এস এম সাইফুল ইসলাম, প্রতিনিধি: এশিয়া মহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দ্বীনিশিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর বুখারী শরীফের মসনদে জুতা পায়ে বসতে দেখা গেছে চট্টগ্রাম ১৫ আসনের সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীকে। এ ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে ব্যাপক সমালোচনার কবলে পড়েন তিনি।
রবিবার (১৮ জুন) দুপুরে হাটহাজারী মাদরাসায় বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আদদুহাইলান সফরে এসেছেন। তাঁকে কেন্দ্র করে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের ভাইরাল হওয়া এক ছবিতে দেখা যায়, আবু রেজা নদভী বুখারীর মসনদে জুতা পায়ে বসে আছেন। বিষয়টি ফেসবুকে আসলে প্রচার হওয়া ছবি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।
এ বিষয়ে হাটহাজারী মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী বলেন, এ ধরনের অনুষ্ঠানে আমি অতীতে যাইনি, আজকেও যাওয়ার সুযোগ হয়নি, আল্লাহ পাক যেন হেফাজত করেন।
তিনি বলেন, মূলত সৌদি রাষ্ট্রদূত আসছিলেন; তাঁকে সংবর্ধনা বা সম্মান দেয়াকে কেন্দ্র করে এই অনুষ্ঠান।
জুতা নিয়ে হাদিসের মসনদে বসা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি অনুষ্ঠানে যাইনি এ বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে এটা যেহেতু হাদীসের মসনদ, বিশেষ করে বাংলাদেশের উম্মুল মাদারীসের হাদিসের মসনদ; আমরা দেখেছি, আমাদের উস্তাদগণ বিশেষ করে শাইখুল হাদীস আল্লামা আহমদ শফী (রহ.) ও আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী (রহ.)সহ অনেককেই জুতা পরে হাদিসের মসনদে যেতে দেখিনি। আমরা নিজেরাও ক্লাস দেয়ার সময় জুতা নিয়ে কখনো প্রবেশ করিনি।
দায়িত্বরতদের কোন গাফলতি আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা দায়িত্বরত উস্তাদ আছেন তারা হয়তো দেখেন নাই, দেখলে অবশ্যই বারণ করতেন।
এ বিষয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হাটহাজারী মাদরাসার মুঈনে মুহতামীম মুফতী জসিম উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জুতা নিয়ে মসনদে বসতে আমি দেখিনি।
একই বিষয়ে হাটহাজারী মাদরাসার শিক্ষক ও মাসিক মুইনুল ইসলামের সম্পাদক মাওলানা মুনির আহমাদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে চাচ্ছিনা, যারা সিনিয়র আছেন তারা বক্তব্য দিবেন। আমি অক্ষমতা প্রকাশ করছি।
বিষয়টি নিয়ে অনলাইন এক্টিভিটিস্ট আশরাফ মাহদী তার প্রতিক্রিয়ায় লিখেছেন “আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী রাহিমাহুল্লাহ সহ শীর্ষ উলামায়ে কেরামকে নিয়ে যে ব্যক্তি সংসদে তাচ্ছিল্যপূর্ণ বক্তব্য দিতে পেরেছিল, দারুল হাদিসে জুতা পরে ঢোকা তার জন্য কোন বিষয়ই না। কোন দেশের রাষ্ট্রদূতকে মেহমান করে নিয়ে আসায় তার এত কদর করার কিছু নেই। হাটহাজারীর মত মাদরাসার মুহতামিম চাইলেই এ দাওয়াতনামা পাঠিয়ে যেকোন রাষ্ট্রদূতকে মাদরাসায় নিয়ে আসতে পারেন।”
হাটহাজারী উলামা পরিষদের সহ.প্রচার সম্পাদক মাওলানা আসাদ উল্লাহ আসাদ লিখেন, “জুতা পায়ে বুখারীর মসনদ পাড়ানো ব্যক্তি কখনো কওমীর শুভাকাঙ্ক্ষী হতে পারে না। এই দরসগাহে জুতা খুলেই প্রবেশ করতেন শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফি (রহ.) এবং শাইখুল হাদীস আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী (রহ.)সহ যুগশ্রেষ্ট মুহাদ্দিসরা। এটার বেইজ্জতকারীকে আল্লাহ বেইজ্জত করুন। আল্লাহুম্মা আমীন”
আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী -এর খাদেম এইচ এম জুনায়েদ লিখেন, “জুতা পরে হাদীসের দরসে ঢোকা হাদীসের সাথে চরম বেআদবীর শামিল। চাটুকাররা এই কাজের প্রতিবাদ আর ঘৃণা না করলেও রাসূল (সা.) এর রুহানি বদ দুআয় ওরা ধ্বংস হবেই, ইন শা আল্লাহ”
এসব ছাড়াও অসংখ্য পোস্টে এমপি নদভীর জুতা পরা ছবি পোস্ট করে ফেসবুকে তীব্র সমালোচনা করতে দেখা যায় হাদিসের শিক্ষক এবং ছাত্রদের।
এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম ১৫ আসনের সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীর হোয়াটসঅ্যাপ এবং ফোন নাম্বারে একাধিকবার কল করা হলেও রিসিভ করেননি তিনি।