ছাত্ররাজনীতি ইস্যুতে আবারো উত্তপ্ত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। চলছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলন। চলতি সপ্তাহের শনি ও রবিবার সকল পরীক্ষা বর্জন করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ নিহত হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে দেশের অন্যতম শীর্ষ এই প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়। এতদিন পর হঠাৎই আবার একই দাবিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বুয়েট ক্যাম্পাস।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকলেও গত বুধবার মধ্যরাতে আবারো কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি এবং অন্যান্য সদস্যরা বহিরাগতদের নিয়ে এসে ক্যাম্পাসে হাজির হয়েছেন। যে কারণে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনে নেমেছেন তারা।
বুধবারের এই ঘটনার পরদিনই ক্যাম্পাসে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নে আল্টিমেটাম দেয় তারা। এ দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস পরীক্ষা বর্জন চালিয়ে যাওয়ার কথাও জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বক্তব্য, শিক্ষার্থীদের কিছু দাবি তারা মেনে নিয়েছেন। একই সাথে ঘটনা তদন্তে তারা কমিটিও গঠন করেছেন। কমিটির রিপোর্ট পেয়ে তারা ব্যবস্থা নেবেন।
শিক্ষার্থীদের বক্তব্য এই দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনের মাঠ ছাড়ছেন না তারা। শনিবার দিনভর বিক্ষােভের পর শিক্ষার্থীরা রোববার সকাল থেকে আবারো আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
এর জবাবে ছাত্রলীগ বলছে, শিক্ষার্থীরাদের একটি অংশ ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে এ ধরনের আন্দোলন করছে। এই আন্দোলন স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তির আন্দোলন বলেও মনে করে ছাত্রলীগ।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের বক্তব্য, “ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বুধবার রাতে সেহেরি খেতে যাওয়ার পথে বুয়েট ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়েছিলেন। এটা কোন রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল না।’
শিক্ষার্থীরা জানান, গত ২৮ মার্চ রাত ১টার দিকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানতে পারেন বুয়েটে ছাত্রলীগের বেশ কজন শীর্ষস্থানীয় নেতা এসেছেন এবং তাঁরা ক্যাম্পাসের মেইন গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকেছেন।
তাদের বক্তব্য, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ক্যাম্পাসে অনুপ্রবেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মের বাইরে। নিয়ম অনুযায়ী, রাত দশটার পর ক্যাম্পাসে কোনোপ্রকার অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয়া হয়না।
গত দু’দিনে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করছেন তাতে প্রায় সবগুলো ব্যাচের শিক্ষার্থীরাই অংশ নিয়েছিলো। এই আন্দোলনের কারণে শিক্ষার্থীরা চূড়ান্ত পর্ব সহ শনি ও রবিবারের সব ধরনের পরীক্ষা স্থগিত করেছে।
আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মধ্যরাতে রাজনৈতিক সমাগমের মূল সংগঠকদের বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার এবং হলের (আসন) বাতিলসহসহ ছয় দফা দাবি জানায়।
এসব দাবির মধ্যে আরও আছে, বহিরাগত যে সব রাজনৈতিক সংগঠনে জড়িতরা ক্যাম্পাসে ঢুকেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া, তারা কীভাবে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছে- তার ব্যাখ্যা দেয়া এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক কোনো ব্যবস্থা না নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া।
এদিকে মধ্যরাতে বুয়েটে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রবেশের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর হলের সিট বাতিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শুক্রবার রাতে বুয়েটের রেজিস্টার অধ্যাপক ড. মো. ফোরকান উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এদিকে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের প্রতিবাদ জানিয়ে পালটা সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অসাংবিধানিক, মৌলিক অধিকার পরিপন্থি ও শিক্ষা বিরোধী সিদ্ধান্ত বলে আখ্যা দিয়েছে দেশের বৃহত্তম ছাত্র সংগঠন।
শহীদ মিনারের পাদদেশে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বুয়েট ২১ ব্যাচের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বির আবাসিক হলের বরাদ্দকৃত সিট বাতিল ঘোষণার প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
একই সঙ্গে রাব্বির সিট ফেরত দিতে বুয়েট প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে ছাত্র সংগঠনটি।