চট্টগ্রামে এবার বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, পয়লা ফাল্গুন ও আসন্ন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস (অমর একুশে) উপলক্ষে পাঁচ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন চট্টগ্রাম ফুল ব্যবসায়ীরা।
এবার দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালো হওয়ায় গত বছরের চেয়ে ফুল বিক্রি হবে বেশি এমন ধারণা ব্যবসায়ীদের। তারা গত বারের চেয়ে প্রায় তিনগুন ফুল তুলেছেন দোকানে। দেশের বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি ভালোবাসা দিবসের জন্য ফুল আমদানি করা হয়েছে বিদেশ থেকেও।
নগরীর মোমিন রোড অবস্থিত বিভিন্ন ফুল দোকানীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
ফুল ব্যবসায়ীরা জানান, ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের প্রধান আকর্ষণই হলো ফুল। তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে প্রায় সব বয়সের মানুষ এদিন ফুল উপহার দেন প্রিয়জনকে। দিবসটি এখন সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। তাই ফুল ব্যবসায়ীরা সারা বছরই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন দিনটির জন্য।
অন্যান্য দিনের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে ফুল বিক্রি হয় এদিন। ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে গত দুই–তিন দিন আগে থেকেই আড়তদার ও খুচরা দোকানীরা ফুল মজুদ করতে শুরু করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জিপসি, রডস্টিক, ক্যালেন্ডুলা, চন্দ্রমল্লিকা, কাঠ মালতী, কামিনী, বেলি। এরই মধ্যে বিকিকিনি শুরু হয়ে গেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রাম ফুল ব্যবসায়ী দোকান মালিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সিনিয়র সহসভাপতি মো. নাছের গনি চৌধুরী জানান, আশা করছি গত বছরের তুলনায় এ বছর ফুল বিক্রি বাড়বে। এবার দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলনামূলক ভালো। যে কোনো উৎসবে মানুষ ভালোভাবে অংশ নিতে পারছেন। তাই ভালোবাসা দিবসে ফুলের বিক্রিও ভালোই হবে বলে আশা করছি।
তিনি আরও বলেন, সামনে আন্তজাতিক মার্তৃভাষা দিবসেও প্রচুর ফুল বিক্রি হবে। গত বছর এ দিনে একটি দেশি গোলাপ ৪০ টাকা, চীনা গোলাপ ৭০ টাকা ও গোলাপি রঙের একটি গোলাপ বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকার উপরে। ফুলের এ চাহিদা অব্যাহত থাকলে আসছে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পর্যন্ত ফুল বিক্রি পাঁচ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা করছি।
এই ব্যবসায়ী নেতা জানান, ভ্যালেন্টাইনস ডে উপলক্ষে চট্টগ্রাম ফুল ব্যবসায়ী দোকান মালিক কল্যাণ সমিতির অধীন ২৭০টি দোকানে দেশ-বিদেশে ৪ থেকে ৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করা হবে। এই ফুলগুলো আসে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে, বিশেষ করে যশোর, ঢাকা, চকরিয়া, দোহাজারী, চন্দনাইশ, হাটহাজারী ও নাজিরহাট। এছাড়া বিদেশ থেকে এই দিনের জন্য ৫০ লাখ টাকার ফুল আনা হয়েছে। যার বেশির ভাগ এসেছে চীন থেকে।
এছাড়াও সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক ও ভারত থেকে ফুল আনা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য কয়েকটি ফুল হলো- চীনা গোলাপ, মাম, কার্নেশন, জারবেরা, সাদা গোলাপ, হলুদ গোলাপসহ আরও কয়েক ধরনের ফুল।
তিনি আরও বলেন, স্বাভাবিক সময়ে কোনো অর্ডার ছাড়াই প্রত্যেক দোকান ১০-১৫ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করে থাকে। ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে এই বিক্রি কয়েকগুন বেড়ে যায়।
হাটহাজারীর ফুল চাষী মো. ইব্রাহিম বলেন, এবার ফুলের অর্ডার বেশি। সে কারণে আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে ফুল চাষ করা হয়েছে। বিভিন্ন জাতের ফুলের চাহিদা থাকলেও গোলাপ ফুলের চাহিদা বেশি থাকে এ সময়।
তিনি জানান, পাইকারিভাবে গাঁদা এক হাজারটি ২৫০ টাকা, জিপসি প্রতি আঁটি ১৫-২০ টাকা, চন্দ্রমল্লিকা প্রতিটি তিন-চার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্য দিকে চীনা গাঁদা প্রতি ১০০টি চার থেকে ৫০০ টাকা এবং চীনা বেলি বিক্রি হচ্ছে প্রতি ১০০টি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। গোলাপের শত বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকায়।
এদিকে নগরীর চেরাগী পাহাড়ের ফুলের দোকান ঘুরে দেখা গেছে দেশি গোলাপ ৪০ থেকে ৫০ টাকা, চীনা গোলাপ ৭০ টাকা ও গোলাপি রঙের একটি গোলাপ বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকার উপরে।