রমজান শুধু উপবাসের মাস নয়, এটি আত্মশুদ্ধি, সংযম এবং নৈতিক উন্নতির এক মহাসুযোগ। ইসলাম শুধু খাদ্য ও পানীয় থেকে বিরত থাকার শিক্ষা দেয় না, বরং চিন্তা, বাক্য এবং আচরণেও সংযম প্রদর্শনের নির্দেশনা দেয়। প্রকৃত রোজা তখনই পরিপূর্ণ হয়, যখন তা আত্মার পরিশুদ্ধি এবং চারিত্রিক উন্নয়নের কারণ হয়।
সংযম শুধু খাবার-পানীয় থেকে নয় রমজানের মূল উদ্দেশ্য তাকওয়া অর্জন করা। কেবল ক্ষুধা ও তৃষ্ণা সহ্য করাই সংযম নয়, বরং নিজের চিন্তা, বাক্য, আবেগ ও আচরণ নিয়ন্ত্রণ করাও এর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
১. চিন্তায় সংযম: নেতিবাচক ও অহেতুক চিন্তা থেকে দূরে থাকা।মানুষের প্রতি বিদ্বেষ, হিংসা ও অহংকারের চিন্তা পরিহার করা। নিজের আত্মমূল্যায়ন করা ও ভালো গুণাবলির চর্চা করা।
২. বাক্য বিনিময়ে সংযম: মিথ্যা, গীবত, পরনিন্দা ও অশালীন বাক্য পরিহার করা।সংযতভাবে কথা বলা ও অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক এড়িয়ে চলা।ভালো কথা বলা এবং অন্যকে অনুপ্রাণিত করা।
৩. চরিত্রে সংযম: রাগ ও ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করা। ধৈর্য ও সহনশীলতার গুণ অর্জন করা। দানশীলতা, ক্ষমাশীলতা ও বিনয়ী আচরণকে অভ্যাসে পরিণত করা।
আত্মশুদ্ধির উপায়
রমজান আমাদের জন্য আত্মশুদ্ধির একটি প্রশিক্ষণ মাস। কিছু কার্যকর পদ্ধতি অনুসরণ করলে এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব:
ইবাদতে মনোযোগ বৃদ্ধি করা: নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া ও ইস্তেগফারের মাধ্যমে আত্মিক উন্নতি করা।
নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ: প্রবৃত্তির দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে আত্মনিয়ন্ত্রণের অনুশীলন করা।
পরোপকার ও দানশীলতা: মানুষের কল্যাণে কাজ করা এবং দান-সদকার মাধ্যমে আত্মার প্রশান্তি অর্জন করা।
সময়ের সদ্ব্যবহার: অলসতা ও সময়ের অপচয় রোধ করে উপকারী কাজে মনোযোগী হওয়া। রমজানের শিক্ষা সারাবছর ধরে রাখার কৌশলরমজান চলে গেলে যেন আমাদের আত্মসংযম ও আত্মশুদ্ধির চর্চা থেমে না যায়।
এজন্য রমজানের অভ্যাসগুলোকে দৈনন্দিন জীবনে সংযুক্ত রাখা। নিয়মিত নফল রোজার অভ্যাস গড়ে তোলা। নিজের কাজ ও চিন্তাধারার প্রতিনিয়ত পর্যালোচনা করা। আল্লাহর ভয়ের অনুভূতি হৃদয়ে জাগ্রত রাখা।
রমজান আমাদের জন্য কেবল একটি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি নৈতিক ও আত্মিক পরিশুদ্ধির একটি সুবর্ণ সুযোগ। সংযম কেবল খাদ্য থেকে বিরত থাকা নয়, বরং চিন্তা, বাক্য ও আচরণেও সংযত থাকা। এই সংযমের চর্চা শুধু রমজানে নয়, বরং সারাবছর ধরে রাখার মাধ্যমে আমরা প্রকৃত তাকওয়াবান হয়ে উঠতে পারি।
লেখক: তাওহীদ আদনান ইয়াকুব, ফাযেলে দারুল উলুম দেওবন্দ ও নদওয়াতুল উলামা লাখনৌ, মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া আহলিয়া নশাসন, শরীয়তপুর।