রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে আরিফুল ইসলাম নামের এক জাপানপ্রবাসীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
পারভীন আক্তার নামের একজন নারী তাকে হত্যা করেছেন বলে সন্দেহ করছে পুলিশ। ওই নারী কানাডাপ্রবাসী। সম্প্রতি তাঁরা দুজন একসঙ্গে স্বামী–স্ত্রী পরিচয়ে ওই অ্যাপার্টমেন্টে উঠেছিলেন।
আরিফুলের মরদেহ উদ্ধারের সময় তাঁর গলা ও বুকে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল। মরদেহে পচন ধরেছিল।
মরদেহের পাশে একটি চিরকুটে লেখা ছিল, ‘আমার জীবনের শান্তি নষ্ট করে দিছে এই রেপিস্ট (ধর্ষক), ব্ল্যাকমেলার। সে তার নিজের ইচ্ছায় আমার হাতে ধরা দিছে। নিজের হাতে এই রেপিস্ট, ব্ল্যাকমেলারকে মেরে শান্তি নিলাম।’ চিরকুটটি পারভীন আক্তারের লেখা বলেই ধারণা করছে পুলিশ।
মাটি প্রপার্টিজের মালিকানাধীন অ্যাপার্টমেন্ট থেকেই আরিফুলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের ওখানে দেওয়া তথ্য ও সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ বলেছে, ১৭ মে বিকেল চারটার দিকে ওই অ্যাপার্টমেন্টে ওঠেন আরিফুল ও পারভীন। সাত দিনের ভাড়া বাবদ অগ্রিম ১৩ হাজার টাকা দিয়েছিলেন।
পরদিন সকাল ৬টা ৩১ মিনিটে পারভীন একাই সেখান থেকে বেরিয়ে যান। আর গত শনিবার আরিফুলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পারভীনের পাসপোর্ট ও ভ্রমণের তথ্য অনুযায়ী, তিনি গত ১৬ মে কানাডা থেকে বাংলাদেশে আসেন। ১৮ মে তিনি আবার কানাডায় চলে যান। তাঁর মুঠোফোন নম্বরের সর্বশেষ অবস্থান শনাক্ত হয়েছে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।
এ ঘটনার তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, আরিফুল ইসলামের বয়স ২৭ বছর। আর পারভীন আক্তারের বয়স ৩৩ বছর। পারভীন গত এপ্রিল মাসে কানাডায় তাঁর স্বামীর কাছে যান। আরিফুল, পারভীন ও পারভীনের স্বামী নাজমুল হোসেন সবাই নরসিংদী জেলার বাসিন্দা। একই জেলার বাসিন্দা হওয়ায় তাঁরা একে অপরকে চিনতেন। আরিফুল জাপানে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে এবং পারভীন কানাডায় তাঁর স্বামীর সঙ্গে থাকলেও তাঁদের মধ্যে যোগাযোগ ছিল।
আরিফুল নরসিংদীর রায়পুরা থানার আদিয়াবাদ কালিকুরপাড়া এলাকার শাহজাহান শিকদারের ছেলে। পারভীন নরসিংদী সদরের সাটিরপাড়া এলাকার মো. নুরুল ইসলামের মেয়ে।
পুলিশের গুলশান বিভাগের ভাটারা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) রাজন কুমার সাহা বলেন, এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য–প্রমাণের ভিত্তিতে তাঁদের মনে হয়েছে, পারভীন আক্তার দীর্ঘদিনের ক্ষোভ থেকে আরিফুলকে হত্যা করেছেন। বিশেষ করে, সিসিটিভি ফুটেজ, মুঠোফোন নম্বরের কথোপকথন বিশ্লেষণ করে ধারণা করা যাচ্ছে যে পারভীন আক্তারকে আরিফুল মানসিক নির্যাতন করেছেন। সেই ক্ষোভ থেকেই তিনি এ হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারেন।
এদিকে, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার যে স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট থেকে আরিফুলের লাশ উদ্ধার হয়েছে, সেখানে আরিফুল ও পারভীন আক্তারের বিয়ের একটি নোটারি হলফনামা পাওয়া গেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, তাঁরা ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর বিয়ে করেন। তবে আরিফুলের পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, তাঁরা এ বিয়ের বিষয়ে জানতেন না।
আসামিকে আইনের আওতায় আনার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার রিফাত রহমান শামীম বলেন, যেহেতু অভিযুক্ত পারভীন আক্তার কানাডায় চলে গেছেন, সেহেতু পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) সহায়তায় ইন্টারপোলে চিঠি দেওয়া হবে।
এ ছাড়া আসামিকে ফিরিয়ে আসতে যেসব ব্যবস্থা নিতে হয়, সেগুলো নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।