ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনায় এক ধাপ এগিয়েছে হামাস। মানবিক সহায়তা ও সংঘাত বন্ধের লক্ষ্যে গোষ্ঠীটি ইসরায়েলের ১০ বন্দিকে মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে।
তবে তারা একই সঙ্গে সতর্ক করে বলেছে, ইসরায়েলের কঠোর অবস্থান আলোচনাকে জটিল করে তুলছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে ১০ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।
বুধবার (৯ জুলাই) দেওয়া এক বিবৃতিতে তারা জানায়, ইসরায়েলের ‘অনমনীয় মনোভাব’ এই আলোচনাকে কঠিন করে তুলছে।
হামাসের শীর্ষস্থানীয় নেতা তাহের আল-নুনু বলেন, ‘আমরা একটি সম্মানজনক যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছি। আমাদের জনগণকে রক্ষা, গণহত্যা বন্ধ এবং মানবিক সহায়তা নিশ্চিতে যতটা নমনীয়তা দেখানো সম্ভব—তা আমরা দেখিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে ইসরায়েলি বাহিনী যেসব এলাকা থেকে সরে যাবে, তা এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যাতে ফিলিস্তিনিদের জীবনযাত্রা বিঘ্নিত না হয় এবং যাতে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনার ভিত্তি গড়ে ওঠে।’
একইদিনে হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, গাজা নিয়ে একটি চুক্তি হওয়ার ‘ভালো সম্ভাবনা রয়েছে’, যদিও তিনি এবার পূর্বের মতো জোরালো আশাবাদ প্রকাশ করেননি।
ওয়াশিংটন থেকে আল-জাজিরার সংবাদদাতা প্যাটি কালহেইন জানান, ‘নেতানিয়াহুর সফরের আগে যেভাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আশাবাদী ছিলেন, এখন আর তেমনভাবে তা বলছেন না। তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, আলোচনায় কেবল একটি বিষয়ে মতানৈক্য আছে। তবে হামাস বলছে, এটি বিভ্রান্তিকর—কারণ তারা এখনো স্থায়ী যুদ্ধবিরতির নিশ্চয়তা, ইসরায়েলি বাহিনীর অবস্থান নির্ধারণ এবং মানবিক সহায়তা বিতরণে নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থাপনার দাবিতে অনড়।’
এদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রধান ইয়াল জামির বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে, যার মাধ্যমে ১০ জন জীবিত জিম্মি এবং ৯ জনের মরদেহ ফেরত দেওয়া সম্ভব।’
তবে আলোচনার অগ্রগতি সত্ত্বেও গাজায় সংঘাত থামেনি। বুধবার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ৭৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ৮ জন প্রাণ হারান একটি খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে, যেখানে তারা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এই কেন্দ্রটি পরিচালনা করে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন।
হামাস জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের পথ এখনো সহজ নয়। আলোচনার টেবিলে এখনো রয়েছে বহু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু—জরুরি ত্রাণ প্রবাহ নিশ্চিত করা, ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং যুদ্ধ চূড়ান্তভাবে বন্ধের বিষয়ে নির্ভরযোগ্য নিশ্চয়তা অর্জন।
সবমিলিয়ে, যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা কিছুটা এগোলেও, চূড়ান্ত সমাধান এখনো সময়সাপেক্ষ এবং বহু দ্বন্দ্ব নিরসনের অপেক্ষায়।