রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে সমাবেশে যোগ দিতে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী ইতোমধ্যে নগরীতে পৌঁছেছেন।
শনিবার সকাল থেকেই সমাবেশে যোগ দিতে নাটোর, বগুড়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, জয়পুরহাট ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে নেতাকর্মীরা রাজশাহী মহানগরীর হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পৌঁছান।
সমাবেশস্থলে বিএনপির শত শত নেতাকর্মী মিছিল ও স্লোগান দিচ্ছেন। সকাল ৯টার দিকে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে সমাবেশস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।
বৃহস্পতিবার আগে থেকেই নগরীতে পৌঁছানো নেতাকর্মীরা ভেন্যু সংলগ্ন ঈদগাহ মাঠে অবস্থান নেন।
জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সমাবেশ শুরু হবে এবং এরই মধ্যে শুক্রবার রাতে নগরীতে পৌঁছেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে নগরী ও এর আশপাশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং নগরীর সব প্রবেশপথে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।
সাদা পোশাকেও পুলিশ পুরো এলাকায় টহল দিচ্ছে।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রফিকুল আলম বলেন, ‘সমাবেশকে কেন্দ্র করে কেউ যাতে কোনো নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং সমাবেশ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’
শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ১৭টি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে এবং পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশও দায়িত্ব পালন করছে।
এছাড়া নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভেন্যু এলাকায় বেশ কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে এবং একটি সাইবার ক্রাইম ইউনিট ওই ক্যামেরার মাধ্যমে সমাবেশস্থলের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজশাহীর সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বুধবার থেকে বিভিন্ন বিভাগের আওতাধীন জেলাগুলো থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের ট্রেন, ট্রাক, হিউম্যান হলার, অটোরিকশা, থ্রি-হুইলার, মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাসসহ অন্যান্য যানবাহনে শহরে আসতে দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার থেকে রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা ধর্মঘট পালন করায় যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
এছাড়া শুক্রবার বিকালে রাজশাহী অটোরিকশা মালিক সমিতিও অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দেয়। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, তাদের সমাবেশে জন সমুদ্রে বাধা দিতেই এই ধর্মঘট।
চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল, ফরিদপুর, সিলেট ও কুমিল্লায় পূর্বে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ায় রাজশাহীতে শনিবারের সমাবেশটি বিভাগীয় পর্যায়ে বিএনপির ৯ম সমাবেশ।
সিলেট, ফরিদপুর, বরিশাল, রংপুর ও খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের আগেও একই ধরনের ধর্মঘট কর্মসূচি দেয়া হয়, তবে দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক সব বাধা অতিক্রম করে সমাবেশে অংশ নেন।
চলমান আন্দোলনের গতি অব্যাহত রাখার পদক্ষেপের অংশ হিসেবে গত ২৭ সেপ্টেম্বর ১০টি বিভাগীয় শহরে ধারাবাহিক সমাবেশের ঘোষণা দেয় বিএনপি। আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় শেষ সমাবেশের মধ্য দিয়ে বিভাগীয় কর্মসূচি শেষ করবে দলটি।
আয়োজকরা বলছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ; ভোলা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও যশোরে পূর্বে পুলিশের অভিযানে দলের পাঁচ নেতাকর্মীর মৃত্যু এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করতেই সমাবেশের আয়োজন।
বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই আগামী জাতীয় নির্বাচন কোনো রাজনৈতিক সরকারের অধীনে নয়, বরং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। তবে সংবিধান অনুযায়ী তা সম্ভব নয় উল্লেখ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।