যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের কূটনৈতিক সম্পর্কে সম্প্রতি টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। বিশেষত ট্রাম্প প্রশাসন আসার পর থেকেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে ইউক্রেনকে সহয়তা দিতে পিছপা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি একটি খনিজ বিষয়ক চুক্তি নিয়ে বাকবিতন্ডায় জড়ান ট্রাম্প-জেলেনস্কি। তবে, সেই চুক্তিতে সই করা নিয়ে কথা বলেছেন ভলোদিমির জেলেনস্কি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিরল খনিজ সম্পদ নিয়ে চুক্তি সই করতে প্রস্তুত রয়েছে তাঁর দেশ।
যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের ল্যাংকেস্টার হাউসে গতকাল রোববার ইউক্রেন সংকট নিয়ে অনুষ্ঠিত সম্মেলন শেষে বিবিসিকে এ কথা বলেন জেলেনস্কি। এদিন তিনি যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।
গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউক্রেনের সেই বিরল খনিজ সম্পদ নিয়ে একটি চুক্তি সই হওয়ার কথা ছিল। সেই মোতাবেক ওয়াশিংটনে যান জেলেনস্কি। হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তিনি।
বৈঠকে ট্রাম্প–জেলেনস্কির নজিরবিহীন বাগবিতণ্ডা হয়। এরপর দুই নেতার যৌথ সংবাদ সম্মেলন বাতিল হয়। জেলেনস্কিকে বলা হয় হোয়াইট হাউস ছেড়ে চলে যেতে।
লন্ডনে গতকাল জেলেনস্কির কাছে চুক্তিটির ভবিষ্যৎ নিয়ে জানতে চাওয়া হয়। জবাবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘খনিজ চুক্তিটি মন্ত্রীদের (উভয় দেশের) সইয়ের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। আমরা এটি সই করতে প্রস্তুত।’
জেলেনস্কি যোগ করেন, ‘টেবিলে যে চুক্তিটি রয়েছে, তা সই হবে যদি সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো প্রস্তুত থাকে।’
ইউক্রেনে এক মাসের জন্য যুদ্ধবিরতি কার্যকরে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার একটি প্রস্তাব সামনে এনেছেন। ফ্রান্সের সংবাদমাধ্যমগুলো এমন খবর প্রচার করেছে। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে জেলেনস্কি বিবিসিকে বলেন, ‘আমি বিষয়টি সম্পর্কে সবকিছুই জানি।’
লন্ডন সম্মেলন নিয়ে এক টেলিগ্রাম পোস্টে জেলেনস্কি লিখেছেন, ‘এখানে আমরা ইউক্রেন, আমাদের জনগণ, সেনাবাহিনী ও বেসামরিক নাগরিক এবং আমাদের স্বাধীনতার প্রতি দৃঢ় সমর্থন অনুভব করেছি।’
‘প্রকৃত শান্তি ও নিশ্চিত নিরাপত্তার স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতার শক্ত ভিত্তি গড়ার জন্য আমরা ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে মিলে একযোগে কাজ করছি’—যোগ করেন জেলেনস্কি।
যুদ্ধকালীন নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাওয়ার বিষয়ে মনোভাব জানতে চাইলে জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেন বিশ্বাস করে যে সর্বোত্তম নিরাপত্তা নিশ্চয়তা একটি শক্তিশালী ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী নিশ্চিত করবে। আমি নিশ্চিত, স্যার কিয়ার স্টারমারও (যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী) এটা জানেন।’
এদিকে লন্ডনে সম্মেলন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, ইউক্রেনকে সহায়তার জন্য নতুন চুক্তি অবশ্যই জোরালো হতে হবে। সব দেশকে নিজেদের সর্বোচ্চ সক্ষমতা অনুযায়ী ভূমিকা রাখতে হবে। তাদের দায়িত্ব নিতে হবে এবং নিজেদের দায়িত্বও বাড়াতে হবে।
কিয়ার স্টারমারের ভাষ্য অনুযায়ী, সম্মেলনে ঐকমত্য হওয়ার চারটি পদক্ষেপ হলো— যুদ্ধ চলাকালে ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে ও রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক চাপ বৃদ্ধি করতে হবে; স্থায়ী শান্তির ক্ষেত্রে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে ও যেকোনো শান্তি আলোচনার টেবিলে ইউক্রেনকে অবশ্যই রাখতে হবে; শান্তিচুক্তির ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ ঠেকানোর লক্ষ্যে কাজ করতে হবে ইউরোপের নেতাদের এবং ইউক্রেনের সুরক্ষার জন্য একটি জোট গঠন করতে হবে ও দেশটিতে শান্তি নিশ্চিত করতে হবে।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে ইউক্রেনকে ১৬০ কোটি পাউন্ড দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কিয়ার স্টারমার। যুক্তরাজ্যের দেওয়া এই অর্থ খরচ করে ইউক্রেনের জন্য পাঁচ হাজারের বেশি ক্ষেপণাস্ত্র কেনা হবে।