চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব, আধিপত্য বিস্তার, দখল বাণিজ্য ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে গত এক বছরে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত পাঁচজন নেতা-কর্মী। মারামারি ও সংঘর্ষে আহত হয়েছেন দুই শতাধিক কর্মী-সমর্থক। এছাড়া দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে বহিষ্কার করা হয়েছে একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতাকেও।
বহিষ্কারপ্রাপ্ত নেতারা হলেন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিন, উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব গাজি নিজাম উদ্দিন, বারইয়ারহাট পৌর বিএনপির সাবেক আহবায়ক দিদারুল আলম মিয়াজী, থানা যুবদলের আহবায়ক মো. কামাল উদ্দিন ও জোরারগঞ্জ থানা যুবদলের আহবায়ক সিরাজুল ইসলাম।
এদিকে মিরসরাই উপজেলা, বারইয়ারহাট ও মিরসরাই পৌর কমিটি অনুমোদনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব গঠনের চেষ্টা করা হলেও সাবেক যুগ্ম আহবায়ক নুরুল আমিনের অনুসারী ও প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরও তীব্র হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত এক বছরে সংঘর্ষ, খুন-খারাবি ও দফায় দফায় রক্তক্ষয়ী ঘটনা ঘটেছে।
উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলোর মধ্যে রয়েছে, গত ২৬ মার্চ বারইয়ারহাটে বিএনপির দু’গ্রুপের সংঘর্ষে পথচারী মো. জাবেদ নিহত হন এবং যুবদলকর্মী সুমন ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন। একই ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হন। এছাড়া ১০ অক্টোবর বারইয়ারহাট পৌর বাজারে কুপিয়ে হত্যা করা হয় বিএনপি নেতা কবির আহম্মদকে। এ ঘটনায় তার ছেলে দিদারুল আলমসহ আরও কয়েকজন আহত হন। নিহত কবির আহম্মদ ছিলেন হিঙ্গুলী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি।
চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি মিরসরাই স্টেডিয়ামে বাণিজ্য মেলা চলাকালে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে নিহত হন স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা জাহেদ হোসেন মুন্না। ১ সেপ্টেম্বর অর্থনৈতিক অঞ্চলে গণপিটুনিতে মারা যান বিএনপি নেতা মো. রফিক। এছাড়া গত ৫ আগস্ট বিজয় মিছিল শেষে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হন যুবদল কর্মী ছায়েদ আলম। এক সপ্তাহ পর তার খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় একাধিক মামলা হলেও অধিকাংশ আসামি এখনও গ্রেপ্তার হয়নি। কিছু আসামি কারাগারে গেলেও অনেকেই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারের। তবে মিরসরাই ও জোরারগঞ্জ থানা থেকে জানা যায়, বেশ কিছু আসামিকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে এবং বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।