রাজশাহীতে চাঁদাবাজির মামলার ১২৩ জন আসামিকে নিয়ে একটি তালিকা তৈরি হয়েছে। এই তালিকাটি ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোড়ন। এটিকে ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ দাবি করে রাজশাহী মহানগর বিএনপির নেতারা অভিযোগ করেছেন, এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত প্রশাসনিক অপচেষ্টা, যার মূল উদ্দেশ্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা।
গত রোববার (২৭ জুলাই) দুপুরে রাজশাহীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নগরীর বোয়ালিয়া (পশ্চিম) থানা বিএনপির সভাপতি শামছুল হোসেন মিলু বলেন, ১২৩ জনের যে তালিকাটা ঘুরছে, সেটা আমি নিজের চোখে দেখেছি। সেখানে বোয়ালিয়া থানার ওসি সাহেবের স্বাক্ষর রয়েছে। আমার কাছে সেই কপি আছে। এটা ওসি সাহেব ষড়যন্ত্র করে করেছেন। প্রশাসনের প্রেসক্রিপশনে এই মামলা হয়েছে।
তালিকায় নাম থাকা রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব এমদাদুল হক লিমন অভিযোগ করেন, এই তালিকায় প্রকৃত অপরাধীদের পাশাপাশি নিরীহ ব্যক্তিদের নাম ঢুকে গেছে। সামনে জাতীয় নির্বাচন, তাই দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই এ ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে। বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের ত্যাগী নেতাদের বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র আমরা কেউ মেনে নেব না।
তিনি প্রশাসনের প্রতি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
এ বিষয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) পক্ষ থেকে সরাসরি কিছু না জানালেও, অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) গাজিউর রহমান বলেন, যে তালিকার কথা বলা হচ্ছে, সেটি আমি সুনির্দিষ্টভাবে জানি না। সাধারণত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের তালিকা বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তৈরি করে, যা পরে পুলিশ যাচাই-বাছাই করে। চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীরা যতই প্রভাবশালী হোক, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। জনগণের নিরাপত্তায় আমরা আপসহীন থাকব।
তিনি আরও বলেন, দলীয় পরিচয় বড় নয়-অপরাধী অপরাধীই, সে যেই হোক না কেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, তালিকাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কয়েকজন দোষী থাকতে পারে, তবে এতজনকে একসাথে অভিযুক্ত করা অযৌক্তিক। এটা প্রশাসনের একটি অংশের চক্রান্ত, যারা দেশে আবার স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে।
অন্যদিকে রাজশাহী মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি এমাজ উদ্দিন মণ্ডল জানান, তালিকায় যাদের নাম এসেছে, তাঁদের আমাদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এসব ব্যক্তিদের সঙ্গে যেন কোনো সম্পর্ক না রাখেন।
এই তালিকা ঘিরে রাজনৈতিক নেতাদের অভিযোগ এবং পুলিশের বক্তব্যের মধ্যে একটি স্পষ্ট আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, তালিকা কতটা নিরপেক্ষভাবে তৈরি হয়েছে এবং এর পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব কতটা কাজ করেছে। সামনে জাতীয় নির্বাচন থাকায় বিষয়টি আরও স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে। এখন দেখার বিষয়, এই বিতর্ক কীভাবে মীমাংসিত হয় এবং প্রশাসন কতটা স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতার সঙ্গে এর সমাধান করতে পারে।