আওয়ামী সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কে শুরু হয় টানা-পোড়ন। যার প্রভাব বেশি দেখা যায় ভারত বাংলাদেশ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে।
বিশেষ করে বাংলাদেশের অন্যতম স্থলবন্দর বেনাপোলের দিকে চোখ রাখলেই বিষয়টা আরো স্পষ্ট হয়ে উঠে। কারণ ভারত সরকারের বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের একের পর এক নিষেধাজ্ঞায় ধস নেমে আসে বেনাপোল স্থলবন্দরের রফতানি বাণিজ্য।
স্বাভাবিক সময়ে দিনে যেখানে গড়ে ২৫০ ট্রাক বিভিন্ন ধরনের পণ্য রফতানি হয় বর্তমানে তা কমে দাড়িয়েছে ৩০ ট্রাকের নিচে। এ পরিস্থিতি সামনের দিনে রফতানি বানিজ্যে আরো সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশিষ্টরা। তারা এ চলমান অবস্থা থেকে উত্তরনে সরকারের সহযোগীতা কামনা করেছেন।
সবশেষ গত ১১ আগস্ট ভারত সরকার বাংলাদেশ থেকে পাট ও পাটজাতীয় পণ্যের কাপড়, পাটের দড়ি, পাটজাতীয় পণ্য দিয়ে তৈরি দড়ি বা রশি এবং পাটের বস্তা বা ব্যাগ আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করা হয় বন্দরে।
এর আগে গত ২৭ জুন আরেক প্রজ্ঞাপনে ডিজিএফটি বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে কাঁচা পাট, পাটের রোল, পাটের সুতা ও বিশেষ ধরনের কাপড় আমদানি বন্ধ করে ভারত।
এছাড়া গত ১৭ মে স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক, কাঠের আসবাব, সুতা ও সুতার উপজাত, ফল ও ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয় প্রভৃতি পণ্য আমদানিতে বিধি-নিষেধ দিয়েছিল। তার আগে ৯ এপ্রিল ভারতের কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির সুবিধা প্রত্যাহার করেছিল দেশটি।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের দপ্তর সম্পাদক মোস্তাফিজ্জোহা সেলিম জানান, বানিজ্যে নিষেধাজ্ঞা দুই দেশের জন্য ক্ষতিকর। তবে বেশি প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশিদের। ছাত্র,জনতা আন্দোলনে গত বছরের ০৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার পতন হলে ভারতে পলায়ন করেন। এর পর থেকে একের পর এক রফতানি বানিজ্যে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে দেশটি৷ যা বৈদেশিক বানিজ্য নীতি লঙ্ঘন হচ্ছে।
বেনাপোল আমদানি,রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, বছরে ভারতের সাথে গড়ে ১৪ লাখ মার্কিন বিলিয়ন ডলারের আমদানি ও ২ লাখ মার্কিন বিলিয়ন ডলারের রফতানি বানিজ্য হয়। বাংলাদেশ থেকে সব চেয়ে বেশি রফতানি হয় পাট ও পাটজাত পণ্য। কিন্তু ভারত সরকার নানান অযুহাত দেখিয়ে উল্লেখিত এসব পণ্য স্থল পথে রফতানি বন্ধ করে সমুদ্র পথে ব্যবহার করতে বলছে।
যেসব পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়, তার ১ শতাংশের কাছাকাছি যায় সমুদ্রপথে। ফলে বিধি-নিষেধের কারণে মূলত এসব পণ্য রপ্তানির সহজ পথটি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত।
বেনাপোল বন্দরের রফতানিকারক ইদ্রিস আলী জানান, ভারতেও সরকার পরিবর্তন হয়। এসব নিয়ে কোন প্রভাব বিস্তার করেনা বাংলাদেশ । কিন্তু বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনে এবার বানিজ্যে প্রভাব বিস্তার করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে ভারত। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে বন্ধুত্বপূর্ন রাষ্ট্রটির সাথে সৌহার্দ্য,সাম্প্রতির বিনষ্ট হতে পারে। সম্পর্ক্য অটুট রাখতে ভারত পূর্বের ন্যায় পাশে থাকবে বলে আশা রাখছি।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৯৫ হাজার ৮৯৯টি ট্রাকের মাধ্যমে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ২০ লাখ ১১ হাজার ২৬৭ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের পন্য। এসময় বাংলাদেশি ৪৭ হাজার ৪৩৭টি ট্রাকে ভারতে রফতানি হয় ৪ লাখ ২১ হাজার ৭১৩ মেট্রিক টন পন্য। বর্তমানে বানিজ্যে নিষেধাজ্ঞার কারনে ০৫ আগস্টের পর খেকে বানিজ্য কমতে শুরু করেছে বন্দরে। এ অবস্থা বানিজ্য বিরুপ প্রভাব বাড়ছে।