলা ও রক্ত ঝরানোর কাজের পাশাপাশি রুটিন মাফিক মিথ্যাচার অব্যাহত রয়েছে। তবে বলপ্রয়োগ ও ভয় উৎপাদন করে মানুষের জনস্রোতকে আটকিয়ে রাখা যাবে না। দিগন্তরেখায় গণতন্ত্রের মুক্তি-সূর্য উঠতে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, গ্রাম-গঞ্জ-শহর-বাজার-বন্দর সবখানেই এখন সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় বইছে। জনগণ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে। চলমান গণতান্ত্রিক সংগ্রামে জনগণের বিজয় হবেই। মানুষ তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করবেই। তিনি আরও বলেন, ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে ঘোষিত পরবর্তী কর্মসূচি সমূহ সফল করার জন্য দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ২৮শে অক্টোবরের পরে নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করবেন। ঢাকার মহাসমাবেশে দেশব্যাপী সর্বস্তরের মানুষসহ দলের নেতাকর্মী, শুভানুধ্যায়ীদের যোগদান করে ১ দফা দাবি আদায়ে দলের পক্ষ থেকে সোচ্চার আওয়াজ তোলার জন্য উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি। এসময় তিনি সারাদেশে দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা মামলার বিবরণ তুলে ধরেন।