শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০২৫

রাজনীতি আর সন্ত্রাসকে গুলিয়ে ফেলছি না তো?

এফটিপি ডেস্ক
-বিজ্ঞাপণ-spot_img

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও নির্বাচনে ফিরে আসার বিষয়ে নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। হাসনাত আব্দুল্লাহর ফেসবুক পোস্টের পর এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা আরও তীব্র হয়েছে। একটি দল, যে জনরোষের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়েছিল, তার নেতৃত্বে যাদের হাতে অসংখ্য স্বদেশীর রক্ত রয়েছে, তারা আবার রাজনীতি ও নির্বাচনে ফেরার চেষ্টা করছে—এমন একটি ‘আলাপ’ আমাদের সামনে উঠে আসছে। কিন্তু, প্রশ্ন উঠে, আসলেই কি আওয়ামী লীগ নিজেরা রাজনীতিতে ফিরতে চায়? জনগণের ভোট ও ম্যান্ডেট চায়? নাকি এর পিছনে শুধুই ভারত, প্রশাসনের কিছু অংশ, রাজনৈতিক দলগুলো এবং তথাকথিত সুশীল সমাজের একচ্ছত্র আগ্রহ?

কেননা আওয়ামী লীগ যদি সত্যিই জনগণের ভোট ও ম্যান্ডেট চাইতো, তাহলে বিগত ১৬ বছরে আমরা সেটার মিনিমাম প্রচেষ্টা লক্ষ্য করতাম। বিপরীতে যা দেখেছি তা হল, আওয়ামী লীগ ভোট ও ভোটের থেকে শুধু পালিয়ে বেড়িয়েছে, নানান ছল-চাতুরির আশ্রয় নিয়ে মানুষের ভোটের অধিকারকে প্রহসনে পরিণত করেছে। ভোট আসলে জনগণ হাসি তামাশা করতো। ঠাট্টার বস্তু বানিয়েছে নির্বাচন ব্যবস্থাকে।

আলোচনা হচ্ছে রাজনীতি এবং নির্বাচনে ইংক্লুসিভিটি নিয়ে। তাহলে তো আমরা রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করছি তাইনা? প্রশ্ন আসে– আওয়ামী লীগ কি এদেশে বিগত ১৫ বছর রাজনীতি করেছে? আওয়ামী লীগের কর্মকান্ডকে যদি রাজনীতি বলি তাহলে সন্ত্রাস কাকে বলবো? তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই যে, তারা রাজনীতি করেছে তাহলে প্রশ্ন আসে, সেই রাজনীতিটা তারা কাদের জন্য করেছে? শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনের সেই উক্তি, ‘ভারতকে যা দিয়েছি, তা সারাজীবন মনে রাখবে’–, তা কি বাংলাদেশের মানুষের জন্য ছিল? আর ওবায়দুল কাদেরের প্রকাশ্যে ‘তলে তলে আপস হয়ে গেছে, দিল্লি আছে তো আমরা আছি’ এই বক্তব্যটি কি দেশের জন্য ছিল? বিবেচকদের জন্য এটা বোধগম্যে আনা মুশকিল ছিল না যে, রাজনীতিটা আওয়ামী লীগ কাদের স্বার্থে করে গেছে।

অবশ্য, এরপরের ধাপও অত্যন্ত স্পর্শকাতর। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের হাতে হাজার হাজার মানুষ গুম, খুন, পিলখানা, হেফাজত এবং সর্বশেষ জুলাই। গণহত্যা চালিয়ে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল। তাই, প্রশ্ন আসতেই পারে—এমন এক রাজনৈতিক দলের রাজনীতির মাধ্যমে দেশ পরিচালনা কি আদৌ সমর্থনযোগ্য? কী নিশ্চয়তা আছে যে, তারা ভবিষ্যৎ রাজনীতি এই দেশ ও মানুষের জন্য পরিচালনা করবে?

আর যখন কথা আসে ‘শুদ্ধ আওয়ামী লীগ’ আসবে এবং নির্বাচন করবে, তখন প্রশ্ন ওঠে, কোথায় সেই ‘শুদ্ধ আওয়ামী লীগ’? আমরা কি কখনো তাদের কোনো কার্যক্রম দেখেছি? দেশের বিপর্যয়ের সময় তারা কী করেছে? যখন এই দেশে গণহত্যা চলছিল, শুদ্ধ আওয়ামী লীগের কোনো সদস্য জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে একটু বারণ করেছি কি?

আওয়ামী লীগ ৭ মাস পরেও যদি জাতির উদ্দেশ্যে কোনো বার্তা না দেয়, তাহলে তাদের শুদ্ধতা কোথায়? তারা কি নিজেদের স্বার্থে দেশের মানুষকে প্রতারিত করতে চাচ্ছে?

এখন যে সময়টা চলছে, প্রশ্ন উঠছে—জুলাই মাসের অভ্যুত্থান কেন হয়েছিল? এটি ছিল জনগণের অনুরোধে, যা দীর্ঘদিনের অশান্তির বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ ছিল। তবে সেই প্রতিবাদের কী সমাধান হয়েছে? কোথায় বিচার? কোথায় আত্মোপলব্ধি? জনগণের জন্য কি তাদের কোনো পদক্ষেপ ছিল?

এখন যখন ভোটের মাঠে আলোচনার সময় এসেছে, তখন এসব সন্ত্রাসী কার্যকলাপ এবং তাদের পুনর্বাসনের আলোচনা কেন? কেন বাংলাদেশ এত অসহায় হয়ে পড়বে, যদি এসব সন্ত্রাসী ক্ষমতায় না থাকে? তাদের পুনর্বাসনের কথা বললে, এর মানে কি আমরা ভবিষ্যতে আরও হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুকে বৈধতা দিচ্ছি?

এই প্রশ্নগুলো মনে রেখে, যারা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের জন্য উদগ্রীব, তারা কি একবার চিন্তা করেছে, এ ধরনের পদক্ষেপ দেশ ও জনগণের জন্য কতটা ক্ষতিকর হতে পারে? যদি সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে সমর্থন দেয়া হয়, তবে এর পরিণতি কত ভয়াবহ হতে পারে—এটি কি কেউ চিন্তা করছে?

শেষকথা, রাজনীতি ও সন্ত্রাসকে এক করে ফেললে, আমরা ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করতে যাচ্ছি। যদি আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন তাদের রাজনৈতিক অভ্যুত্থানের একটি অংশ হয়, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ আরও অন্ধকার হতে পারে।

এটি একটি সংকট, যা শুধুমাত্র দেশের জন্য নয়, আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্যও একটি বড় হুমকি।

শেয়ার করুন

সর্বশেষ নিউজ

রোজার আগে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন, ইউনূস-তারেক বৈঠকে সিদ্ধান্ত

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী রোজার আগেই ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। লন্ডনে প্রধান...

ইরানে নতুন করে হামলা চালাল ইসরায়েল

ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর তাবরিজে একটি সামরিক বিমানবন্দরে নতুন করে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। স্থানীয় সময় শুক্রবার (১৩ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টায় হামলাটি চালানো হয় বলে জানিয়েছে...

ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক শেষ

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে বহুল প্রতীক্ষিত বৈঠক শেষ হয়েছে। শুক্রবার (১৩ জুন) বাংলাদেশ সময় দুপুর...

ড. ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠক শুরু

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‌‘ওয়ান টু ওয়ান’ গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক শুরু হয়েছে। শুক্রবার (১৩ জুন) বাংলাদেশ সময়...

সম্পর্কিত নিউজ

রোজার আগে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন, ইউনূস-তারেক বৈঠকে সিদ্ধান্ত

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে,...

ইরানে নতুন করে হামলা চালাল ইসরায়েল

ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর তাবরিজে একটি সামরিক বিমানবন্দরে নতুন করে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। স্থানীয় সময় শুক্রবার...

ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক শেষ

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে...