স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন,মানসিক স্বাস্থ্যকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। দেশের মোট জনসংখ্যার ১৮ দশমিক ৪ ভাগ পূর্ণ বয়স্ক প্রায় ৩ কোটি মানুষ এখন মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া আরো ১৩ ভাগ শিশু কিশোর মানসিক রোগে আক্রান্ত।
বুধবার(২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য রিপোর্ট ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য কর্মকৌশল পরিকল্পনা ২০২০-৩০’র অবহিতকরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি সাধনা ভগবত, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক( প্রশাসন) প্রফেসর আহমেদুল কবীরসহ অন্যন্য কর্মকর্তারা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশে বর্তমানে বছরে ১০ থেকে ১৪ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করছে যা ভাববার মতো একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে চিকিৎসা সেবা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে দক্ষ জনবল বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, বিভিন্ন সমস্যার কারণে অনেকে চাকরি হারায়, দেশের প্রোডাক্টিভিটি কমে যায়,অপরাধের মাত্রা বাড়ে এমনকি উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বাড়ে এই মানসিক স্বাস্থ্যের কারণে।
জাতীয় অর্থনৈতিক বাজেটে মানসিক স্বাস্থ্যের উপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যে বাজেট মাত্র দশমিক পাঁচ শতাংশ যা অনেক কম। এটি কিভাবে বাড়ানো যায় সে চেষ্টা করা হবে। আরেকটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, শতকরা ৯২ ভাগ মানুষ মানসিক চিকিৎসা সেবার বাইরে রয়েছে। এটি নিয়েও আমাদেরকে আরো বেশি কাজ করতে হবে।
মানসিক সমস্যার বিশ্ব পরিসংখ্যান তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা জানি মানসিক সমস্যায় বিশ্বে বহু লোকের প্রাণহানি ঘটে। প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ১০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। বাংলাদেশে বছরে ১০ থেকে ১৪ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে মানসিক রোগে।
সরকারি পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে সরকার নানামুখী ব্যবস্থা নিয়েছে। পাবনা মানসিক হাসপাতালকে ২০০ বেড থেকে ৪০০ বেডে উন্নীত করাসহ নানাবিধ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় কাউন্সিলিং করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রায় ২০০ উপজেলায় থাকা এনসিডি কর্নার রয়েছে, সেখানেও এই কাউন্সিলিং করার ব্যবস্থা থাকছে। তবে অনেক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। শুধু যে সুযোগ-সুবিধার কারণে সমস্যা হচ্ছে, তা কিন্তু নয়। সচেতনতায়ও এখনো নানা ঘাটতি রয়েছে।
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে পরিবার থেকেই পরিবর্তন আনার ওপর গুরুত্ত্ব আরোপ করেন সূচনা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অনুষ্ঠানের কী-নোট বক্তা প্রধানমন্ত্রী কন্যা সায়মা ওয়াজেদ।
প্রধানমন্ত্রী কন্যা বলেন, একজন মানুষের মানবিকতা দিয়ে আরেকজন মানুষের মানসিক কষ্টের কথা বিবেচনা করলে মানসিক স্বাস্থ্যসেবাহীন মানুষগুলো আরেকটু ভালো সেবা পাবেন। দেশে এখন মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে প্রয়োজনীয় সবরকম আইন করা হয়েছে। কর্ম পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এখন সেগুলো কাজে প্রয়োগ করতে হবে।
সায়মা ওয়াজেদ বলেন, আমাদের শারীরিক চিকিৎসা নানা কর্মকৌশল থাকলেও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ছিল না। এ জন্য নানা পরিকল্পনা আমরা করেছি। মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য একটা উন্নত পরিবেশ দরকার। শুধু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চাইলেই হবে না, আমাদের সবার এগিয়ে আসতে হবে। পরিবার থেকেই এটি চালু করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে উন্নতি করতে চাইলে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। এই খাতে মাত্র দশমিক ৫ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বরাদ্দের ৬০ ভাগই খরচ হচ্ছে ট্রেনিংসহ অন্যান্য কাজে। তাই বরাদ্দ বাড়ানো খুবই জরুরি।
জাতীয় মানসিক ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালেন সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ সভায় নানারকম তথ্য উপাত্ত তুলে ধরে বলেন, এই কর্মকৌশল বাস্তবায়নে একটা বডির প্রয়োজন। যেটি বিএমডিসির মাধ্যমে হবে।
তিনি জানান,মানসিক স্বাস্থ্য শুধু স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজ নয়, স্কুল-কলেজের শিক্ষকদেরও অনেক দায়িত্ব রয়েছে। আমাদের মনরোগ বিশেষজ্ঞ দরকার।কিন্তু এগুলোতে এখনো ঘাটতি রয়েছে। গত দুই বছরে আত্মহত্যা বেড়েছে। কিভাবে এটি রোধ করা যায় সেই কৌশল নিয়ে কাজ করতে হবে।