কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) জিওগ্রাফি এন্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. ইনজামুল হক-এর বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের দিয়ে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নসহ বিভিন্ন আনীত অভিযোগ অসত্য, বিভ্রান্তিমূলক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন ওই অভিযুক্ত শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের আনীত অভিযোগ যুক্তি-খণ্ডন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবর একটি আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন তিনি।
এতে প্রশাসনের প্রতি দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে অভিযুক্ত হলে বিধি মোতাবেক শাস্তি, নয়তো দায়মুক্তির ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম আবেদন পত্রের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আবেদনপত্র একটা পেয়েছি, এখনও দেখা হয়নি। দেখেশুনে পরবর্তী প্রসেসিং শুরু হবে।
আবেদনপত্রে বলা হয়, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এবং প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে গত ২৫ জানুয়ারি আমার বিরুদ্ধে আপনার বরাবর বিভাগের ৪টি শিক্ষাবর্ষের সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি আবেদন দৃষ্টিগোচর হয়। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, বিভাগের ৪টি শিক্ষাবর্ষের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বরাতে কতিপয় শিক্ষার্থী কর্তৃক আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ অসত্য, বিভ্রান্তিমূলক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
আমার বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয় যে, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের আমার বিভিন্ন ল্যাব কোর্সের খাতা দেখে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের কতিপয় কিছু শিক্ষার্থী, এছাড়াও বিভাগের সবচেয়ে সিনিয়র কিছু শিক্ষার্থী (নাম উল্লেখপূর্বক) পরীক্ষার ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশের আগেই পরীক্ষায় খাতায় কে বানান ভুল করেছে, কে কত মার্কস পেয়েছে, কে ফার্স্ট হয়েছে এসব বিষয়গুলো প্রকাশের মাধ্যমে নিজেদের দাম্ভিকতা প্রদর্শন করে বলে অভিযোগ আনিত হয়েছে। এছাড়াও বিভাগের ১ম ব্যাচের আবুল বাশার নামে একজন শিক্ষার্থীর একটি হুমকিমূলক উদ্ধৃতির সাথে আমাকে জড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমি আমার বক্তব্য স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করছি-
বিভাগ চালু হওয়ার পর থেকেই অদ্যবধি বিভাগে কোনো ল্যাব সংক্রান্ত জনবল নিয়োগ হয়নি, যার ফলশ্রুতিতে ল্যাব ব্যবস্থাপনার কাজে বিভাগের সিনিয়র শিক্ষার্থীদের সহয়তা অনেক সময়েই নিতে হয়। অভিযোগে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা সবাই বিভাগের ১ম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং প্রত্যেকেই আমার থিসিস/প্রজেক্ট ফেলো। আমি শিক্ষার্থীদের দ্রুততম সময়ে এবং সঠিকভাগে ল্যাব কোর্স পরিচালনার জন্য ল্যাব ক্লাস নেয়ার সময় তাদের এসিস্টেন্ট হিসেবে সহায়তা নেই এবং এ বিষয়ে বিভাগের সকল শিক্ষকবৃন্দ অবগত আছেন। এছাড়াও ল্যাব পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে প্রয়োজনে আমরা ইন্সট্রুমেন্ট হ্যান্ডলিং এবং ম্যালফাংসনিং এর ক্ষেত্রেও তাদের সহায়তা নেই। এই রীতি বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর যে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচলিত আছে। কিন্তু এর সাথে চূড়ান্ত পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের কোনও সম্পর্ক নেই। আপনার অবগতির জন্য আরও জানাতে চাই যে ল্যাবের চূড়ান্ত পরীক্ষার খাতা ২ জন স্ক্রিপ্ট এক্সামিনার এবং ২ জন প্রাক্টিকাল এক্সামিনার দ্বারা মূল্যায়িত হয়, সুতরাং এ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র কোনও শিক্ষার্থী কর্তৃক মূল্যায়ন করে নিজের ইচ্ছেমত চূড়ান্ত নম্বর দেয়ার কোনও সুযোগ নেই। তবে একথা আমি অস্বীকার করছিনা যে আমার ল্যাব এসিস্টেন্ট হিসেবে আমাকে সহয়তা করায় আমি ল্যাবে কোন কোন শিক্ষার্থী ভালো বা খারাপ করছে, কার ভুল কম বেশি হচ্ছে, বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে এবং কিভাবে ছাত্রদের আরও ইপ্রুভ করা যায় এ বিষয়ে তাদের সাথে আমার সাধারণ আলোচনা হয়। এই সাধারণ আলোচনা কে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচারে রূপান্তরিত করার যে অপচেষ্টা করা হয়েছে আমি তার নিন্দা জানাই। পাশাপাশি জুনিয়র সিনিয়রদের নিজেদের মধ্যকার সাধারণ আলোচনায় আমার নাম জড়িয়ে এভাবে প্রশাসনিকভাবে অভিযুক্ত করায় আমি শিক্ষক হিসেবে মর্মাহত।
