বগুড়ার দুটি আসনে উপনির্বাচন করে টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হন আলোচিত ইউটিউবার আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম। বিনোদন জগতে তিনি কতটুকু জনপ্রিয় তার চেয়ে বড় দিক তিনি বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় আসেন তার কর্মকাণ্ড মাধ্যমে। সঙ্গীতের ভিডিও, মডেলিং, হাস্য-রসাত্মক অভিনয় ও গায়ক হিসেবে দর্শকদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনায় হিরো আলমের নাম মুখে মুখেই বহুল উচ্চারিত।
মাঝে মাঝেই বিতর্কিত কিছু গান ও নাচ ব্যাপক হাসির খোরাক জোগাত দর্শকদের। একইধারায় তার গান, মুভি নিয়ে হাসাহাসির পাশাপাশি ব্যাপকভাবে ট্রল করত দর্শকরা। তবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে দর্শক ও অনুরাগীদের মুখে একরকম কুলুপ এঁটে দিয়েছেন তিনি। এখানেই নিজেকে অন্যভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন এই হিরো।
তবে শুধু দেশের গণ্ডিতে নিয় হিরো আলমের আলোচনা দেশের বাইরেও। গত ১৯ নভেম্বর ‘আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে হিরো আলমকে ‘সেরা পুরুষ’র সম্মাননা দিয়েছিল কলকাতা।
পুরুষ অধিকার কর্মী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেওয়া সেই সংগঠনের এক সদস্য হিরো আলমকে নিয়ে বলেছিলেন, ‘প্রথাগত সৌন্দর্যের ধারণার বাইরে গিয়েও যে হিরো হওয়া যায় তা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন। সেই আসল পুরুষ, সেই আসল বিপ্লবী।’
আসল বিপ্লব তিনি কতটা ঘটিয়েছেন সেই প্রশ্নে না গিয়ে বগুড়ার উপনির্বাচন প্রসঙ্গে ফিরে আসা যাক। বগুড়ার সেই উপনির্বাচনে নিজের প্রার্থীতা ফিরে পেতে তিনি হাইকোর্ট পর্যন্ত দৌঁড়েছিলেন। বগুড়ার সেই দুটি আসনে গত ১ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে একটি আসনে তিনি সামান্য ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। তবে হারের পরও তিনি থেমে থাকেননি। নিজের অবস্থান থেকে জানিয়েছেন প্রতিবাদ৷ নির্বাচনের ফলাফল তিনি মানেননি৷ এরপর হিরো আলমকে নিয়ে ইতিবাচক আলোচনাই চলতে থাকে।
রাজনীতিতে আসার পর থেকে অনেকটাই সংযত হয়ে চলার নীতিতে বিশ্বাসী হিরো আলম। একটি গণমাধ্যমকে মঙ্গলবার দেওয়া বক্তব্য হিরো আলম জানিয়েছেন, ‘আগের কিছু গান ও নাচ নিয়ে মানুষ হাসাহাসি বা ট্রল করেছে। এ বিষয়ে আমি অবগত। তবে এখন আমি আগের হিরো আলম নেই। এগুলো ছেড়ে দিয়েছি কিন্তু ছেড়ে দিলেও আগের ভিডিওগুলোই কিছু মানুষ বারবার শেয়ার দিয়ে আমাকে ট্রলের মধ্যে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করে।’
তার ভাষ্যমতে, ‘নতুন করে কোনো হাস্যকর বা তুচ্ছতাচ্ছিল্য হয় এমন গান, সিনেমা, মডেলিং করব না। এখন থেকে যে কাজই করি না কেন কাজটি মানসম্মত করব। ইতোমধ্যে কাজের অনেক পরিবর্তন এনেছি। হাস্যকর, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবে মানুষ এমন কাজ তো করবই না। বরং মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছি, সেই ভালোবাসা ধরে রাখার জন্য সব সময় ভালো কাজের মধ্যে থাকব।’
মানুষের ভালোবাসা ধরে রেখে হিরো আলমের বদলে যাওয়াটা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। মানসম্পন্ন কাজের পাশাপাশি নিজের অবস্থান ধরে রাখাটাও হিরো আলমের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ৷ রাজনীতির মাঠে নেমে তিনি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে টিকে থাকার প্রচেষ্টা চালাবেন রাখবেন কিনা সেটিও একটি প্রশ্নসাপেক্ষ বিষয়।
হিরো আলমের বদলে যাওয়ার গল্পে তিনি বলেছিলেন, ‘আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে থাকেন। আমি ধৈর্য ধরেছি। মানুষ একসময় আমি কোনোকিছু করলেই তুচ্ছতাচ্ছিল্য করত, গালি দিত— এটা আমি বুঝতে পারতাম; তারপরও লেগে থাকতাম। তবে আমি বিশ্বাস করতাম, শত্রুরাও আমাকে বুকে টেনে নেবে। মানুষের ভুল ভাঙবে। সেটা ভেঙেছে। আগামীতে আরও ভাঙবে।’
মানুষের ভুল ভাঙানোর প্রচেষ্টায় হিরো আলমরা সফল হবেন বিশ্বাস রাখাটাই প্রত্যাশিত। তবে বদলে যাওয়ার দুনিয়ায় যদি হিরো আলমের উত্থানের আচমকা পতন ঘটে কিংবা ঘটানো হয় সেটিই বরং দোষের এবং অপ্রত্যাশিত৷