ভারতের মহারাষ্ট্রের নাগপুর শহরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সাথে মুসলমানদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল সোমবার রাত থেকে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় ব্যাপক পাথর নিক্ষেপ, গাড়ি ভাংচুর ও দোকানে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সংঘর্ষের ঘটনায় সাধারণ নাগরিকদের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরাও আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে, এরপরই কারফিউ জারি করে স্থানীয় প্রশাসন।
বিবিসি বাংলা ও পিটিআই-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, নাগপুরের মহাল এলাকায় বজরং দল এক উত্তেজনাপূর্ণ বিক্ষোভ আয়োজন করে। দাবি ছিল মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের কবর সরিয়ে ফেলার। সেই বিক্ষোভে আওরঙ্গজেবের ছবি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
এ সময় খবর রটে যায় যে কোরআন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে! মুহূর্তেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে চরম ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। নাগপুর পুলিশের ডেপুটি কমিশনার অর্চিত চন্দক জানিয়েছেন, গুজবের কারণেই এই ভয়াবহ দাঙ্গার সূচনা হয়েছে। সবাইকে অনুরোধ করবো গুজবে বিশ্বাস না করতে।
সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে কোতোয়ালি ও গণেশপেঠ এলাকাতেও। হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে, পাথর নিক্ষেপ, লুটপাট আর অগ্নিসংযোগে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়! পুলিশের ওপরও আক্রমণ করা হয়।
মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত পুলিশ অভিযান চালিয়ে ২০ জনকে গ্রেপ্তার করে। পরে মহারাষ্ট্র সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যোগেশ কদম জানান, মোট ৪৭ জনকে আটক করা হয়েছে এবং আরও তদন্ত চলছে।
পিটিআই-এর রিপোর্ট বলছে, চিটনিস পার্ক থেকে শুকরাওয়ারি তালাও রোড পর্যন্ত পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “একদল মুখোশধারী লোক আমাদের বাড়ি লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে শুরু করে, গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। আমি পুলিশে ফোন করলেও, তারা আসতে দেরি করে।”
হনসাপুরি এলাকার এক দোকানি জানান, “আমি দোকান বন্ধ করছিলাম, হঠাৎ দেখি একদল দাঙ্গাকারী গাড়িতে আগুন দিচ্ছে। পানি আনতে গেলে তারা আমার মাথায় পাথর ছুড়ে মারে!”
হামলাকারীরা প্রথমেই সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে দেয়, যাতে কেউ তাদের শনাক্ত করতে না পারে।
নাগপুরে এখনও কারফিউ জারি রয়েছে। পুলিশ জনগণকে সতর্ক থাকতে বলেছে এবং অহেতুক বাইরে বের না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
নাগপুরের সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গডকরি এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, “গুজবের কারণে নাগপুরে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। শান্তি বজায় রাখা আমাদের ঐতিহ্য।”
এআইএমআইএম নেতা ও সাবেক বিধায়ক ওয়ারিস পাঠান বলেছেন, “এই সহিংসতা কে বা কারা উসকে দিয়েছে, তা প্রশাসনের খতিয়ে দেখা উচিত। আমরা কঠোর তদন্তের দাবি জানাই।”