আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, ৭১ এর গণহত্যা এবং ২০০১-০৬ পর্যন্ত ২৬ হাজার নেতাকর্মী হত্যাকাণ্ড দুটো একই সূত্রে গাঁথা। বিএনপি আমলে আওয়ামী লীগের ২৬ হাজার নেতাকর্মী হত্যার শিকার হয়েছিল। ৭১ এর ঘটনায় জড়িতদের রাজনীতি নিষিদ্ধ হলে, বিএনপিরও রাজনীতি নিষিদ্ধ করা উচিত।
বুধবার (২৪ আগস্ট) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে আইভি রহমানের ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
২১ আগস্টের ঘটনা সুপরিকল্পিত জানিয়ে হানিফ বলেন, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর, মুফতি হান্নানসহ অন্যান্য জঙ্গিদের নিয়ে হাওয়া ভবনে মিটিং করেন তারেক জিয়া। মুফতি হান্নানের ভাই মাওলানা তাইজুদ্দিন পাকিস্তান থেকে হামলার গ্রেনেড নিয়ে এসেছিলেন। সরকারের ইন্ধন ছাড়া একটি দেশে কীভাবে এই বোমা নিয়ে এসেছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা একটা নিকৃষ্ট, বর্বরোচিত ঘটনা। ৭৫ পরবর্তী সময়ে এটি সবচেয়ে কলঙ্কময় একটি দিন। মূলত এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল আওয়ামী লীগকে দমন করা। যাতে বিএনপির আমলের লুটপাটের কোনো জবাবদিহিতা না করতে হয়।
মির্জা ফখরুল নাকি শিক্ষক ছিলেন এমন প্রশ্ন তুলে হানিফ বলেন, উচ্চ শিক্ষিত লোক কীভাবে বিএনপির মত দলের রাজনীতি করে, আমার বুঝে আসে না। কয়েকদিন আগে ফেসবুকে দেখলাম লন্ডনে বসে তারেক জিয়া বলছেন, ২১ আগস্টের ঘটনা আওয়ামী লীগই ঘটিয়েছে। তিনি থিউরি দিলেন কী, সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল মুক্তাঙ্গনে। শুরু হওয়ার মাত্র দেড় ঘণ্টা পূর্বে সেটি ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কেন নেওয়া হলো।
তিনি বলেন, মুক্তাঙ্গনে নাকি ইঞ্চি-ইঞ্চি জায়গার নিরাপত্তা ছিল। কী রকম মশকরা, মিথ্যাচার। এই তারেক রহমান একজন মিথ্যাবাদী, কুলাঙ্গার ও নির্লজ্জ। ন্যূনতম রাজনৈতিক শিষ্টাচার থাকলে এ ধরনের মিথ্যাচার করা সম্ভব না। ২১ আগস্টের মতো এরকম ঘটনা পৃথিবীতে আর ঘটেছে বলে মনে হয় না।
তিনি বলেন, ওই দিন দেখলাম মির্জা ফখরুলসহ বিএনপির অনেক নেতা এই ঘটনার সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করলেন। অবাক হয়ে যেতে হয়। ২১ আগস্টের ঘটনায় রাজনীতি করার অধিকার তারা হারিয়ে ফেলেছেন। তাদের রাজনীতি করার নৈতিক অধিকার নেই।
এ সময় ২১ আগস্ট ইস্যুতে আইভি রহমানের স্মৃতিচারণ করে হানিফ বলেন, আইভি রহমানকে আমি হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম। সে এক বীভৎস, রোমহর্ষক দৃশ্য। এই হামলা করেছিল বিএনপি-জামায়াত। হামলার পরপরই আমাদের ওপর লাঠিচার্জ-আক্রমণ শুরু হয়। যাতে বোমা হামলাকারীরা নির্বিঘ্নে চলে যেতে পারেন। ঘটনাস্থলে দ্রুত সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি এনে পানি দিয়ে ধুয়ে আলামত নষ্ট করে ফেলে।
তিনি বলেন, সেদিন একটি গ্রেনেড ছিল অবিস্ফোরিত। আমাদের তৎকালীন নেতা আব্দুল জলিল গেলেন মামলা করতে। এই থানা ওই থানায় উনাকে ঘুরিয়ে মামলা নেয়নি। পুলিশ সেদিন বলেছিল ওপরের নির্দেশ নেই। পরে, একটি সাধারণ ডায়েরি নিয়েছিল। এমন বীভৎস হত্যাকাণ্ড নিয়ে সংসদে পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়া মশকরা করলেন। তিনি সংসদে দাঁড়িয়ে বললেন, শেখ হাসিনাকে কে মারতে যাবে! তিনি নিজেই ব্যাগে করে ঘটনাস্থলে বোমা নিয়ে গিয়েছিলেন।
মশকারি এখানেই শেষ নয় জানিয়ে তিনি বলেন, এ ঘটনায় প্রবল চাপে তখন বিএনপি-জামায়াত সরকার তদন্ত কমিটি গঠন করল। বিচারপতি জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো। তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েই বলে দিলেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্রই এ ঘটনায় জড়িত। কী তামাশাপূর্ণ দায় এড়ানো বক্তব্য। এরপর আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে বলে সাজানো হলো জজ মিয়া নাটক। এসবের একটাই কারণ, এই হত্যাকাণ্ডে বিএনপি জড়িত ও তারা সেই দায় এড়াতে চেয়েছে।
এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন, আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য লায়ন মশিউর আহমেদ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী। এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান, সংসদ সদস্য কানিজ ফাতিমা আহমেদ, আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান।