সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর আফিমের চাষ বেড়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে। ২০২১ সালের মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের পর আফিম পপি চাষ বেড়েছে বলে জানা যায়। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য।
জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক অফিসের (ইউএনওডিসি) মতে, ‘২০১৪ থেকে ২০২০ সালে মিয়ানমারে অবৈধ ফসল উদপাদনের হার যেখানে কমছিল ২০২১ সালে তা আবার বাড়তে থাকে’।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকে প্রথম পূর্ণ আফিম চাষের মৌসুমে ইউএনওডিসি তথ্য সংগ্রহ শুরু করে। তথ্য মতে, ২০২১ সালে মিয়ানমারে আফিম পপি চাষের পরিমাণ ৩৩% বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০২২ সালে তা ৪৪% বেড়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। সংখ্যার হিসাবে, মিয়ানমারে গত বছর ৪০,০০০ হেক্টরেরও (৯৯,০০০ একর) বেশি জমিতে প্রায় ৭৯০ মেট্রিক টন আফিম চাষ করা হয়েছে।
মিয়ানমার আফিম জরিপ ২০২২ এর প্রকাশনার ভিত্তিতে ইউএনওডিসি এক বিবৃতে বলে, ‘২০২২ সালের পরিসংখ্যানগুলো নিশ্চিত করে যে মিয়ানমারের আফিম চাষের উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ চলছে’।
ইউএনওডিসি আঞ্চলিক প্রতিনিধি জেরেমি ডগলাস বলেন, ‘মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর দখলের পর অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা এবং শাসনের সমন্বিত অবনতি বর্তমান পরিস্থিতি তৈরি করেছে। যার ফলে দেশটিতে আফিম চাষ বাড়ছে’।
তিনি আরো বলেন, ‘উত্তর শান এবং সীমান্ত রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে প্রায়ই সংঘাত ঘটে। এসব এলাকায় কৃষকদের কাছে আফিম চাষে ফিরে যাওয়া ছাড়া অন্য বিকল্প ছিল না’।
থাইল্যান্ড, লাওস এবং মিয়ানমার সীমান্তের মিলিতস্থল, যা গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল নামে পরিচি্ত, দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ মাদক ব্যবসার জন্য একটি লাভজনক কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। বর্তমানে মিয়ানমারে আফিম চাষের উর্ধ্বগতি বিশ্ববাজারের সাথে এই অঞ্চলের পুনরায় সংযোগ স্থাপনের ইঙ্গিত দেয় বলে মনে করছে জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের জরিপ অনুসারে, মিয়ানমারে কৃত্রিম ওষুধ উৎপাদনের সাথে সাথে আফিমের উৎপাদন হারও বাড়ছে। এতে করে দেশটির এমনকি পার্শ্ববর্তী অঞ্চলেও মাদকের বাজার যথেষ্ট মুনাফাসহ প্রসারিত হচ্ছে।
জরিপ অনুসারে, ‘আঞ্চলিক হিরোইন বাণিজ্যের মূল্য ১০ বিলিয়ন ডলার যেখানে মিয়ানমারের সামগ্রিক আফিম অর্থনীতির মূল্য ২ বিলিয়ন ডলার বলে ধারণা করা হয়।
আফিমের গড় ফলন হেক্টর প্রতি ২০ কেজি (৪৪ পাউন্ড) বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নত চাষ কৌশল এবং সারের ব্যবহারের ফলে আফিমের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে।
জাতিসংঘের জরিপে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে মায়ানমার কর্তৃপক্ষের পপি নির্মূল করার প্রচেষ্টার মাঝেও ভাটা পড়েছে। সাধারণত পুলিশ এবং সামরিক বাহিনী দ্বারা পরিচালিত হতো এসব অভিযান। ২০২১ সালের তুলনায় যা ১,৪০৩ হেক্টর (৩,৪৬৬ একর) কমে এসেছে। সংখ্যার হিসেবে ৭০ শতাংশ কমে এসেছে অভিযানের হার।
মিয়ানমারে অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিবেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্বল অর্থনীতি, মুদ্রাস্ফীতি এবং আফিমের জন্য অতি উচ্চ চাহিদা কৃষক পরিবারগুলোকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করছে।
ভৌগলিকভাবে আফিম চাষের বিখ্যাত গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গালের অংশ হওয়ায় মিয়ানমারে উৎপাদিত আফিমের চাহিদা বেশ বড়। সরকারের আফিম বিরোধী অভিযান কমে আসায় কৃষকরা পুরোপুরি সুবিধা আদায় করতে সক্ষম।
যদিও আফিম চাষীদের এই বাড়তি আয় সরাসরি ক্রয় ক্ষমতার উন্নতি করতে পারেনি। দেশটি ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, মুদ্রার অবমূল্যায়ন এবং সার, জ্বালানী এবং পরিবহনের ক্রমবর্ধমান ব্যয় পুরো জীবনযাত্রাকে এখনও ব্যহত করছে।