প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মেয়েদের দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক করা হয়েছে। আমি মনে করি, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান দুটি মূল উপাদান-যা নারীর ক্ষমতায়ন করতে পারে। তাই নারী শিক্ষার ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে।
ব্রিকস সম্মেলন উপলক্ষে স্যান্ডটন কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত এক মধ্যাহ্নভোজে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
ব্রিকসের বর্তমান চেয়ারম্যান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাপোসা ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে জোহানেসবার্গে আসা রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সম্মানে এ মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন। কর্মসূচিতে শেখ হাসিনা এই অঞ্চলের নারী ও বালিকাদের পরিবর্তনের কারিগর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি গ্লোবাল সাউথ নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
দেশে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরে মেয়েদের তালিকাভুক্তি ৯৯ শতাংশ বেড়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, মেয়ে-ছেলে স্কুলে তালিকাভুক্তির অনুপাত ৫৩:৪৭-এ উন্নীত হয়েছে। গ্লোবাল সাউথে আমাদের নারী ও বালিকাদের পরিবর্তনের কারিগর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এসডিজি ৫ অর্জনের জন্য আমাদের সবার হাতে হাত রেখে চলা উচিত।
‘প্রায় ২৫ মিলিয়ন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন উপবৃত্তি এবং বৃত্তি কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। উপবৃত্তির অর্থ সরাসরি তাদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মা অথবা বৈধ অভিভাবকদের কাছে পৌঁছাচ্ছে’, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকারপ্রধান আরও বলেন, ২০১০ সাল থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হয়েছে এবং নারী শিক্ষার ক্রমবর্ধমান হারের ফলে বাল্যবিবাহের হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষায় এখন শিক্ষক পদের ৬০ শতাংশ নারীদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে এবং সরকারি চাকরিতে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত রয়েছে।
তিনি বলেন, আমি লিঙ্গ সমতার দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি আপনাদের প্রতিশ্রুতিতে সত্যিই অনুপ্রাণিত বোধ করছি। নারীর সমঅধিকার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশে গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে প্রণীত সংবিধানে নারীদের সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সংবিধানের ২৮ (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে : ‘রাষ্ট্র ও জনজীবনের সব ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অধিকার থাকবে।’ আমাদের জাতীয় সংসদে একটি অনন্য নজির রয়েছে যেখানে আমাদের স্পিকার, সংসদের নেতা, বিরোধী দলীয় নেতা ও সংসদের উপনেতা সবাই নারী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার নারীদের জন্য সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক, বেসামরিক প্রশাসনের উচ্চ পদ, সশস্ত্র বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েরর ভাইস চ্যান্সেলর ও আরও অনেক কিছুর দরজা খুলে দিয়েছে। জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার সংস্থায় নারীদের জন্য ৩০ শতাংশ আসন সংরক্ষিত হওয়ায় ক্রমবর্ধমান সংখ্যক নারী রাজনীতিতে যুক্ত হচ্ছেন।
নারীরা আমাদের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের মেরুদণ্ড উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন নারী সরাসরি এই খাতে কাজ করে। নারীরা ব্যবসায়ও ভালো করছে। তার সরকারের গৃহীত সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর উদ্যোগে প্রতিবন্ধীসহ সবচেয়ে দুর্বল নারীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমি আমার বিনামূল্যে আবাসন প্রকল্প-আশ্রয়ণের অধীনে স্বামী-স্ত্রীর যৌথ মালিকানার ব্যবস্থা করেছি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কন্যা ও ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের থিয়োম্যাটিক অ্যাম্বাসেডর এবং অটিজম অ্যান্ড নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মাসুদ বিন মোমেন। তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহুও এ অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন।