বেইলি রোডের ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্টুরেন্টে বসে থাকা মানুষজন বৃহস্পতিবার রাত ৯ টা ৪০ মিনিটেও হয়তো ভাবতে পারেননি কতটা ভয়াবহ অবস্থায় তারা পড়তে যাচ্ছেন। সেই আটতলা ভবন গ্রিন কোজি কটেজের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, আগুনের সূত্রপাত ঘটে রাত ৯.৫০ মিনিটে। এরপরের ঘটনা সবারই জানা। ৪৬ প্রাণহানি, দগ্ধ হয়েছেন আরও ১১ জন। তারাও শঙ্কামুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ৭৫ জনকে। নিহতদের মধ্যে ২০ জন পুরুষ, ১৮ জন নারী এবং আজ জন শিশু।
এতটুকু পর্যন্ত আপাতত ইতি টানছি বেইলি রোডের ঘটনা। কিন্তু এরপরই প্রশ্ন উঠছে ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ড ঘিরে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে অগ্নিকাণ্ড।
শনিবার বিকেল ৪ টা ৩৫ মিনিটে রাজধানীর নীলক্ষেত এলাকায় গাউসুল আজম মার্কেটে আগুন লাগে। এরপর গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা গ্রামে নাইস ফেব্রিকস প্রসেসিং-২ নামের পোশাক তৈরির একটি কারখানায় রাত ১১টার দিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। একইদিন রাত ২ টার দিকে গাজীপুরের সদর উপজেলার পিরুজালী ইউনিয়নের তিনটি ঝুট গুদামে আগুন লাগে। স্বভাবতই এখানে জনমনে প্রশ্ন উঠে– একনাগাড়ে এত আগুনে পুড়ছে কেন দেশ! রহস্যই যেন থেকে যাচ্ছে পুরো বিষয়টি।
এ বিষয়ে মোহাম্মদ রুহুল আমিন নামে একজন ব্যাংক কর্মকর্তার ভাষ্য, ‘এমন ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। কোন এক স্থানে বড় কোন অগ্নিকাণ্ড বা বড় কোন দুর্যোগের ঘটনা ঘটলে, একই ধরনের কিছু ছোট ঘটনা ঘটতে থাকে। যা খুব সহজে মিডিয়া কাভারেজ পায়। ব্যাপারটা আসলে মিডিয়া কাভারেজের জন্যই বড় হয়ে ওঠে। এটা নরমাল।’
এ বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মী জুবায়ের আহম্মেদ বলেন, ‘আগুন লাগলে সেটা দ্রুত নেভাতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি হিমশিম খেতে হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। ফায়ার সার্ভিসের বর্তমান সক্ষমতা অনুযায়ী, সর্বোচ্চ দেড় হাজার ফুট পর্যন্ত দুর থেকে পানি নিয়ে তা আগুন নেভানোর কাজে লাগানো যায়। তবে ঢাকায় জলাশয়ের তীব্র সংকটের কারণে এমন কিছুও যথেষ্ট নয়।’
‘আগুন লাগার পর তাই আগুন কীভাবে দ্রুততম সময় নেভানো সম্ভব। সেই সক্ষমতায় জোর দেওয়াও জরুরি’, যোগ করেন তিনি।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পেছনে অসাবধানতা ও অপরিকল্পিত নগরায়ণকেই দায়ী করেছেন নূর নামের একজন স্যোশাল এক্টিভিস্ট।
সানোয়ার হক সনি নামের আরেক সচেতন নাগরিক কিছুটা ক্ষোভ নিয়েই বলেন, “আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিচার হয়েছে শুনেছেন? দায়িত্বপ্রাপ্তদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হোক। হাজারো প্রশ্ন মাথায় ঘোরাফেরা করবে আবারও নতুন দুর্ঘটনা হবে আমরা ভুলে যাব বেইলী রোডের কথা যেমনটা ভুলে গেছি নিমতলা কিংবা তাজরিন গার্মেন্টসের কথা!”
সত্যিই কী আমরা ভুলে যাই। নাকি পোড়া মানুষের দুঃসহ স্মৃতির ঘাঁ নিয়ে আমরা বেঁচে থাকি। এইসব অগ্নিকাণ্ডের নেপথ্যের দায়ী ব্যক্তিরা বারবার থেকে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে।