জাককানইবি প্রতিনিধি
২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়ে সম্পন্ন করেন স্নাতক। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিশেষয় বিবেচনায় ছাত্রত্ব ফিরে পান, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন স্নাতকোত্তরে। তবে ছাত্রত্ব ফিরে পেয়ে এখন সাংবাদিক পেটাতে চান তিনি। সাংবাদিক দেখলেই বলে উঠেন ‘সাংঘতিক’। তিনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদুল ইসলাম।
গতকাল (৫ আগস্ট) জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সময়ের আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আশরাফুল আলম ও এনটিভির বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রোহান চিশতীকে হেনস্তা করেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের সম্মাননা স্মারক প্রদানের ছবি ও ভিডিও চিত্র ধারণের জন্য সামনে গিয়ে একসাথে দাঁড়ান বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা। এসময় পেছন থেকে তাদের সরতে বলেন শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদুল ইসলাম। পরে কয়েকজন সরে গেলেও সময়ের আলোর প্রতিনিধি আশরাফুল আলম তার পেশাগত কাজে চিত্র ধারণ করার কথা জানান তাকে। এসময় কক্ষে উপস্থিত সকলের সামনে আশরাফুলকে বেয়াদব বলে সম্বোধন করে থাপড়ানোর হুমকি দেন তিনি।
পরবর্তীতে সাংবাদিককে মারার হুমকির বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এনটিভির প্রতিনিধি রোহান চিশতীকে মারতে উদ্যত হন তিনি। এসময় তিনি বলেন, “তুই কি আরও বুঝতে চাইতেছোস? হেয় ঘটনা বুঝতে চাইতাছে”। এসময় তাকে সরিয়ে নেন ছাত্রদলের অন্যান্য নেতা-কর্মীরা।
এ বিষয়ে সময়ের আলোর প্রতিনিধি আশরাফুল আলম বলেন, ছবি তোলার সময় উচ্চস্বরে আমাকে সরে দাঁড়াতে বললে আমি সাংবাদিক পরিচয় জানিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনের কথা বলি। এরপর তিনি আরও উত্তেজিত হয়ে বলে তুই বেয়াদবি করতেছোস, তোরে এখন থাপড়াবো। তারপর প্রক্টর ও অন্যান্য শিক্ষকরা এসে আমাদের সরিয়ে নেন।
ঘটনার বিষয়ে এনটিভির বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রোহান চিশতী বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা দিয়ে সময়ের আলোর প্রতিনিধিকে মারার হুমকি দেওয়ায় অনুষ্ঠান শেষে তার কাছে ঘটনার কারণ জানতে চাই। এসময় তিনি বলেন আমি আমার ছোট ভাইকে থাপড়ানোর কথা বলছি। পরে আমি ঘটনা জানতে চাইলে সে আমাকে মারতে উদ্যত হয় ও বলতে থাকে “তুই কি আরও বুঝতে চাইতেছোস?” এসময় একাধিকবার আমাকে ‘সাংঘাতিক’ বলে সম্বোধন করেন তিনি।
এর আগেও অনুষ্ঠানে একাধিক সাংবাদিকের সাথে উগ্র আচরণ করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার বার্তার প্রতিনিধি মো. মুমিন ইসলাম সবুজ বলেন, রেজিস্ট্রার স্যারের বক্তব্য চলাকালীন সময়ে আমি ভিডিও নেওয়ার জন্য তার সামনে দাঁড়ালে সে আমাকে কর্কশস্বরে বলে সরো ওদিকে। এরপর আরেকজনের সামনে দাঁড়ালে সেও ঠিক একই ব্যবহার করে। পরবর্তীতে জানতে পারি আমাদের একজন সহকর্মীকেও সে বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাহিদুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের স্নাতক ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক পরিচয়ের সুবিধা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার প্রবেশ করেন তিনি। একাডেমিক কাউন্সিলের বিশেষ বিবেচনায় ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন তিনি।
তার ছাত্রত্বের বিষয়ে জানতে চাইলে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন বখতিয়ার উদ্দিন বলেন, একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে বিশেষ বিবেচনায় তাকে ছাত্রত্ব প্রদান করা হয়েছে।
এছাড়া একাধিক সূত্র মতে, বর্তমানে তিনি শাখা ছাত্রদলের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক সভাপতি পদপ্রার্থী ইমরান আহমেদ ফরাজির অনুসারী।
সাংবাদিকদের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের বিষয়টি স্বীকার করেছেন শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইমরান হোসেন প্রধান। তিনি বলেন, আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম, সে যেই আচরণ করেছে এটা কখনোই কাম্য নয়। আমরা আমাদের সাংগঠনিক জায়গা থেকে ব্যবস্থা নেবো, পরবর্তীতে যেন এমন ঘটনা না ঘটে। আমরা আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করবো।
এ ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির।