বুধবার, ১৮ জুন, ২০২৫

ভারতকে সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তানের পরমাণুকেন্দ্র ওড়ানোর ছক মোসাদের!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
-বিজ্ঞাপণ-spot_img

ভারতকে সঙ্গে নিয়ে গত শতাব্দীর ৮০-র দশকে পাকিস্তানের পরমাণুকেন্দ্র ধ্বংসের ছক কষে ইসরায়েলের কুখ্যাত গুপ্তচর বাহিনী মোসাদ।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি ওই অপারেশন। গত শতাব্দীর ৯০-এর দশকের একেবারে শেষের দিকে পরমাণু অস্ত্র হাতে পায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী।

এর অন্তত দেড় দশক আগে আগে থেকে আণবিক হাতিয়ারের শক্তি অর্জনে কোমর বেঁধে লেগেছিল ইসলামাবাদ। গুপ্তচর মারফত সেই খবর কানে যেতেই প্রমাদ গোনে ইসরায়েল।

কারণ, জন্মলগ্ন থেকে ইহুদিদের চরম শত্রু বলে মেনে এসেছে পাকিস্তান। শুধু তা-ই নয়, ইসরায়েলকে কখনওই রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেয়নি ইসলামবাদ।

এমত অবস্থায় তাদের ধ্বংস করতে পাকিস্তান পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার হতে পারে বলে মনে করেছিল তেলআবিব।

১৯৭৭-’৮৩ সাল পর্যন্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মেনাহেম বেগিন। চারদিকে শত্রুবেষ্টিত হওয়ায় ইহুদি ভূমির নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে বিশেষ একটি নীতির প্রচলন করেন তিনি। এর নাম ‘বেগিন ডকট্রিন’।

এতে বলা হয়, কোনও দিক থেকে বিপদের আশঙ্কা থাকলে আগাম আক্রমণ করে আগেই তা গুঁড়িয়ে দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট নীতিটি মেনে পাকিস্তানের পরমাণু কেন্দ্রগুলিকে উড়িয়ে দেওয়ার ছক কষে ইহুদি গুপ্তচর বাহিনী মোসাদ। বলা বাহুল্য এতে ভারতকে পুরোপুরি পাশে পেয়েছিল তারা।

পাকিস্তানের আগে অবশ্য ইরাককে নিশানা করেন ইহুদি প্রধানমন্ত্রী বেগিন। তার নির্দেশে বাগদাদের ওসিরাক পারমাণবিক প্রতিষ্ঠান উড়িয়ে দেয় ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ)।

১৯৮১ সালের ৭ জুনের ওই বিমান হামলায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায় সেখানকার আণবিক চুল্লি। আইডিএফ ওই অভিযানের নাম দিয়েছিল ‘অপারেশন অপেরা’।

পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো অবশ্য একে ‘অপারেশন ব্যাবিলন’ বলে উল্লেখ করেছিল। ঠিক একই কায়দায় ইসলামাবাদের পরমাণু গবেষণাকেন্দ্র ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল মোসাদের।

১৯৮০-র দশকে ইসলামাবাদ দ্রুত গতিতে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দিকে এগোতে থাকে। পাক সেনার সদর দফতর রাওয়ালপিন্ডি সংলগ্ন কাহুতায় এই সংক্রান্ত গবেষণা চালাচ্ছিলেন সেদেশের প্রতিরক্ষা গবেষকেরা।

যদিও বিশ্লেষকদের বড় অংশই মনে করেন চীন এবং উত্তর কোরিয়া থেকে প্রযুক্তি চুরি করে আণবিক বোমা তৈরি করেছেন তারা।

১৯৭১ সালের যুদ্ধে ভারতের হাতে পুরোপুরি পর্যুদস্ত হওয়ার পর পরমাণু হাতিয়ার নির্মাণে মনোনিবেশ করে পাক সরকার। ওই সময়ে এ ব্যাপারে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তথা পাকিস্তান পিপল্‌স পার্টির (পিপিপি) প্রতিষ্ঠাতা জুলফিকার আলি ভুট্টো।

তিনি বলেন, প্রয়োজনে সবাই ঘাস-পাতা খেয়ে থাকবে, কিন্তু আমাদের আণবিক বোমা চাই। সাবেক পাক প্রধানমন্ত্রী ভুট্টোর ওই মন্তব্যের পর প্রমাদ গোনে নয়াদিল্লি।

ইসলামাবাদের পরিকল্পনা জানতে কোমর বেঁধে নেমে পড়ে ভারতের গুপ্তচর সংস্থা ‘রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং’ বা র। কাহুতায় কর্মরত প্রতিরক্ষা গবেষকদের চুলের নমুনা সংগ্রহ করেন তারা। রাসায়নিক পরীক্ষায় তাতে ভারী মাত্রায় ইউরেনিয়ামের অস্তিত্ব মেলে। ফলে দু’য়ে দু’য়ে চার করতে ভারতীয় গুপ্তচরদের খুব একটা সমস্যা হয়নি।

পরবর্তীকালে ওয়াশিংটন পোস্ট এবং এবিসি নিউজের প্রতিবেদনে ভারত ও ইসরায়েলের যৌথ উদ্যোগে পাক পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংসের পরিকল্পনা ফাঁস হয়।

