চলতি মাসেই ভারতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) চালু হয়েছে। সিএএ নিয়ে ইতিমধ্যেই বিজেপি বিরোধী দলগুলো প্রতিবাদ শুরু করেছে। সেই প্রতিবাদের পথেই ভারতের আসাম রাজ্যের নাগরিক হতে বাংলাদেশি মুসলিমদের নতুন ‘শর্ত’ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা।
আসামে বাংলাদেশি মুসলিমরা ‘মিঞা’ নামে পরিচিত। সেই ‘মিঞা’ সম্প্রদায়কে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রসঙ্গে হিমন্ত বলেন, ‘অসমিয়া সমাজের কিছু সাংস্কৃতিক নিয়ম ও ঐতিহ্য রয়েছে। যদি আসামের নাগরিক হতে হয় তবে সেই সব মেনে চলতে হবে। কোনো পরিবারে যদি দুইয়ের বেশি সন্তান থাকে, তবে বাংলাদেশি মুসলিমরা আসামের নাগরিক হতে পারবেন না। এ ছাড়াও বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহ বন্ধ করার শর্তও দিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘যদি এ রাজ্যের নাগরিক হতে হয় তবে নাবালিকার বিয়ে দেওয়া যাবে না। ছেলেমেয়েদের মাদ্রাসায় পড়ানো যাবে না। মাদ্রাসার পরিবর্তে ডাক্তারি ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো ক্ষেত্রে মনোযোগ দেওয়া উচিত।’
পশ্চিমবঙ্গ ও কর্ণাটকে সিএএ চালু হতে দেবেন না বলেও দাবি করেছেন রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীরা। একই পথে হেঁটেছেন হিমন্ত। বাংলাদেশি মুসলিমদের নিয়ে মন্তব্য করে লোকসভা ভোটের আগে নতুন বির্তক তৈরি করেছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী।
২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর সিএএ পাস করিয়েছিল নরেন্দ্র মোদি সরকার। ওই আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো মুসলিম ধর্মাবলম্বী দেশ থেকে যদি সে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে ভারতে আশ্রয় চান, তাহলে তা দেবে ভারত।
কিন্তু সিএএ-তে হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি ও খ্রিস্টান শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হলেও সেখানে মুসলিমদের কথা উল্লেখ করা হয়নি। এই ‘বৈষম্য’ কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে বিরোধী দলগুলো।
আসামে হিমন্তের নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার ২০২৩ সালে রাজ্যে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। বাল্যবিবাহের অভিযোগে প্রায় ৯ হাজার মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
২০২২ সালে আসাম মন্ত্রিসভা আনুষ্ঠানিকভাবে ৪০ লাখ অসমিয়া ভাষী মুসলিমকে ‘আদিবাসী অসমিয়া মুসলিম’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল।
আসামের মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রায় ৩৭ শতাংশ ‘অসমিয়া মুসলিম’। বাকিরা বাংলাদেশি মুসলিম। তাদের ‘আদিবাসী’ স্বীকৃতি দেওয়ার প্রশ্নেই মন্তব্য করে নতুন করে বিতর্কে জড়ালেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী।