ববি প্রতিনিধি: পুরো নাম নাজমুন্নাহার স্বর্ণা, জন্ম থেকে শরীরের নিচের অংশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত । তাতে কি, তার রয়েছে অদম্য শিক্ষাশক্তি। হেঁটে চলার শক্তি না থাকায় গুচ্ছের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাকেন্দ্রে এসেছিলেন মায়ের কোলে চড়ে।
ছোটথেকেই মায়ের কোলে চড়েই সব কাজ।পেরিয়েছেন স্কুল-কলেজের গণ্ডি। আজ তাকে ঘিরেই ছিল পুরো পরীক্ষা কেন্দ্রের দৃষ্টি।
২৭ মে (শনিবার) ২০২২-২৩ সেশনের গুচ্ছের ‘গ’ ইউনিটের পরীক্ষায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে অংশ নেন স্বর্ণা। মায়ের কোল থেকে নামার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসি সদস্যদের সহায়তায় স্ট্রেচার চেয়ার করে স্বর্ণা পৌঁছান পরীক্ষা কক্ষে।
সরেজমিনে জানা যায়, তিন বোনের মধ্যে স্বর্ণা সবার ছোট। পিতা বৃদ্ধ শাহাদাৎ হোসেন হাওলাদার একজন দিনমজুর। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ, মা মনিজা বেগম গৃহিণী। স্বর্ণা উচ্চমাধ্যমিক শেষ করেছেন করেছেন স্বরূপকাঠি সরকারি কলেজ থেকে। এসএসসিতে তার জিপিএ ৪.৭৫ এবং এইএসসিতে ৪.৫৯।
মা মনিজা বেগম বলেন, মেয়ে এমন শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হলেও ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি প্রবল আগ্রহ তার। ওর স্বপ্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবে। জন্ম থেকেই স্বর্ণার শরীরের নিচের অংশ অচল। ছোটবেলা থেকে আমি কোলে করে স্কুল-কলেজে নিয়ে যেতাম। আজও আমি কোলে করে তাকে নিয়ে এসেছি ভর্তি পরীক্ষা দেয়ানোর জন্য। স্কুল কলেজ সবজায়গায় পরীক্ষায় সে ভালো ফলাফল করত। ছোটকাল থেকেই ও পড়াশোনায় মনোযোগী। ওর বাপের বয়স হয়েছে তিনি অসুস্থ, আমারও বয়স হয়েছে আগের মত আর শক্তি নেই। সবমিলিয়ে চলছে কষ্টের উপরে। আল্লাহ যদি মেয়েটার স্বপ্ন পূরণ করে এতেই আমাদের শান্তি।’
কথা হয় স্বর্ণার সঙ্গেও। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি আগ্রহের কথা। আমার বন্ধুরা অনেকে প্রথম প্রথম ভিন্নভাবে নিলেও আস্তে আস্তে তারা আমাকে সাহায্য করা শুরু করে। আমার সংগ্রামের সারথি আমার মা। মায়ের কোলে উঠেই আজকে আমার এই পর্যন্ত আসা।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. খোরশেদ আলম বলেন, ‘আজকে একজন ভর্তি পরীক্ষার্থী তার মায়ের কোলে উঠে পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন। আমরা বিএনসিসির সদস্যদের সহায়তায় তাকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেই ওই কক্ষের শিক্ষকেরা পরীক্ষা দেয়ার জন্য সার্বিক বিষয়ে সহযোগিতা করেছেন। পরীক্ষা শেষে আমরা তার মায়ের কাছে পৌঁছে দেই। এতটা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অদম্য ইচ্ছা শক্তি দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন ওই শিক্ষার্থী। তার স্বপ্ন যেন পূরণ হয় সেই আশা করছি।’