বুধবার, ১২ মার্চ, ২০২৫

মাদকের প্রভাব ও আমাদের দ্বায়বদ্ধতা

-বিজ্ঞাপণ-spot_img

আজ থেকে দুই তিন দশক আগেও আমাদের সমাজে যারা মাদক গ্রহণ করতো তাদেরকে টাকার বিনিময়ে মাদক সংগ্রহ করতে অনেক বেশি বেগ পেতে হতো। কেননা এলাকার নির্দিষ্ট জায়গা ব্যাতিত যেখানে সেখানে মাদক পাওয়া যেত না।

সমাজে খুব কম সংখ্যক ব্যাক্তিকে মাদক গ্রহণকারী নামে চিনতো। কী এক অজানা কারণে(মাদকের বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ না করার জন্য)গত দুই দশকে সমাজের চিত্র পাল্টে গেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের এমন কোন গ্রাম পাওয়া মুশকিল হব্ব যেখানে রাস্তার টং দোকান গুলিতেও মাদক পাওয়া যাবে না। সরকারি-বেসরকারি কোন ধরনের প্রচার, প্রচারণা, বিজ্ঞাপন ছাড়াই সর্বস্তরে মাদক ছড়িয়ে পরার নিশ্চয়ই যৌক্তিক(?) কারন রয়েছে। এসব কারণ উদঘাটন করে সমাজ থেকে মাদক চিরতরে নির্মুল করা কাররই উল্লেখযোগ্য ভুমিকা নেই। কেননা এর সঙ্গে (সাময়িক ভাবে) অনেক মানুষের স্বার্থ জড়িত।

যারা মাদক ব্যবসার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত তারা তো সরাসরি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন পাশাপাশি যারা মাদক কারবারিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার দায়িত্বে রয়েছেন তাদের একটা বড় অংশও পরোক্ষভাবে আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে আসতেছেন। কিছু মাদক কারবারী আইনের নিকট ধরা পরে কারাগারে গেলেও কিছুদিন পরেই কারাগারের বাইরে এসে দ্বিগুণ শক্তিতে সমাজে মাদক ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এতে করে মাদকের পরিমাণ, মাদক গ্রহনকারী, এবং মাদক কারবারীর সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সমাজের সবাই যদি একবার চিন্তা করি যে, যে মাদকের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে শুরু করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, র‍্যাপিড একশন ব্যাটেলিয়ন, বি জি পি, আনসার, কোস্ট গার্ড, স্কুল – কলেজ, মাদ্রাসা , বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, উপসনালয় এবং কি পুরো সমাজই ভুমিকা রাখছে ( এসব প্রতিষ্ঠান প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাদকের কুফল নিয়ে কথা বলে মাদকের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করে) সেখানে দিনদিন মাদক গ্রহন কারীর সংখ্যা কমে না গিয়ে উল্টো বাড়াছে কেন? নিশ্চয়ই এতগুলো প্রতিষ্ঠানের ভুমিকা যথাযথ নয়।

সমাজে যাচ্ছেতাই ভাবে মাদক ছড়িয়ে পরাতে আমাদের সকলের কি পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে সেটা নিশ্চয়ই কোন ক্যালকুলেটর দিয়ে হিসাব কষা সম্ভব নয়। গত পরশু গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার জামালপুর গ্রামে পুত্রের মাদক গ্রহণের যন্ত্রণা সয্য করতে না পেরে ষাটোর্ধ আব্দুর রশিদ নামে এক ব্যাক্তি কুড়াল দিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় নিজের ছেলে কাওসার কে নৃশংস ভাবে হত্যা করে। এটা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটা সমাজের জন্য একটা রেড এলার্ট। যে এলার্ট কয়েক বছর আগেই ঐশী পুরো সমাজকে দিয়েছিলো। মাদকের কুফল কোন পর্যায়ে পৌছলে নিজ বাবার হাতে নিজ সন্তান খুন, মেয়ের হাতে পিতা মাথা খুন ( ঐশী কর্তৃক তার পিতা মাহফুজুর রহমান মাতা সপ্না রহমান) স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন। এত কিছুর পরেও কি এই সমাজ ঘুমিয়ে থাকতে পারে? মাদক সমস্যা জাতীয় পর্যায়ে চলে গেছে। সমাজ থেকে যেকোনো উপায়ে হলেও মাদক কে নির্মুল করতে না পারলে দীর্ঘ মেয়াদে এর কুফল আমাদের সবাইকে ভোগ করতে হবে।

