আপন ভাই-বোন নারগিস ও জাইদুল। স্বামীর করা মামলায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন স্ত্রী নারগিস। তার ভাই জাইদুল ও বাবা তরিকুল ১৫ দিন জেল খেটেছেন। স্বামী মমিন ও ভাবী আকলিমা পরকীয়ার জেরে আপত্তিকর অবস্থায় আটকের পর ঘটনা ধামাচাপা দিতে এমন মামলার ঘটনায় অসহায় অবস্থায় দিন পার করছে নারগিস খাতুনের পরিবার। নিজের তিন সন্তান ও ভাইয়ের দুই মেয়ে নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে পুরো পরিবার। একই পরিবারের মধ্যে পরকীয়ার জেরে ধ্বংস হয়েছে দুই পরিবার
জানা যায়, নারগিস খাতুনের স্বামী মমিন ও ভাবী আকলিমা খাতুনের পরকীয়া সম্পর্ক চলছিল দীর্ঘদিন ধরে। এ নিয়ে ৩ বার স্থানীয়ভাবে সালিশ হলেও দুই পরিবারের কথা ভেবে আবারো সংসার করার সুযোগ দেয়া হয় তাদেরকে। গত ১৭ জুলাই মধ্যরাতে তাদের দুজনকে আপত্তিকর অবস্থায় ধরে স্থানীয়রা। এসময় তাদেরকে মারধর করে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা পরেরদিন সালিশ করার শর্তে ছেড়ে দেন। কিন্তু তার আগেই মমিন থানায় স্ত্রী, শশুরসহ ৭ জনের নামে মামলা করে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট ইউনিয়নের শিবনারায়পুর বাঘিতলা এলাকার এই ঘটনা নিয়ে সোমবার (২২ আগস্ট) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলন করেন নারগিস খাতুন ও তার পরিবার। এসময় এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত ও বিচার দাবি করেন তারা।
লিখিত বক্তব্যে নারগিস বেগম বলেন, গত ১৭ জুলাই রাত আনুমানিক ১১টা ৩০ মিনিটে শিবনারায়ণপুর বাঘিতলায় সেমাজুল ইসলামের বাড়িতে আমার স্বামী মমিন ও ভাবি আকলিমা পরকীয়ায় লিপ্ত অবস্থায় ধরা পড়েন। স্থানীয়রা তাদের আটক করলে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ফ্যানের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মমিনের মাথায় আঘাত লাগে। ঘটনার পর স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বিষয়টি মীমাংসার পরামর্শ দিলেও পরদিন স্বামী মমিন পরিকল্পিতভাবে নাটক সাজিয়ে শিবগঞ্জ থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় আমাকেসহ পিতা-মাতা, ভাই জাইদুল ইসলাম ও কাকা সুজন আলীসহ সাতজনকে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আসামি করা হয়।
নারগিসের ভাই জাইদুল ইসলাম বলেন, দুজনের মধ্যে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক অনেকদিনের। এই পরকীয়ার খবর এর আগে পেলেও বোনের সংসারের দিকে দেখে তা মেনে নেয়। কিন্তু এবার সবকিছু শেষ করে দিল বোন ও আমার সংসারের। ভাই-বোনের ৫ ছেলে-মেয়েকে নিয়ে অসহায় অবস্থায় দিন পার করছি।
অভিযোগের তদন্ত ছাড়াই শিবগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) পিয়ারুল ইসলাম তাদের মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে দাবি করে তিনি আরো বলেন, সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে। পাশাপাশি দুই পারিবারকে ধ্বংস করা স্বামীর দীর্ঘদিনের পরকীয়া সম্পর্কের সত্য উদঘাটন ছাড়াও দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আমি তিন সন্তানের মা। প্রায় দুই বছর ধরে স্বামী এই পরকীয়া সম্পর্কে জড়িত। আমাদের মতো অসহায় ও খেটে খাওয়া মানুষকে হয়রানির বিচার চাই।
মধ্যরাতে পরকীয়া প্রেমের ঘটনায় আপত্তিকর অবস্থায় আটকের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়ায় মমিনের করা মামলায় জেল খেটেছেন স্থানীয়রাও। তাদের অভিযোগ, শিবগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনার তদন্ত না করেই মিথ্যা মামলায় তাদেরকে আটক করেছিল। মামলার আসামী সেলিম ও সুজন আলী বলেন, আমরা হট্টগোলের খবর পেয়ে সেখানে দেখতে যায়। এর জের ধরেই আমাদেরকেও আসামী করা হয় ১৫ দিন জেল খাটতে হয়েছে।
এ নিয়ে অভিযুক্ত মমিন আলীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। নারগিস খাতুনের ৩ ছেলেমেয়ে ও তার ভাই জাইদুলের ২ মেয়ে রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে নারগিসের বাবা তরিকুল ইসলাম, ভাই জাইদুল ইসলাম, কাকা সুজন আলীসহ ভুক্তভোগী আসামীরা উপস্থিত ছিলেন।