বিষাক্ত এক মাছ পাফার ফিশ। জাপানে এর নাম ফুগু। এর যকৃত, চোখ আর নাড়িভুড়িতে এমনই বিষ থাকে, যার কাছে পটাশিয়াম সায়ানাইডও হার মানবে।
বলা হয়, ফুগু মাছে থাকা টেট্রোডোটক্সিন পটাশিয়াম সায়ানাইডের তুলনায় ১ হাজার গুণ বেশি বিষাক্ত। কিন্তু এই বিষাক্ত মাছের স্বাদেই মজে গিয়েছে এশিয়ান দেশ জাপান।
এই মাছের এমনই স্বাদ, যার জন্য মৃত্যুর ঝুঁকিও নিতে রাজী জাপানের মানুষজন। শুধু নিজেরাই যে এর স্বাদে মুগ্ধ তাইই না।
পর্যটকদের কাছেও ফুগু মাছের রয়েছে আলাদা কদর। যার সুবাদে প্রতিবছর জাপানের রেস্টুরেন্টগুলো মোটা অঙ্কের আয় করে।
তবে ফুগু যেহেতু বিষাক্ত, তাই এর জন্য বাড়তি সতর্কতাও মেনে চলে জাপান। দেশটিতে এই মাছের জন্য আছে আলাদা শেফ আর বিশেষজ্ঞ। এমনকি এই মাছ নিয়ে সতর্কতা এতই বেশি, জাপানের বাজারে আস্ত ফুগু মাছ বিক্রি করাই নিষিদ্ধ।
পটকা মাছে থাকা টেট্রোডোটক্সিন, একটি অত্যন্ত শক্তিশালী নিউরোটক্সিন। শরীরে এর সামান্যতম উপস্থিতিও প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে।
তবে দুর্ভাগ্যক্রমে টেট্রাডোটক্সিন বিষের কোনও নির্দিষ্ট প্রতিষেধক নেই। কোন কারণে এই বিষ পেটে গেলে respiratory muscle প্যারালাইসিস হয়ে মানুষ মৃত্যুবরণ করে।
আর ঠিক এই কারণেই জাপানের সম্রাটদের ফুগু মাছ খাওয়া নিষিদ্ধ। অবশ্য সাধারণ মানুষ চাইলে খুব সহজেই এই মাছের যেকোনো পদ খেতে পারেন। যদিও এর জন্য যেতে হবে বিশেষজ্ঞদের কাছে।
কেবলমাত্র লাইসেন্সপ্রাপ্ত এসব ব্যক্তিই ফুগু কাঁটা কিংবা রান্না করার অনুমতি পেয়ে থাকেন। লাইসেন্স পাবার আগে এসব ব্যক্তিকে দিতে হয় কঠিন পরীক্ষা। জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সরাসরি এই পরীক্ষার তদারকি করে থাকে।
আর এসব কাজের জন্য কদরও থাকে প্রচুর। প্রতি বছর ৮০০ থেকে ৯০০ জন জাপানি ব্যক্তি এই পরীক্ষায় অংশ নিয়ে থাকেন। যেখান থেকে পাশ করা সম্ভব হয় কেবল অল্প কিছু ব্যক্তির।
পরীক্ষার শেষ ধাপে নিজের রান্না করা মাছ নিজেই খেয়ে দেখেন অংশগ্রহণকারীরা। আর এতসব কড়াকড়ির কারণে জাপানে ক্রমাগত বাড়ছে ফুগুর প্রতি বিশ্বাস এবং চাহিদা।
পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতি বছর জাপানে ১০ হাজার টন ফুগু মাছ খাওয়া হয়। আর রেস্টুরেন্টেও এর বিক্রি চলে চড়া দামে।
স্বাদের দিক থেকে অনন্য এই মাছটি বেশ স্বাস্থ্যসম্মতও বটে। লো ফ্যাট আর হাই প্রোটিনের কারণে স্বাস্থ্য সচেতন জাপানিদের কাছে ফুগুর বেশ কদর রয়েছে। আর বিভিন্নভাবে রান্না করা সম্ভব বলে স্বাদের বেলাতেও আসে বৈচিত্র্যতা।