ভারতের সর্বকনিষ্ঠ এবং প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন সদ্য নির্বাচিত দ্রৌপদী মুর্মু। সোমবার দেশটির সংসদের সেন্ট্রাল হলে একটি মনোমুগ্ধকর ও বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি ১৫তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দ্রৌপদী মুর্মুকে শপথ পাঠ করান।
মুর্মু তার উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, ‘একটি প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা এবং একজন আদিবাসী হওয়ার পরেও আমি এই পদে অধিষ্ঠিত হতে পেরে সত্যিই সম্মানিত বোধ করছি। এটি প্রমাণ করে যে একজন দরিদ্রও ভারতের রাষ্ট্রপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারে। এটিই আমাদের গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।’
ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি এম ভেঙ্কাইয়া নাইডু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার মন্ত্রীরা এবং আইনপ্রণেতারা সংসদে শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
এর আগে ৬৪ বছর বয়সী এই রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়।
গত বৃহস্পতিবার মুর্মু রাষ্ট্রপতি পদে জয়ী হওয়া সর্বকনিষ্ঠ এবং প্রথম আদিবাসী রাজনীতিবিদ হয়ে ইতিহাস রচনা করেছেন।
ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সাবেক গভর্নর ও সাবেক স্কুলশিক্ষক দ্রৌপদী মুর্মুকে প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত করেন। মুর্মুর প্রধান বিরোধী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন সাবেক অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিনহা।
সোমবার ভারতের ১৫তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। দেশটির ভোটাধিকার প্রয়োগে যোগ্য চার হাজার ৫০০ জনের বেশি আইনপ্রণেতাদের মধ্যে ৯৫ শতাংশেরও বেশি আইনপ্রণেতা ভোট দিয়েছেন।
ভারতে রাষ্ট্রপতি সরাসরি জনগণের মাধ্যমে নির্বাচিত নয়। দেশটির রাজ্য ও কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলগুলোর বিধায়ক, লোকসভা ও রাজ্যসভার নির্বাচিত সাংসদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করা হয়। কিন্তু এই নির্বাচনের ক্ষেত্রে সকল বিধায়ক ও নির্বাচিত সংসদদের ভোটের মূল্য ভিন্ন ভিন্ন হয়
বাংলাদেশের মতো ভারতীয় রাষ্ট্রপতি হলেন আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রপ্রধান যিনি নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করেন না।
কে এই মুর্মু?
দ্রৌপদী মুর্মু ১৯৫৮ সালের ২৯ জুন স্বাধীন ভারতে জন্মগ্রহণ করেন। মুর্মু ১৯৭৯ সালে তিনি স্নাতক শেষ করেন এবং স্কুল শিক্ষক হওয়ার আগে একজন সরকারি কর্মচারী হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন।
তিনি পরবর্তীকালে পূর্ব ভারতীয় রাজ্য ওডিশার রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তিনি প্রথমে স্থানীয় নাগরিক সংস্থার কাউন্সিলর এবং তারপর একজন বিধায়ক নির্বাচিত হন।
দুই মেয়াদের বিধায়ক ২০০০ সালে ওডিশা সরকারের মন্ত্রী হয়েছিলেন এবং প্রায় ১৫ বছর পরে মুর্মু প্রতিবেশি পূর্ব রাজ্য ঝাড়খণ্ডের প্রথম নারী রাজ্যপাল হিসেবে শপথ নেন।
ব্যক্তিগত জীবনে মুর্মু তার স্বামী ও দুই ছেলেকে হারিয়েছেন। তার স্বামী হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান এবং তার দুই ছেলের মধ্যে একজনকে ২০০৯ সালে রহস্যজনক পরিস্থিতিতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তার একটি মেয়ে রয়েছে।