কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে ত্রিমুখী হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামীপন্থী রেজিস্ট্রারের অপসারণ এবং তদস্থলে যোগ্য ব্যাক্তি নিয়োগ দেয়ার দাবিতে উপাচার্যের কার্যালয়ে অবস্থান করে বিএনপিপন্থী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এসময় ইবি ছাত্রদল নেতাদের উপাচার্যের কার্যালয়ে প্রবেশ করে সাংবাদিকদের কাজে বাধা দিতে দেখা যায়।
এক পর্যায়ে উপ-উপাচার্য এবং প্রক্টরের মধ্যে কথা কাটাকাটি ঘটে। পরবর্তীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সহযোগিতায় পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে আসে।
এদিকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে তার কার্যালয় থেকে বের করে দিয়ে তালা দিয়ে দেয় কর্মকর্তা কর্মচারীদের একাংশ। তৎক্ষনাৎ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ তাকে উদ্ধার করে তার কার্যালয় খুলে দেয়। পরে বিকেলে শিক্ষকদের লাঞ্ছনা ও সাংবাদিকদের কাজে বাধা দেয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন করে ছাত্র ইউনিয়ন, ইবি সংসদ।
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) দুপুর বারোটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনে বিচ্ছিন্নভাবে এ ঘটনাগুলো ঘটে।
ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসানের অপসারণ এবং তদস্থলে অন্য কাউকে নিয়োগের দাবিতে উপাচার্যের কার্যালয়ের বাইরে হট্টগোল শুরু হলে এক পর্যায়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী, ইবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহমেদ ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হন।
তাদের সাথে উপাচার্যের কার্যালয়ে ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা প্রবেশ করলে ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহমেদ উপাচার্যের সম্মতিক্রমে সাংবাদিকদের উপাচার্যের কার্যালয় থেকে বের হয়ে যেতে বলে। এসময় ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের উপাচার্যের কার্যালয়ের দরজা আটকে রাখতে দেখা যায়।
পরে উপাচার্যের কার্যালয়ের ভেতর থেকে কথা-কাটাকাটির আওয়াজ আসলে সাংবাদিকরা বাধা উপেক্ষা করে উপাচার্যের কার্যালয়ে প্রবেশ করে। হট্টগোলের শব্দ আমবাগান থেকে শোনা গেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ দৌঁড়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে আসেন।
উপাচার্যের কার্যালয়ে প্রবেশ করার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং উপাচার্যকে এ ঘটনা তদন্ত করে দুই দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আল্টিমেটাম দেন।
এদিকে এসব ঘটনার মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে তার কার্যালয় থেকে বের করে দিয়ে সেখানে তালা লাগিয়ে দেয় কর্মকর্তা- কর্মচারীদের মধ্যেকার একটি পক্ষ।
এ বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো: আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাদের এখানকার একদল লোক আমার অফিসে এসে বললেন আপনি আর আজ করবেন না, রুম থেকে বেরিয়ে যান। আমাকে বের করে দিয়ে অফিসের পিয়ন বদরকে বলেছেন রুমে তালা দিতে। এরপর বদর তালা দিয়ে দেয়। এখন প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত নিবে আমি তা মানতে বাধ্য।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখার সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, আজকের যে উদ্ভূত অবস্থা তা বিগত কয়েকদিন ধরে বিভিন্নভাবে প্রসাশনকে একটা পক্ষ জিম্মি করে রাখার চেষ্টা করছে আপনিও (উপাযার্য) জানেন, আমিও জানি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীরা জানে। তারপরে গতকাল অভ্যুত্থানের শক্তি হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আপনাকে বলেছিলো যে স্যার একান্ত যদি কারও কথা শুনতে হয়, কারও কথা রাখতে হয়, যেহেতু বিপ্লবের মেইন স্টেকহোল্ডার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, তার কথামত আপনারা