গাজায় চলমান সহিংসতার মাঝে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ৭০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি জানিয়েছে ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস। এতে করে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ অবসানের পথে নতুন আশার আলো দেখা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারি স্টিভ উইটকফের প্রস্তাব অনুযায়ী, দুই দফায় ১০ জন করে জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। এর বিনিময়ে গাজায় ৭০ দিনের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। ওই সময় ইসরায়েল নির্ধারিত কিছু এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে এবং দীর্ঘদিন ধরে আটক থাকা বহু ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে।
ইসরায়েল এখনো এই প্রস্তাবের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে হামাসের এই সম্মতিকে বিশ্লেষকরা একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন।
এর মধ্যেই গাজায় সহিংসতা ও মানবিক সংকট আরও গভীর হচ্ছে। রোববার গভীর রাতে গাজা সিটির দারাজ এলাকায় ফাহমি আল-জারজাওয়ি স্কুলে চালানো বিমান হামলায় অন্তত ৩৩ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১৮ জন শিশু এবং বেশ কয়েকজন নারী রয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেক মানুষ।
বিস্ফোরণের পর স্কুলটিতে আগুন ধরে যায়। সেখানে কয়েক শত বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানান, ঘুমন্ত অবস্থায় তাদের ওপর হামলা চালানো হয় এবং আগুনে অনেক শিশু গুরুতর দগ্ধ হয়।
স্কুলটির কাছেই বাস করা রামি রফিক বলেন, ‘সর্বত্র আগুন জ্বলছিল। আমি দেখেছি পুড়ে যাওয়া মৃতদেহ মাটিতে পড়ে আছে। সেই দৃশ্য দেখে আমার ছেলেটি অজ্ঞান হয়ে যায়।’
নিহতদের মধ্যে উত্তর গাজার হামাস পুলিশের তদন্ত প্রধান মোহাম্মদ আল-কাসিহ, তার স্ত্রী ও সন্তানরাও রয়েছেন। গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, এটি একটি পরিকল্পিত জাতিগত নিধনের অংশ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের চরম লঙ্ঘন।
গাজার জাবালিয়া এলাকায় আব্দ রাব্বো পরিবারের বাড়িতে পৃথক আরেকটি হামলায় নিহত হন ১৯ জন। আল-আহলি হাসপাতালের পরিচালক ডা. ফাদেল এল-নাইম এই তথ্য জানান।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, গত ৪৮ ঘণ্টায় গাজায় অন্তত ২০০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জাবালিয়ায় আবাসিক এলাকা এবং গাজা সিটির উপকণ্ঠে বাস্তুচ্যুতদের তাঁবু, যেখানে ছয়জন নিহত হয়েছেন।
এদিকে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলে ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ রেখেছে ইসরায়েল। পাশাপাশি নতুন স্থল অভিযানে উত্তর গাজার বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে আইডিএফ। সোমবার তারা ইন্দোনেশিয়া হাসপাতাল ও আল-আওদা হাসপাতাল ঘিরে ফেলে।
এ অবস্থায় যুদ্ধ বন্ধ এবং গাজায় মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছে স্পেন। মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত ইউরোপীয় ও আরব দেশগুলোর এক বৈঠকে স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসে ম্যানুয়েল আলবারেস বলেন, ‘গাজায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় চলছে। যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে এখনই।’
বৈঠকে অংশ নিয়ে ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মুস্তাফা বলেন, ‘ইসরায়েল যেন গাজায় দুর্ভিক্ষ ও গণহত্যা অব্যাহত না রাখতে পারে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এ বিষয়ে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’