আরেকটি অভিযোগে বলা হয়েছে যে ল্যাব ক্লাস চলাকালে সহায়ক হিসেবে কাজ করা উল্লেখিত ২০১৭-১৮ সেশনের কতিপয় শিক্ষার্থীবৃন্দ শিক্ষকদের মত আচরণ করেন এবং ক্লাস চলাকালীন শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন মানসিক নির্যাতন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। এবং পাশাপাশি এসাইন ল্যাবের খাতা শিক্ষার্থীরা মূল্যায়ন করে সুস্পষ্ট পাওয়ার প্রাক্টিস চালান।
উপরোক্ত অভিযোগের বিষয়ে স্পষ্টভাবে বলতে চাই যে, ল্যাব ক্লাস চলাকালীন আমার উপস্থিতিতে এরকম কোনও বিতর্কিত ন্যাক্কারজনক ঘটনা সম্পন্ন হয়নি, উপরন্তু ল্যাব ক্লাসে সহায়তার পরিবর্তে ক্লাসের শিক্ষার্থীরা তাদের একাধিকবার ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করেছেন। পাশাপাশি ল্যাবের চূড়ান্ত পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের অভিযোগটিও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ভিত্তিহিন।
অভিযোগের শেষ অংশে অভিযোগকারীরা উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে অনিয়মের শিকার হয়ে ন্যায্যতা ও নিরপ্রেক্ষতার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং এ প্রক্রিয়ার ফলে অনেক শিক্ষার্থীর মেধার প্রকৃত মূল্যায়ন নিশ্চিত হয় না বলে অভিযোগ করেছে। পাশাপাশি পরীক্ষার ফলাফলে পক্ষপাতিত্ব ও ভুল সিদ্ধান্তের ঝুঁকি তৈরি হওয়ার আশঙ্কাও করেছে অভিযোগকারীরা।
তাদের এ অভিযোগ ও আশঙ্কার বিষয়ে আমি তাদের পক্ষ হয়েই কথা বলতে চাই। ন্যায্যতা, নিরপেক্ষতার বিষয়ে আমি সবসময় নিজের প্রতি অঙ্গিকারবদ্ধ থেকেছি এবং থাকবো। আমি শিক্ষার্থীদের যে কোনও মূল্যায়নের বিষয়ে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করি এবং যে কোনও শিক্ষার্থী আমার খাতা মূল্যায়ন চ্যালেঞ্জ করতে চাইলে আমি সেই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে সর্বদা প্রস্তুত।
অভিযোগের শেষ লাইনে উপরে উল্লেখিত অভিযোগ কেন্দ্রিক ঘটনার সাপেক্ষে অসংখ্য প্রত্যক্ষদর্শী এবং একটি অডিয়ো বার্তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে আমি শক্তভাবে বলতে চাই যে, যে কোনও শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা যদি আমার সামনাসামনি এসে সিংহভাগ শিক্ষার্থী প্রত্যক্ষভাবে তাদের এই অভিযোগগুলো যুক্তি সহকারে উপস্থাপন করে প্রমাণ করতে পারে, তবে আমি তার পরদিন থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স ডিগ্রী শেষ হওয়া পর্যন্ত উক্ত ব্যাচের একাডেমিক সকল কার্যক্রম থেকে নিজেকে নিবৃত রাখবো। সাম্প্রতিক অভিযোগকারী ২১-২২ শিক্ষাবর্ষের একটি ল্যাবের (GIS Application Lab) প্রায় সকল ক্লাসের ভিডিও রেকর্ড আছে চাইলে কিছুটা যাচাই করা যেতেই পারে, কিন্তু ২০১৭-১৮ অনিক হোসাইনের কোনও এহেন অডিয়ো বার্তা সম্পর্কে আমি অবগত নই, আর যদি থেকেও থাকে তার সাথে আমার কোনও সম্পৃক্ততা নেই।
তিনি আরও জানান, একজন শিক্ষক সম্পর্কে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এহেন অসত্য, বিভ্রান্তিমূলক এবং ভিত্তিহিন অভিযোগ দিয়ে প্রচার করে তাকে পুরো সমাজের সামনে হেও প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা যেমন শিক্ষক-ছাত্রের মধ্যে যেমন দূরত্ব তৈরি করবে তেমনি পুরো শিক্ষক সমাজের তথা জাতির জন্যও লজ্জাজনক বিষয় হয়ে দাড়াবে। বিভাগের শিক্ষক স্বল্পতা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের জন্য নিজের সর্বচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করার পরেও কতিপয় শিক্ষার্থীদের থেকে এরুপ প্রশাসনিক অভিযোগ আমাকে মানসিকভাবে প্রচন্ড আঘাত করেছে।
তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে অভিযুক্ত হলে বিধি মোতাবেক শাস্তি, নয়তো দায়মুক্তির ব্যবস্থা করার জন্য জানান তিনি।