করবেন। সেখানে শুধু আপনি না, প্রো-ভিসি স্যার ও ট্রেজারার স্যারও ছিল। কিন্তু আজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অফিসে যে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রবেশের সম্মুখীন হলো সে জায়গা থেকে আমি মনে করি যে আমাদের আন্দোলনের যে স্প্রিট ছিল সেটা কেউ নিজের করায়াত্ব করে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এখন এই পরিস্থিতিটা তৈরি হয়েছে আমাদের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ আগষ্ট পূর্ববর্তী সময়ে যেভাবে বিচারহীনতার সংস্কৃতি ছিল, আমাদের জুলাই স্প্রিটের অন্যতম ছিল যে আমরা বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসবো। কিন্তু সে জায়গা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরপর তিন-চারটা ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরও সেরকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তার মধ্যে অন্যতম ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের গায়ে হাত তোলা। তার পরবর্তীতে আজকে যে ঘটনাটা ঘটলো আমরা আম বাগানে আছি যেখান থেকে যার শব্দ শুনা যায়, একজন শিক্ষক বা একজন ছাত্রের সাথে যত জোরে কথা বলুক না কেন, তার শব্দ এতো দূরে যাওয়া তো স্বাভাবিক কোন বিষয় না। তাই আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে আপনি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
তিনি বলেন, আমরা আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট চাই। সেখানে যদি কোনো কর্মকর্তা, কোনো ছাত্রনেতা বা আমার কোনো কর্মীও হয় আমি তার ‘গলার নালী টেনে ছিঁড়ে ফেলবো’। আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। সে জায়গায় আপনি যদি অপারগতা দেখান তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমরা আইন হাতে তুলে নিতে বাধ্য হবো।
এ বিষয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক এম এয়াকুব আলী বলেন, উপাচার্য আমাকে ডেকে নেয়ার পর সেখানে এক জুনিয়র টিচার আমার দিকে তেঁড়ে আসে এবং আমার কথা বন্ধ করে। উনি তার বিচার করেন নাই, তাকে সংযত করেন নাই আমি তার বিচার ভাইস চ্যান্সেলের কাছে চাই । ভাইস চ্যান্সেলরের রুমে ডেকে নিয়েছে সুতরাং আমার কথা বলার অধিকার আছে সেখানে ভিসি স্যার আমার কথায় বাধা দেয়া স্টপ করা তার জন্য ঠিক আছে কিন্তু একজন সাধারণ শিক্ষক বিশেষ দলের নেতা সে আমার কথায় বাধা দিয়েছে তেড়ে এসেছে। সেখানে ভিসি স্যার একটি বারও তাঁকে প্রতিহত করেনি। আপনার রুমে একজন সাধারণ শিক্ষক যে অপমান করেছে আপনি ভিসি হিসেবে যদি এর কোন প্রতিকার নিতে না পারেন তাইলে আমি ব্যাপার টা অন্যভাবে আইনগত ভাবে নিবো।
এ ঘটনার প্রেক্ষিতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, প্রক্টরের কাছে সাহেদ কি বলেছে, প্রক্টর রেজিস্ট্রারের নিয়োগ নিয়ে কিছু বলেছে কী না, এই ব্যাপারে প্রো-ভিসি আবার সাহেদকে জিজ্ঞেস করেছে প্রক্টরের সাথে কি কথা হয়েছে এবিষয়ে জানার জন্য সাহেদকে সামনে ডেকে আনা হয়েছে। ওর পিছনে ছাত্রদলের ছেলেরা তাদের বাদ দিয়ে আসতে বলেছি। এই ছিলো বিষয়।
এদিকে উপাচার্যের কার্যালয়ে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রেক্ষিতে এবং সাংবাদিকদের কাজে বাধা দেয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদ। এসময় সংগঠনটি এঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং সাংবাদিকদের কাজে বাধা দেয়ার প্রতিবাদ জানায়।
উল্লেখ্য, বর্তমান রেজিস্ট্রারের অপসারণ ও সেই পদে নতুন যোগ্য ব্যাক্তি নিয়োগের বিষয়ে সোমবার উপাচার্যের সাথে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের মতবিনিময় সভা হয়। সেখানে নেতৃবৃন্দ শিক্ষকদের মধ্য থেকে একজনকে রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব দেয়ার প্রস্তাব জানান এবং উপাচার্য তাতে সম্মতি জানান। তার প্রেক্ষিতে আজ বিএনপিপন্থী কর্মকর্তা কর্মচারীরা উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করে। পরে ছাত্রদল নেতারা উপাচার্যের কার্যালয়ে প্রবেশ করলে আজকের ঘটনা ঘটে।