আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, অনেক ষড়যন্ত্র। অনেক চক্রান্ত। কিন্তু আমার ভরসা একমাত্র বাংলাদেশের মানুষ। বাংলাদেশের মানুষ পাশে থাকলে অসাধ্য সাধন করা যায়, সেটাই আমরা করেছি। আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। আজকে সেখানে রেল সেতু চালু করে দিলাম।
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের উদ্বোধন শেষে ভাঙ্গায় আওয়ামী লীগের জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত এলে দেশ ধ্বংস করে দেবে। এই ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য একমাত্র নৌকা মার্কাই আপনাদের সব রকম সহায়তা দেবে। আপনাদের কাছে আমার আহ্বান নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও সেবা করার সুযোগ করে দেবেন।
আমি এসেছি একটি উপহার নিয়ে। সেটি হচ্ছে রেল এমনটা জানিয়ে তিনি বলেন, আমি রেলে করে ভাঙ্গায় এসেছি। এটা কেউ কখনও চিন্তাও করতে পারিনি। আমি আপনাদের পদ্মা সেতুর সঙ্গে রেললাইনও উপহার দিয়ে গেলাম। ফরিদপুর পুরনো শহর, কিন্তু সবসময় অবহেলিত ছিল। আমরা সরকারে এসে উন্নয়ন করেছি। ফরিদপুরের মেডিকেল কলেজকে সম্প্রসারিত ও সেবার আধুনিকায়ন আমরাই করেছি। আমি জানি, ফরিদপুরে বিশ্ববিদ্যালয় নেই। ইনশাআল্লাহ, আবার আমরা সরকারে এলে সেটা করে দেব।
সরকারপ্রধান বলেন, বঙ্গবন্ধুর আকাঙ্ক্ষা ছিল- প্রতিটি গ্রাম সুন্দরভাবে সাজাবেন। প্রতিটি মানুষের ঘরে আলো জ্বালাবেন। শিক্ষার আলোয় আলোকিত করবেন। চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেবেন। যে কারণে তিনি দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন। তার সুফল বাংলাদেশের মানুষ পেতেও শুরু করেছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আমার মা-তিনভাইসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে হত্যা করা হয়। এরপর ৬ বছর রিফিউজি হিসেবে বিদেশে থাকতে হয়েছে।
স্বজন হারিয়ে এদেশে ফিরে এসেছিলাম ৬ বছর পর উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটা প্রতিজ্ঞা নিয়ে এসেছিলাম, এই দেশের মানুষের ভাতের কষ্ট থাকবে না, কেউ ভূমিহীন গৃহহীন থাকবে না, প্রত্যেকের দোরগোড়ায় চিকিৎসা পৌঁছাব, উন্নত জীবন দেব। এই লক্ষ্য নিয়ে আমার দেশে ফেরা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিন্তু এমন একটি দেশে ফিরলাম যেখানে আমার বিচার চাওয়ার অধিকার নেই। তবে আমি পিছিয়ে যাইনি। বোমা, হামলা, গ্রেনেড, গুলি অনেক কিছুর মুখোমুখি হয়েছি। কিন্তু দেশের মানুষের জন্য কাজ করব- এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে মাঠে নেমেছিলাম। আমার বাবা-মা ভাই কেউ নেই। আমার আছে বাংলাদেশের জনগণ। তারাই আমার পরিবার। তারাই আমার সব। তাদের জন্যই আমার কাজ।
জনগণের কোনো ভোটের অধিকার ছিল না এমনই প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, অকথ্য অত্যাচার নির্যাতন করেছিল। আমরা ভোট ও ভাতের অধিকারে সংগ্রাম করে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি। জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে আমরা ফিরিয়ে দিয়েছি।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ করার জন্য ২০০১ সালে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় এসে বন্ধ করে দেয়। আসলে ধ্বংস করাই তাদের চরিত্র। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে আবার উদ্যোগ নেই। তখন অনেকে বলেছিল এটা সম্ভব না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের একজন স্বনামধন্য ব্যক্তি (ড. ইউনূস) সামান্য ব্যাংকের এমডি পদের জন্য… সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করে হেরে গেল। আর সেই ক্ষোভে হিলারি ক্লিনটনকে দিয়ে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের (বিশ্বব্যাংক) টাকা বন্ধ করে দুর্নাম দিতে চেয়েছিল, পদ্মা সেতুর টাকায় দুর্নীতি হয়েছে। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম। বলেছিলাম দুর্নীতি করতে আসিনি, মানুষের সেবা করতে এসেছি। শেখ মুজিবের মেয়ে দুর্নীতি করে না।
তিনি বলেন, আমি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের চ্যালেঞ্জ নিলে অনেকে বলেছিলেন, এটা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের টাকায় এই খরস্রোতা নদীতে সেতু করা সম্ভব নয়। আমি জানি অনেক জ্ঞানীগুণী মানুষ আমার সঙ্গে নেই। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ আছে। বাংলাদেশের মানুষ পাশে থাকলে অসাধ্য সাধন করা যায়, সেটাই আমরা করেছি। আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। আজকে সেখানে রেল সেতু চালু করে দিলাম। বঙ্গবন্ধুর সুরে বলতে চাই, বাংলাদেশের মানুষকে আর কেউ দাবায় রাখতে পারবে না।
‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বলেই দেশের উন্নয়ন হয়েছে। আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের জন্য কাজ করে, দেশের কল্যাণে কাজ করে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করছি। দেশকে আমরা আরও উন্নত করতে চাই’, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।