এবার একটা প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলি। আচ্ছা কোন স্কুল কর্তৃপক্ষ যদি ঘোষণা দেয় যে, পরীক্ষার সময় যে স্কুলশিক্ষক যত বেশি পরিমাণ নকল জব্দ করবে সেই শিক্ষক ততবেশি পদোন্নতি পাবেন। এতে করে ঐ স্কুলের শিক্ষকদের টার্গেটই থাকবে পরীক্ষার সময় কত বেশি পরিমাণ নকল জব্দ করা যায় সেটা ছাত্রদের নকল করার পরিবেশ তৈরী করে হলেও। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষের ঘোষণা টা যদি এমন হয় যে পরীক্ষার সময় কোন শিক্ষার্থীর যেন নকল করতেই না হয় সেটা সবচেয়ে ভালো হয়। মাদকের পরিমাণ, মাদক জব্দের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পদোন্নতির সিস্টেম থেকে বের হয়ে কি করে সমাজ থেকে মাদক চিরতরে নির্মুল করা যায় সেই দিকে মনোনিবেশ করা জুরুরি। আমরা কেউ সমাজের বাইরে নয়। এই সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর মাশুল আমাদের সবাইকেই দিতে হবে। আজ হয়তো আমার প্রতিবেশী মাদক দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আগামীকাল আমার পরিবার মাদক দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যে অপরাধ মরণব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়ার সময় আমরা নির্জিব, নির্লিপ্ত ছিলাম তা আজ বা আগামীকাল যে আমাদেরকে তা স্পর্শ করবে, আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরবে সেটা বলার জন্য নিশ্চয়ই গণক হওয়ার প্রয়োজন পড়বে না।

-প্রকোশলী এম মোকাদ্দেছ বিল্লাহ কাওছার। আই ই ইবি ৪০৫৫৭

শেয়ার করুন

সর্বশেষ নিউজ

নারী নির্যাতনের মামলায় কারাগারে এসপি, ভিডিও ধারণ করায় সাংবাদিকদের ওপর হামলা

নাটোরে নারী নির্যাতনের মামলায় ময়মনসিংহ রেঞ্জে সংযুক্ত বরখাস্তকৃত সাবেক পুলিশ সুপার এসএম ফজলুল হককে জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে আদালত। আদালত থেকে...

একই সঙ্গে আইনসভা ও গণপরিষদ নির্বাচন সম্ভব: নাহিদ ইসলাম

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন,  জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ বিলোপের পাশাপাশি নতুন সংবিধান প্রণয়নে আগামী নির্বাচনে একই সঙ্গে আইনসভা ও গণপরিষদ...

সহপাঠীকে ধর্ষণ ও গর্ভপাত করানোর অভিযোগে কলেজছাত্র গ্রেপ্তার

ঝালকাঠির রাজাপুরে সহপাঠীকে ধর্ষণ ও গর্ভপাত করানোর অভিযোগে কাজী ফাহাদ (১৮) নামে এক কলেজ ছাত্রকে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার রাতে রাজাপুর থানায় ভুক্তভোগী ছাত্রীর...

ধর্ষণবিরোধী পদযাত্রার নামে নারীদের ঢাল বানিয়ে পুলিশের ওপর হামলা—উসকানিমূলক তাণ্ডব

ধর্ষণবিরোধী পদযাত্রার নামে একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী পুলিশের ওপর পরিকল্পিত হামলা চালিয়েছে। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) বিকেল ৩টা ৩৫ মিনিটে নারী-পুরুষসহ ৬০-৭০ জনের একটি বিক্ষোভকারী দল...

সম্পর্কিত নিউজ

নারী নির্যাতনের মামলায় কারাগারে এসপি, ভিডিও ধারণ করায় সাংবাদিকদের ওপর হামলা

নাটোরে নারী নির্যাতনের মামলায় ময়মনসিংহ রেঞ্জে সংযুক্ত বরখাস্তকৃত সাবেক পুলিশ সুপার এসএম ফজলুল হককে...

একই সঙ্গে আইনসভা ও গণপরিষদ নির্বাচন সম্ভব: নাহিদ ইসলাম

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন,  জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ বিলোপের পাশাপাশি...

সহপাঠীকে ধর্ষণ ও গর্ভপাত করানোর অভিযোগে কলেজছাত্র গ্রেপ্তার

ঝালকাঠির রাজাপুরে সহপাঠীকে ধর্ষণ ও গর্ভপাত করানোর অভিযোগে কাজী ফাহাদ (১৮) নামে এক কলেজ...
Enable Notifications OK No thanks