দেবীদ্বার প্রতিনিধি: কুমিল্লার দেবীদ্বারে যৌতুকের জন্য প্রবাসী স্বামীর প্ররোচনায় এক গৃহবধূকে গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার ধামতী গ্রামের উত্তর পাড়াস্থ (কোরের পাড়) দুলাল মিয়ার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
গতকাল বুধবার রাত ১১টায় নির্যাতনের খবর পেয়ে সেই গৃহবধূর স্বজনরা পুলিশের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে। পরে আহত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে অভিযান চালিয়ে নির্যাতিতা নারীর শাশুড়িকে আটক করেছে পুলিশ।
স্থানীয়রা জানান, একলক্ষ টাকা এনে দিতে বুধবার বিকেলে ওই গৃহবধুকে চাপ দেন তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন৷ সে টাকা এনে দিতে রাজী না হওয়ায় শ্বশুর-শাশুড়ি ও ননদেরা মিলে নারিকেল গাছের সাথে বেঁধে তার উপর শারিরীক নির্যাতন চালায়। স্থানীয়দের চাপে নির্যাতিতা গৃবধূর হাতের বাঁধন খুলে দিলেও ঘরে আটক রেখে রাতে আবারও তার উপর নির্যাতন চালায়।
সংবাদ পেয়ে গৃহবধূর স্বজনরা তাকে উদ্ধারে গেলেও বাড়িতে ঢুকতে দেয়া হয়না। পরে দেবীদ্বার থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক(এএসআই) সারোয়ার তালুকদ ১১টায় তাকে উদ্ধার করে আনলে দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন স্বজনরা।
নির্যাতিতা গৃহবধূ জ্যোৎস্না জানান, প্রায় ১৬ বছর পূর্বে ধামতী গ্রামের দুলাল মিয়ার পুত্র হেলাল এর সাথে তার বিয়ে হয়। বিয়ের সময় ১লক্ষ ৫০ হাজার টাকা যৌতুক পরিশোধ করতে হয়। বিয়ের পরপরই বাবা মারা যান। এরই মধ্যে আমাদের সংসারে ২ ছেলে ও ২ মেয়ের জন্ম হয়। প্রায় ১২ বছর পূর্বে আমার স্বামী ওমান যাওয়ার সময় আরো ২ লক্ষ টাকার জন্য চাপ দিলে আমার ভাইয়েরা ১ লক্ষ টাকা দেন। গত এক বছর পূর্বে দেশে এসে আবারো বাকী ১লক্ষ টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে। প্রতিনিয়ত টাকার জন্য নির্যাতন চালাতে থাকে।
তিনি বলেন, স্বামী চলে যাওয়ার পর স্বামীর প্ররোচনায় আমার শ্বশুর দুলাল মিয়া, শ্বাশুরী জুলেখা বেগম, দুই ননদ মৌসুমী ও পাখী তার উপর প্রতি নিয়ত নির্যাতন চালাতে থাকে। আমার মাথার চুলগুলো টেনে ছিড়ে প্রায় শেষ করে ফেলেছে। মুখে কিল-ঘুষি আর থাপ্পরে দাঁতগুলোও নড়ে গেছে। বাবার বাড়িতে ১ লক্ষ টাকা এনে দিতে আবারো অমানবিক নির্যাতন চালায়। এক পর্যায়ে আমার হাত গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতন চালায়। রাতে ঘরে নিয়েও একই অবস্থা করে।
নির্যাতিতার মা ফরিদা বেগম জানান,মেয়েকে বহুবার নিয়ে আসতে চেয়েছি। সে ৪ সন্তানের মায়ায় আসেনি। গত ১৫ বছরে অন্তত ১০/১২টি সালিস হয়েছে। ছেলের পক্ষ সালিসের রায় মেনে পরে উল্টোটা করে। এখন আর কেউ সালিস করতে আসেনা। আমার আত্মীয় স্বজনও যায়না। আমরা গরিব মানুষ কত টাকা দিতে পারি। আমার ৪ ছেলে দিন মজুর।
দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ কমল কৃষ্ণ ধর জানান, অভিযান চালিয়ে ভুক্তভোগী নারীর শ্বাশুরী জুলেখা বেগমকে আটক করা হয়েছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।