রমজান মাস মুসলিম উম্মাহর জন্য এক বিশেষ প্রশিক্ষণের মাস। এই মাস আমাদের সংযম, আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়া শিক্ষা দেয়। রাসূলুল্লাহ সা. এবং তাঁর সাহাবায়ে কেরামরা যেভাবে রমজান পালন করতেন, তা আমাদের জন্য এক চিরন্তন আদর্শ।
প্রথম রমজান ও রোজার বিধান
ইসলামের ইতিহাসে প্রথম রোজা বিধিবদ্ধ হয় হিজরতের দ্বিতীয় বর্ষে। এ বছরই বদরের ঐতিহাসিক যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। এটি ছিল একটি কঠিন পরীক্ষা, যেখানে মুসলমানরা রোজা রেখে জিহাদে অংশ নিয়েছিলেন এবং আল্লাহর সাহায্যে বিজয়ী হয়েছিলেন।
রাসূল সা.-এর রমজানের আমল
রাসূল সা. রমজান মাসে ইবাদতের প্রতি আরও মনোযোগী হতেন। তিনি দীর্ঘ সময় ধরে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন। কুরআন তিলাওয়াতের পরিমাণ বৃদ্ধি করে দিতেন। বেশি বেশি দোয়া ও ইস্তেগফার করতেন। দান-সদকা ও মানবসেবায় নিজেকে ব্যাপৃত রাখতেন। শেষ দশ দিনে ইতিকাফ করতেন এবং লাইলাতুল কদর সন্ধানে ব্যস্ত থাকতেন।
সাহাবাদের রমজান পালন
সাহাবারা রাসূল সা.-এর অনুসরণে রমজান মাসকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পালন করতেন। তাঁরা রোজা রাখার সঙ্গে সঙ্গে তাদের আমল ও চরিত্রকে উন্নত করতেন। অধিকহারে দান-সদকা করতেন, যাতে গরিব-মিসকিনরা কষ্ট না পান। রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত ইবাদত-বন্দেগিতে কাটানোর চেষ্টা করতেন। অন্য রোজাদারদের ইফতার করানোর প্রতি বিশেষভাবে মনোযোগী হতেন।
রমজান ও যুদ্ধ
সাহাবাদের যুগে রমজান শুধু ইবাদতের মাস ছিল না, বরং একে আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের মাস হিসেবেও দেখা হত। বদরের যুদ্ধ ছাড়াও মক্কা বিজয়ের ঘটনাও রমজান মাসেই সংঘটিত হয়েছিল। মুসলমানরা কঠিন যুদ্ধের মধ্যেও রোজা রাখার চেষ্টা করতেন এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে জীবন পরিচালনা করতেন।
রমজান থেকে আমরা কী শিক্ষা নিতে পারি
রাসূল সা. ও সাহাবাদের রমজান আমাদের জন্য এক অনুকরণীয় আদর্শ। আমরা যদি তাঁদের অনুসরণ করি, তাহলে রমজান শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মোড় হতে পারে। সংযম, দানশীলতা, ইবাদত ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আমরা এই মাসকে যথার্থভাবে কাজে লাগাতে পারি। রমজানের এই বরকতময় মাসে আমাদের উচিত রাসূল সা. ও সাহাবাদের পথ অনুসরণ করে নিজেদের জীবনকে আরও উন্নত করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে রমজান পালনের তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক, তাওহীদ আদনান ইয়াকুব, ফাযেলে দারুল উলুম দেওবন্দ ও নদওয়াতুল উলামা লাখনৌ, মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া আহলিয়ান শাসন, শরীয়তপুর।