এই দুই মার্কিন সংবাদমাধ্যমের দাবি, ঝুঁকিপূর্ণ এই অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-১৫ এবং এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ব্যবহারের কথা ছিল আইডিএফের।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের সাংবাদিক অ্যাড্রিয়ান লেভি লেখেন, ‘অপারেশন ব্যাবিলন’-এর সাফল্যের পর ভারতীয় সেনা এবং গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের একটি উচ্চ পর্যায়ের দল ইসরায়েল সফরে যান। সেখানে ঠিক হয় পুরো অভিযানের যাবতীয় খুঁটিনাটি।

পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, ইসরায়েলি জেটগুলির গুজরাতের জামনগরের বিমানবাহিনীর ঘাঁটি থেকে ওড়ার কথা ছিল।

তবে সেখান থেকে সীমান্ত পেরিয়ে কাহুতায় হামলা চালাত না তারা। উল্টে সোজা কাশ্মীর উড়ে গিয়ে নিয়ন্ত্রণরেখা (লাইন অফ কন্ট্রোল বা এলওসি) পেরিয়ে রাওয়ালপিন্ডির দিকে যাওয়ার কথা ছিল তাদের।

ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানের ভূস্বর্গ হয়ে আক্রমণ শানানোর নেপথ্যে ভারতীয় গুপ্তচরদের সুনির্দিষ্ট একটি পরিকল্পনা কাজ করেছিল। র’-এর যুক্তি ছিল এতে অতি সহজে পাক রাডারের নজর এগিয়ে কাহুতায় পৌঁছে যাবে ইহুদিদের লড়াকু জেট।

দ্বিতীয়ত, পাহাড়ের আড়ালকে কাজে লাগিয়ে রাওয়ালপিন্ডির আকাশসীমায় ঢুকতে পারবেন আইডিএফের পাইলটরা।

লেভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৮৪ সালের মার্চে এই অভিযানের চূড়ান্ত ছাড়পত্র দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। ইসরায়েলের ক্ষমতায় তখন ইৎজ্যাক শামির।

বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার নয়াদিল্লির সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তবে ইন্দিরার সঙ্গে সরাসরি এ ব্যাপারে তার আলোচনা হয়েছিল কি না, তা স্পষ্ট নয়।

কাহুতা ধ্বংসের পরিকল্পনা যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, তখনই বাদ সাধে আমেরিকা। পাকিস্তানের কাছে সব কিছু ফাঁস করে দেয় মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ (সেন্ট্রাল ইনটেলিজেন্স এজেন্সি)।

ফলে এ ব্যাপারে আগাম সতর্কতা নিয়ে ফেলে ইসলামাবাদ। বাধ্য হয়ে হামলার পরিকল্পনা বাতিল করে ভারত ও ইসরায়েল। দু’টি দেশ অবশ্য সরকারি ভাবে কখনওই বিষয়টি স্বীকার করেনি।

১৯৯৮ সালের মে মাসে বেলুচিস্তানের চাগাই জেলার রাস কোহ পাহাড়ে পরমাণু বোমার পরীক্ষা চালায় পাকিস্তান। ওই বছরই রাজস্থানের পোখরানে পাঁচটি আণবিক বোমা পরীক্ষা করে নয়াদিল্লি।

ভারতের আগ্রাসী মনোভাবের পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসাবে পারমাণবিক হাতিয়ার তৈরি করা হয়েছে বলে ওই সময়ে যুক্তি দিয়েছিল ইসলামাবাদ।

শেয়ার করুন

সর্বশেষ নিউজ

আলি খামেনির সবশেষ ভাষণে তিন বার্তা: আল জাজিরার বিশ্লেষণ

আগেই জানানো হয়েছিল চলমান সংকটের মাঝে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। ইসরায়েলের অন্যায্য আগ্রাসনের মুখে এরইমাঝে হুমকির মুখে পড়েছেন...

জাতির উদ্দেশে ভাষণে যা বললেন আলী খামেনি

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, ‘‘যেভাবে ইরান চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ দৃঢ়ভাবে প্রতিরোধ করেছে, ঠিক তেমনি চাপিয়ে দেওয়া শান্তির বিপক্ষেও দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেবে।" বুধবার...

গণভোটসহ আরও যেসব ইস্যুতে সরব ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ

মৌলিক সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলো একমত না হলে প্রয়োজনে গণভোটে যেতে হবে বলে জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও দলের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর...

জামায়াত‌কে বে‌শি কথা বলতে দেয়ায় সংলাপ থে‌কে ওয়াক আউট গণ‌ফোরাম-সি‌পি‌বির

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে বে‌শি কথা বল‌তে দেয়ায় জাতীয় ঐকমত্য ক‌মিশ‌নের সংলা‌প থে‌কে ওয়াক আউট ক‌রে বাংলা‌দে‌শের ক‌মিউ‌নিস্ট পা‌টি (সি‌পি‌বি) ও গণ‌ফোরাম। অবশ্য মি‌নিট দশেক...

সম্পর্কিত নিউজ

আলি খামেনির সবশেষ ভাষণে তিন বার্তা: আল জাজিরার বিশ্লেষণ

আগেই জানানো হয়েছিল চলমান সংকটের মাঝে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ...

জাতির উদ্দেশে ভাষণে যা বললেন আলী খামেনি

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, ‘‘যেভাবে ইরান চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ দৃঢ়ভাবে প্রতিরোধ...

গণভোটসহ আরও যেসব ইস্যুতে সরব ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ

মৌলিক সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলো একমত না হলে প্রয়োজনে গণভোটে যেতে হবে বলে জানিয়েছেন ইসলামী...