আগামী বছর থেকে প্রচলিত মাহফিল করবেন না বলে অফিসিয়ালি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইসলামিক স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ। তিনি বলেছেন, মাহফিল আমাদের সমাজে অনেক বড় ভূমিকা রাখছে। মানুষের মাঝে দ্বীনের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে এসব দ্বীনি আয়োজন। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার শরীর এত চাপ নিতে পারছে না। তাছাড়া ফাউন্ডেশন, মাদরাসাসহ প্রচুর কাজ থাকার কারণে মাহফিল করা প্রচণ্ড কষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া মাহফিলের অতিরিক্ত চাপের কারণে ফাউন্ডেশনসহ অন্যান্য কাজে বিঘ্ন ঘটে।
সম্প্রতি একটি মাহফিলের প্রশ্নোত্তর পর্বে এই তথ্য জানিয়েছেন তিনি।
শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, মাহফিল না করলেও আসসুন্নাহ ফাউন্ডেশনের সার্বিক আয়োজনে মসজিদভিত্তিক হালাকা করা হবে। জেলাভিত্তিক বড় কোনো মসজিদে এর আয়োজন হবে। সেখানে সবাই উপস্থিত থাকবেন। এসব হালাকার জন্য এলাকাবাসীর কোনো টাকা খরচ করতে হবে না। ব্যানারসহ টুকটাক যা খরচ আছে এগুলো ফাউন্ডেশন থেকে করা হবে।
শায়খ আহমাদুল্লাহ বাংলাদেশের স্বনামধন্য ইসলামী ব্যক্তিত্ব। বিদগ্ধ আলোচক, লেখক ও খতীব। ইসলামের খেদমতে তিনি নানামুখী কাজ করেন। লেখালেখি, গবেষণা ও সভা-সেমিনারে লেকচারসহ নানামুখী দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করেন। উন্মুক্ত ইসলামিক প্রোগ্রাম ও প্রশ্নোত্তরমূলক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ এবং টিভি অনুষ্ঠানে সময় দেওয়াসহ বহুমুখী সেবামূলক কাজে সপ্রতিভ গুণী ও স্বনামধন্য এই আলেমে দীন। দেশে-বিদেশে শিক্ষা, সেবা ও দাওয়াহ— ছড়িয়ে দিতে শায়খ আহমাদুল্লাহ প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন’।
শায়খ আহমাদুল্লাহর জন্ম ১৫ ডিসেম্বর ১৯৮১ সালে লক্ষ্মীপুর জেলার বশিকপুরে। বাবার নাম মোহাম্মাদ দেলোয়ার হোসেন, মায়ের নাম মোসাম্মাত দেলোয়ারা বেগম। বাবা ব্যবসায়ী ছিলেন ও মা গৃহিণী। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। শায়খ আহমাদুল্লাহ তিন পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক।
তার পড়ালেখার হাতেখড়ি মমতাময়ী মায়ের হাতে। প্রাথমিক পড়াশোনা বশিকপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর ভর্তি হন কওমী মাদরাসায়। নোয়াখালীর একাধিক মাদরাসায় কয়েক বছর পড়ার পর তিনি ভর্তি হন হাতিয়ার ফয়জুল উলূম মাদরাসায়। সেখানে প্রথিতযশা আলেমে দীন মুফতী সাইফুল ইসলাম (রহ.)-এর সান্নিধ্য ও ছাত্রত্ব লাভের সুযোগ তৈরি হয়। এরপর তিনি দেশের সর্ববৃহৎ দীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল উলূম হাটহাজারী মাদারায় ভর্তি হন। কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাক) থেকে (সানুবিয়্যা) উচ্চমাধ্যমিকে পরীক্ষা দিয়ে দশম স্থান, (ফযীলত) স্নাতকে তৃতীয় স্থান ও ২০০১ সালে দাওরায়ে হাদীসে সম্মিলিত মেধাতালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। দাওরায়ে হাদীস শেষ করে খুলনা দারুল উলূম থেকে ইফতা সম্পন্ন করেন।
লেখাপড়া শেষ করে মিরপুরের দারুর রাশাদে শিক্ষকতায় যোগ দেন। ২০০৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সেখানেই কর্মরত ছিলেন। মাঝে এক বছর মিরপুরের আরজাবাদ মাদরাসায়ও হাদীসের শিক্ষকতা করেছেন। পাশাপাশি ২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করেন মিরপুরের বায়তুল ফালাহ জামে মসজিদে। ২০০৯ সালে সুযোগ আসে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কাজ করার। আরবী ভাষায় বিশেষ দক্ষতার কারণে ডাক পান মধ্যপ্রাচ্যে। সৌদি আরবের পশ্চিম দাম্মাম ইসলামিক দাওয়াহ সেন্টারে যোগ দেন। একজন প্রীচার ও ট্রান্সলেটর হিসেবে সেখানে দীর্ঘ প্রায় দশ বছর কাজ করেন। আরবদের পাশাপাশি বাংলাদেশিদের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করেন তিনি।
শায়খ আহমাদুল্লাহ প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন’। শিক্ষা, সেবা ও দাওয়াহ—তিন বিভাগে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
শুদ্ধ চিন্তা ও বিশুদ্ধ জ্ঞান চর্চার অংশ হিসেবে মূল ধারার বেশিরভাগ টেলিভিশন চ্যানেল এবং ওয়াজ মাহফিলসহ বিভিন্ন উন্মুক্ত প্ল্যাটফরমে লেকচার দেন তিনি।
ইসলাম নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি লেখালিখিও করেন শায়খ আহমাদুল্লাহ। তার লেখা ‘রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সকাল সন্ধ্যার দু’আ ও যিকর’ পুস্তিকা এবং ‘পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাত পরবর্তী দু’আ ও যিকর’-এর কার্ড প্রায় তিন লক্ষাধিক কপি এ যাবত (২/২০২২) বিতরণ করা হয়েছে। এই পর্যন্ত দাওয়াহ ও গবেষণা বিষয়ে প্রায় শ’খানেক প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখেছেন। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে তার লেখা প্রকাশিত হয়। আরবী ভাষাতেও প্রকাশিত হয়েছে তাঁর অনেক প্রবন্ধ।
শায়খ আহমাদুল্লাহ বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের ভূমিপল্লী জামে মসজিদের খতীবের দায়ত্ব পালন করছেন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ইতোমধ্যেই তিনি জাপান, ভারত, আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের একাধিক আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন।