আর্জেন্টিনার বুয়েনস আয়ার্সের এস্তাদিও মনুমেন্তালে শুক্রবার রাতটা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। দর্শকের সমুদ্র, আলোর ঝলকানি, সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন এক মহাতারকা লিওনেল মেসি।
বিশ্বকাপ বাছাইয়ের সম্ভাব্য শেষ ম্যাচে মাঠে নামলেন তিনি, পাশে ছিল পুরো পরিবার। জাতীয় সঙ্গীত বাজতেই আবেগে চোখ ভিজে উঠল এই মহাতারকার, সেই সাথে স্টেডিয়ামের প্রতিটি দর্শক তাকে বিদায় জানাতে দাঁড়িয়ে দিচ্ছিল করতালি।
রেফারির বাঁশির মধ্য দিয়ে শুরু হয় ম্যাচ এরপর থেকেই বোঝা যাচ্ছিল, দিনটা কেবল ফুটবলের নয় বরং হতে যাচ্ছে স্মৃতির, আবেগের, এবং বিদায়ের দিন।
খেলার মাঝেই মেসি বারবার দর্শকদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়ছিলেন, ভক্তরা নাম ধরে ডাকছিলেন, এছাড়া স্লোগানে মুখরিত ছিল মনুমেন্তালের পুরো আকাশ। যেন মনে হচ্ছিল, আর্জেন্টিনার প্রতিটি প্রাণ শ্বাস নিচ্ছিল মেসির সঙ্গে।
এরপর খেলার ঠিক ৩৯ মিনিটে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। হুলিয়ান আলভারেজের নিখুঁত পাস ধরে মেসি চিপ শটে বল পাঠালেন পোস্টে। গোলকিপারের মাথার উপর দিয়ে সেই বল জড়ালো জালে। একেবারে তার স্বভাবসুলভ শৈল্পিক ভঙ্গিতে।
আর তাতেই উল্লাসে ফেটে পড়ে গ্যালারিতে থাকা দর্শকবৃন্দ।
দ্বিতীয়ার্ধে আরও রঙিন হলো রাত। বদলি খেলোয়াড় লাওতারো মার্টিনেজ হেডে গোল করে লিড করলেন দ্বিগুণ। আর তারপর আবারো মঞ্চে মেসি। থিয়াগো আলমাদার পাস ধরে কয়েকজন ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় গোল করলেন তিনি। সেটাই ছিল তার ১১৪তম আন্তর্জাতিক গোল। যেনো প্রমাণ করলেন, বয়স তাকে থামাতে পারেনি, এখনও তিনি আর্জেন্টিনার হৃদস্পন্দন।
শেষ মুহূর্তে হ্যাটট্রিকের সুযোগ এসেছিল, কিন্তু অফসাইডের কারণে বাতিল হয়। তবুও এর কোনো প্রভাব পড়েনি আবেগঘন রাতটির রঙে।
মেসি তখনো দাঁড়িয়ে দর্শকদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়ছিলেন, আর সমর্থকরা তার নাম গেয়ে যাচ্ছিল।
ম্যাচ শেষে পুরো স্টেডিয়াম যেন বিস্ফোরিত হলো উচ্ছ্বাসে। সমর্থকেরা জানলো, হয়তো এটাই ঘরের মাঠে মেসির শেষ বিশ্বকাপ বাছাই ম্যাচ। সন্তানদের সঙ্গে মাঠে প্রবেশ, সতীর্থদের সঙ্গে হাসি-আনন্দ ভাগাভাগি, ভক্তদের করতালি সবকিছু মিলিয়ে এটা ছিল বিদায় আর উদযাপনের এক অনন্য সমন্বয়।
এই ম্যাচ কেবল আর্জেন্টিনার জয় ছিল না, এটি ছিল এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রতীক। মেসি আলো ছড়ালেন অভিজ্ঞতার দীপ্তি নিয়ে, আর তরুণ ফ্রাঙ্কো মাস্তান্তুয়ানো তার প্রথম ম্যাচেই দেখালেন ভবিষ্যতের সম্ভাবনা। যেনো বার্তা দিলেন আর্জেন্টিনার ফুটবল নিরাপদ হাতে আছে।
শেষ বাঁশি বাজতেই ইতিহাসের আরেকটি অধ্যায় শেষ হলো। ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে ৩-০ গোলের সহজ জয় আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দিল, কিন্তু ফুটবল বিশ্ব পেল এক আবেগঘন রাত, যেটি শুধু লিওনেল মেসির জন্যই লেখা হয়েছিল।
ভক্তরা জানে, মেসি আছেন,মেসি থাকবেন–প্রতিটি মুহূর্ত্বে ফুটবল প্রেমীদের মনে অমর হয়ে।