রাশিয়া, চীন, সিঙ্গাপুর, ভারত ও থাইল্যান্ড—এই পাঁচ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গত দুই বছরে মিয়ানমারে অন্তত ১০০ কোটি মার্কিন ডলারের অস্ত্র ও সরঞ্জাম রপ্তানি করেছে।
গতকাল বুধবার রাতে মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতিবিষয়ক জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার টম অ্যান্ড্রুজ সুইজারল্যান্ডের জেনেভা ও যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে একযোগে এসংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কাছে ওই অস্ত্র বিক্রিকে ‘মৃত্যু বাণিজ্য’ হিসেবে অভিহিত করেছেন অ্যান্ড্রুজ। তিনি বলেন, মিয়ানমারের জনগণের বিরুদ্ধে দেশটির সামরিক বাহিনীর নৃশংস অপরাধের প্রমাণ থাকার পরও জেনারেলরা উন্নত অস্ত্র, যুদ্ধবিমানের খুচরা যন্ত্রাংশ, কাঁচামাল ও দেশীয় অস্ত্র উৎপাদনের সরঞ্জাম পাচ্ছেন। বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞার কার্যকর বাস্তবায়ন না থাকায় সহজেই এসব রপ্তানি সম্ভব হয়েছে।
জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার টম অ্যান্ড্রুজ বলেন, সুসংবাদটি হলো, আমরা এখন জানি যে এই অস্ত্রগুলো কারা সরবরাহ করছে। জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোকে এখন উদ্যোগ নিতে হবে এবং অস্ত্র প্রবাহ বন্ধ করতে হবে।
অ্যান্ড্রুজ আরও বলেন, রাশিয়া ও চীন এখনো মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে উন্নত অস্ত্র সরবরাহ করছে। মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের পর জান্তাকে রাশিয়া ৪০ কোটি মার্কিন ডলারের এবং চীন ২৬ কোটি মার্কিন ডলারের অস্ত্র সরবরাহ করেছে। অস্ত্র সরবরাহ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন। তবে সিঙ্গাপুরের বাইরে কাজ করা অস্ত্র ব্যবসায়ীরা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিপজ্জনক অস্ত্র কারখানার (সাধারণত কাপাসা নামে পরিচিত) কার্যক্রম পরিচালনায় ভূমিকা রাখছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিঙ্গাপুরের কয়েক ডজন সংস্থা থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে ২৫ কোটি ৪০ লাখ ডলারের অস্ত্র সরবরাহ করেছে। অস্ত্র ব্যবসায়ী সিঙ্গাপুরের ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছে।
সিঙ্গাপুর সরকারকে মিয়ানমারে অস্ত্র সরবরাহ না করার নীতি বাস্তবায়নের আহ্বান জানান টম অ্যান্ড্রুজ। তিনি বলেন, সিঙ্গাপুর যদি অস্ত্রের চালান আটকে দিতে পারে, তাহলে মিয়ানমারে জান্তার যুদ্ধাপরাধ করার ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, থাইল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে মিয়ানমার বাহিনীকে দুই কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলারের অস্ত্র সরবরাহের তথ্য পাওয়া গেছে।
এছাড়াও ভারতভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো মিয়ানমারের জান্তাকে পাঁচ কোটি ১০ লাখ ডলারের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে।