গণঅভ্যুত্থানকে একটা যুদ্ধ বলে অভিহিত করেছেন সিনিয়র সাংবাদিক এবং বর্তমান ওয়াশিংটন প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তোজা। এই যুদ্ধে আপনি যদি পরাজিত হন তাহলে আপনি মারা যাবেন, আপনি যদি বিজয়ী হন তাহলে যাকে আপনি পরাজিত করলেন তাকে ডেস্ট্রয় করে দিতে হব। আপনি তাকেও রাখবেন, আর আপনি চুপচাপ বসে থাকবেন এর নাম গণঅভ্যুত্থান নয়, এর নাম যুদ্ধ নয় বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
বেসরকারি একটা টেলিভিশনে অনুষ্ঠিত টক-শো অনুষ্ঠানে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
তার ভাষ্যমতে, আমাদের এখানে ৫ তারিখ একটি গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। এই অভ্যুত্থানের পরে বিজয়ী শক্তি ক্ষমতা দখল করেছে। কিন্তু দেশের মানুষ মনে করছে এ সরকারটি দুর্বল, তারা আওয়ামী লীগের কিছু করতে পারবে না।
তিনি বলেন, আমি ভাঙচুরকে সমর্থন করছি এরকম মনে হতে পারে। কিন্তু আসলে বিষয়টি তা নয়, বিজয়ী শক্তির প্রমাণ দিতে হয়। জনতার ভাঙচুর এই শক্তির প্রমাণ বা প্রমাণেরই একটি অংশ। এটা তাদের দেওয়ার দরকার ছিল। এটা টিকে থাকার ব্যাপার। শেখ হাসিনা আবার দেশে এসে অথবা দেশের ভিতরে যোগাযোগ করে আবার সে ক্ষমতা দখল করবে। এরকম একটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে শেখ হাসিনা আবার সামনে এসেছিল।
ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্প্রতি দেওয়া এক বক্তব্য নিয়ে তিনি বলেন, জাহিদ ভাই(সহ আলোচক) যতই বলুক এটা একটা বিনোদন। হ্যাঁ, সেটা আমার কাছেও বিনোদন। এটা আমি শুনে শেখ হাসিনার অসহায়ত্ববোধ উপভোগ করছি। জাহিদ ভাই সুন্দর করে বলেছেন। আমি হয়তো ওই ভাষায় বলি নাই, ওইভাবে চিন্তা করি নাই। হ্যাঁ আমার কাছেও বিনোদন, তাই না হলে শেখ হাসিনার ওই ৩০-৪০ মিনিটের ভোগাস কথা কেন শুনবো। ওই বিনোদন দেখে আমি আনন্দিত হই, এ কারণে যে দানবীয় একটা শক্তির পতনের পরে সে যেভাবে হাহাকার করে, এটা আমিও দেখতে চাই।
স্বৈরাচার আরেক সরকারপ্রধান হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদের সময়কালকে স্মরণ করে সিনিয়র এই সাংবাদিক বলেন, ওই যে এরশাদকে যখন জেলে পাঠায় তখন আমরা খুশি হয়েছিলাম। কেন খুশি হয়েছিলাম, কারণ এরশাদের অসহায়ত্বটা দেখে গণঅভ্যুত্থানের বিজয়ী শক্তি নিজেদের সক্ষমতা বুঝতে পেরেছে।
গোলাম মোর্তজা বলেন, ৫ আগস্টের পরে যেই ঘটনাগুলো ঘটার কথা ছিল, সেটা না ঘটার কারণে পরাজিত শক্তি মনে করেছিল ৫ আগস্টের শক্তি দুর্বল। তাদের আর ঐক্য নাই, তারা আর সামনে আসতে পারবে না। আর ওই যে ‘রাজুতে ডাকলে তোমাদের জুতা মারা হবে’, এইরকম স্লোগান হয়েছে।
ছাত্র-জনতার ঐক্য নিয়ে তিনি বলেন, ধারণা করা হচ্ছিল রাজুতে ডাকলে আর কেউ আসবে না। কিন্তু ৩২ নম্বরের ক্ষেত্রে দেখা গেল শুধু রাজুতে না– তারা যদি জনসম্পৃক্ত থাকে তাহলে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে, শেখ হাসিনার মতো এরকম দানবের বিরুদ্ধে তারা যে কোনো একটা কর্মসূচি দেয়,তাহলে ছাত্র জনতা্র এখনো ঐক্য ওটুট রয়েছে। এবং এখনও তারা সেখানে যায় এটা দিয়ে সরকারের একটা শক্তিমত্তার প্রমাণ হয়েছে। কিন্তু এটা করা দরকার।
তিনি জানান, এই যে বিভিন্ন জায়গায় আগুন দেওয়া হয়েছে। বিশটার মতো প্রায়। এই প্রক্রিয়াতে যদি আগুন দেওয়াটা অব্যাহত থাকে। এক্ষেত্রে সরকারকে যে জায়গাটাতে ভাবতে হবে, তা হলো- এমন আগুনের ক্ষেত্রে যেটা হয় যে কারো কোন কন্ট্রোল থাকে না, কারো কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। কার বাড়িতে কে আগুন দিল। দেখা গেল আপনার বাড়ির সাথে আমার শত্রুতা আছে, আমি একজনকে দিয়ে একটা অকারেন্স করিয়ে নিলাম। সেটাকে মনে হবে ছাত্র জনতার কাজ কিন্তু পরে খুঁজতে গেলে দেখা যাবে ওই বাড়িতে আগুন দেওয়ার কথা ছিল না। না আগুন দেওয়াটাকে আমি সমর্থন করছি না। যেহেতু আমাকে একটা চ্যালেঞ্জ দিয়েছে। যেহেতু আমার একটা টিকে থাকার ব্যাপার ছাত্র জনতার সাপোর্ট লাগবে। সুতরাং এই জায়গাটাতে তাদের শক্তিমত্তার প্রমাণ দেওয়াটার দরকার ছিল। বিজয়ী তারা পরাজিত করেছে, একটা শক্তিকে কোন অভ্যুত্থানে রক্ত দিয়ে পরাজিত করেছে।
ধানমন্ডি ৩২ ভাঙচুর নিয়ে তিনি বলেন, যে ছেলেটা আজকে ৩২ নম্বর গিয়ে ভেঙেছে। তার ভাঙাটাকে সমর্থন করছি না। কিন্তু এটা আপনাকে বুঝতে হবে শেখ হাসিনা ওই ৩২ নম্বরকে কেন্দ্র করে আবার আসতে চায়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দুঃসহ সময়কে তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘কারণ শেখ হাসিনার বাহিনী হয়তো তাদের বন্ধুকে , ভাইকে, সহকর্মীকে, বাবাকে চোখের হত্যা করেছে। সে ওই যে হত্যা সরাসরি দেখেছে। যে যুদ্ধে থাকে তার কাছে অত নীতি-নৈতিকতা কাজ করে না। যুদ্ধের সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তার যেটা করা দরকার সে সেটা করে।
জুলাই বিপ্লবের স্মৃতি তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, গণঅভ্যুত্থানে যার নেতৃত্ব দিয়েছে, যারা মাঠে ছিল। আমি তো যোদ্ধা হিসেবে মাঠে থাকি নাই, সাংবাদিক হিসেবে মাঠে থেকেছি। আমি আমার অফিস থেকে দেখেছি কারওয়ান বাজারে আমার চোখের সামনে ৫-৬ জনকে ছাত্রলীগ কিংবা যুবলীগ কর্মীরা গুলি করে হত্যা করেছে। এটা আমার চোখের সামনে আমি ছয় তলা থেকে দাঁড়িয়ে দেখেছি। এটা তো আমি দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখলাম যে ছেলেটা পাশে দাঁড়িয়ে ছিল, তার পাশের জন গুলি লেগে হঠাৎ পড়ে গেল, এই ছেলেটা তখন একহাতে আরেকজনকে টানছে আর এক হাতে লাঠি। বিভৎস এক দৃশ্য সে দেখেছে।
এই যে ওর স্মৃতিতে মৃত্যুর দৃশ্য, তাহলে ওকে আপনি কীসের নীতি-নৈতিকতা শেখাবেন। ওর কাছে যদি মনে হয় শেখ হাসিনা আবার আসবে এবং এসে ওকে ফাঁসি দিবে, তখন তার জন্য ৩২ নাম্বার কি আর ৩৪ নাম্বার কি। সদা-সুদনই বা কি, ও যা সামনে পাবে ডিস্ট্রয় করে দেবে। ওদের বক্তব্য বুঝতে হবে- বুলডোজার হোক সেটা এক্সক্লেভেটর হোক, সেটা যে কোন কিছু হোক, এই প্রেক্ষাপটটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে আমাদের এত সুশীল আলোচনা করলে চলবে না।
তিনি বলেন, কেন এটা করলো, কেন ওটা করল। মানে আমি আমার টিকে থাকার জন্য করবো না– প্রশ্ন রাখেন তিনি। ইসলাম ধর্মেও আছে নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য। ইসলাম ধর্ম বলে নাই যে এক গালে চড় দিলে তুমি আরেক গান পেতে দিবা। তোমার জীবন বাঁচানোর জন্য তুমি প্রতিরোধ করবা। তো এখন তো প্রতিরোধ করা হচ্ছে।
তাদের যেটা উচিত ছিল যে আক্রমণ করার, তারা আক্রমণ করে নাই। তারা চুপচাপ ছিল। তাদের যেটা উচিত ছিল আক্রমণ করার। তারা তা করেনি, সর্বোচ্চ ধৈর্য দেখিয়েছ।
এখন যেটা হচ্ছে তাদের টিকে থাকার সংগ্রাম, নিজের জীবন বিপন্ন হয়ে যাওয়ার তৈরি হয়েছে। তখন তারা গিয়ে এটাকে প্রতিরোধ করছে। প্রতিরোধ করে এটা প্রমাণ দিতে হচ্ছে যে তাকে তুমি ইচ্ছে করলে মারতে পারবা না। আমার শক্তি আছে আমি তোমাকে এখনো মারতে পারি, যোগ করেন তিনি।