দেশের জনগণ বিএনপিকে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ দিলে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘‘এই বিচার যেকোনো মূল্যে সুষ্ঠুভাবে করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের অন্যায় আর না ঘটে।’’
রোববার (১৬ মার্চ) রাজধানীর গুলশানের হোটেল লেকশোরে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর উদ্যোগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সেখানে ‘বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম, খুনের শিকার পরিবার ও ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং ঈদ উপহার বিতরণ’ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তারেক রহমান বলেন, ‘‘একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমাদের প্রত্যাশা, সামনে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। জনগণ নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেবে কারা সরকার গঠন করবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আগামী দিনে যে দলই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পাক, তাদের অবশ্যই নির্যাতিত পরিবারগুলোর প্রতি সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘যারা দেশের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে প্রাণ দিয়েছেন, যারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন—তাদের হত্যার বিচার করতে হবে। যেকোনো মূল্যে এই বিচার নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের অন্যায় করার সাহস না পায়।’’
তারেক রহমান সতর্ক করে বলেন, ‘‘যদি আমরা এই বিচার করতে না পারি, তবে ভবিষ্যতে দেশে আবারও একই ধরনের অন্যায় সংগঠিত হতে পারে। তাই দেশের মানুষের কাছে এটি স্পষ্ট করতে হবে যে, অন্যায়কারীরা কেউ ছাড় পাবে না। যারা অন্যায় করেছে এবং জনগণের অধিকার হরণ করেছে, তাদের অবশ্যই আইন অনুযায়ী শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘বিএনপিকে যদি দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাহলে আমাদের রাজনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি একটি বড় লক্ষ্য হবে—বিগত স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যারা নির্যাতিত হয়েছেন, শহীদ হয়েছেন এবং বিশেষ করে জুলাই-আগস্টে যারা হত্যার শিকার হয়েছেন, তাদের বিচার নিশ্চিত করা। ইনশাআল্লাহ, আমরা এই বিচার করব।’’
অনুষ্ঠানে গুম, খুন ও নির্যাতনের শিকার পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ‘‘আপনাদের স্বজনরা যে আত্মত্যাগ করেছেন, তা শুধু আপনাদের জন্য নয়—সমগ্র জাতির মুক্তির জন্য। তাদের হারানোর মূল কারণ ছিল দেশের মানুষের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা। পাশাপাশি অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করাও আমাদের দায়িত্ব।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি এবং আমার ভাই আরাফাত রহমান কোকো আপনাদেরই অংশ। বিগত ১৬-১৭ বছর ধরে বহু পরিবার স্বজন হারিয়েছে, বহু মানুষ নির্যাতিত হয়েছে। এমন অনেকেই আছেন, যারা নিজেরাই গুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আজকের বাংলাদেশ তাদের আত্মত্যাগের কারণেই মুক্ত হয়েছে।’’
‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহ-সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর প্রধান উপদেষ্টা মো. আবুল কাশেম, মোস্তফা জামান-ই সেলিম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, গুমের শিকার বিএনপির গণশিক্ষা বিষয়ক সহ-সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে গুম ও নির্যাতনের শিকার পরিবারের সদস্যরা তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এবং বিচার দাবি করেন।