লক্ষ্মীপুর জেলার ১২ নম্বর চরশাহী ইউনিয়নের রামপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) চরশাহী ইউনিয়ন শাখার উদ্যোগে ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের আয়োজনে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। তবে মসজিদের ভেতরে রাজনৈতিক নেতাদের ছবি সম্বলিত ব্যানার টানানোর ঘটনায় মুসল্লিদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দেয়।
বুধবার (২৬ মার্চ) আয়োজিত এ ইফতার মাহফিলে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এনির বড় আকৃতির ছবি এবং কর্ণারে জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার ছবি সম্বলিত ব্যানার টানানো হয়। এতে স্থানীয় মুসল্লিরা মসজিদের পবিত্রতা রক্ষার দাবি জানিয়ে আয়োজকদের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মুসল্লি ফেস দ্যা পিপল-কে বলেন, মসজিদ আল্লাহর ঘর, এখানে কোনো রাজনৈতিক প্রচারণা বা নেতাদের ছবি টানানো আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে। আমরা চাই মসজিদ সব ধরনের রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকুক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি ও ১২ নম্বর চরশাহী ইউনিয়ন বিএনপির সেক্রেটারি শাফায়েত হোসেন স্বপন ফেস দ্যা পিপল-কে বলেন, বিষয়টি আমাদের জন্য অপ্রত্যাশিত ছিল। মূলত প্রোগ্রামটি মসজিদের বাইরে পার্শ্ববর্তী একটি স্কুলে করার কথা ছিল। কিন্তু অনিবার্য কারণে তা মসজিদেই করতে হয়েছে। তাড়াহুড়োর কারণে ব্যানারে ছবির বিষয়টি খেয়াল করিনি। তবে আমরা এ বিষয়ে অনুতপ্ত, ভবিষ্যতে সতর্ক থাকবো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রামপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা সানাউল্লাহ প্রথমে বিষয়টি আড়াল করার চেষ্টা করে বলেন, প্রোগ্রামটি মসজিদের ২য় তলায় হয়েছিল, যা মূল মসজিদের অংশ নয়। সেখানে কেউ নামাজ পড়ে না। তবে মসজিদের ২য় তলা কি মসজিদের অন্তর্ভুক্ত নয়—এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আসলে আমি ব্যানারে ছবির ব্যাপারে জানি না। তাড়াহুড়োর কারণে মসজিদে এসে শুধু দোয়া করেছি, ব্যানার খেয়াল করিনি।
মসজিদে ছবি সম্বলিত ব্যানার টানানো ইসলামের দৃষ্টিতে অনুমোদিত কি না, সে বিষয়ে জানতে ফেস দ্যা পিপল এর সঙ্গে কথা বলেন বিশিষ্ট ইসলামী আলোচক ও মাটিরাংগা গোমতী কেন্দ্রীয় শাহী জামে মসজিদের খতিব মুফতী শামীম হোসাইন ফারুকী।
তিনি বলেন, মসজিদ আল্লাহর ঘর—এটি একটি পবিত্র, রহমত ও বরকতময় স্থান। সেখানে ইফতার আয়োজন করা যেতে পারে, তবে ছবি সম্বলিত ব্যানার টানিয়ে ইফতার মাহফিল আয়োজন করা সম্পূর্ণরূপে অনুচিত এবং ইসলামসম্মত নয়।
তিনি হাদিসের আলোকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, সহীহ বুখারীর একটি বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সফর থেকে ফিরে এসে দেখেন, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার ঘরে ছবিযুক্ত একটি পর্দা টাঙানো রয়েছে। তিনি তা ছিঁড়ে ফেলেন এবং ছবি সংবলিত বস্তু সম্পর্কে ভয়াবহ শাস্তির সতর্কবার্তা প্রদান করেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৯৫৪)
তিনি আরও বলেন, হাদিসে ছবি ব্যবহারের ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। সুতরাং, মসজিদে ছবি সম্বলিত কোনো কিছু টানানো ইসলামসম্মত নয়। যারা এরকম করে ফেলেছেন, তারা যেন আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকেন।