রবিবার, জানুয়ারি ১৯, ২০২৫

প্রত্যাবাসন ও গণহত্যার বিচার নিয়ে রোহিঙ্গাদের ধৈর্য ধরার আহ্বান উজরা জেয়ার

১৯ জানুয়ারি, ২০২৫, ০১:৩৬ পূর্বাহ্ণ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের বেসামরিক নিরাপত্তা গণতন্ত্র ও মানবাধিকার-বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া এবং দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন এবং রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যার বিচারের জন্য ধৈর্য ধরতে রোহিঙ্গাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বুধবার (১২ জুলাই) কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিনিধি দল। এসময় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর একটি প্রতিনিধি দলের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এই আহ্বান জানান।

অপর দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া ১২ লাখের অধিক রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন। বিকেলে কক্সবাজারে শরণার্থী কমিশনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠককালে তিনি রোহিঙ্গাদের নতুন একটি ডোনেশনের আশ্বাস দেন। বৈঠকে জানানো হয় এ বছর রোহিঙ্গাদের খাদ্যপণ্যের সহায়তা প্রতি রোহিঙ্গা পিছু মাসিক ১২ ডলার থেকে ৮ ডলার করেছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী এই ডোনেশনের আশ্বাস দেন বলে জানিয়েছেন শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাশন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক অধিকার নিরাপত্তা এবং নিজেদের ভিটেমাটিতে ফিরে যেতে চায় জানিয়ে রোহিঙ্গারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলকে জানান, তারা এখন বাংলাদেশের বোঝা হয়ে গেছে। তাই তারা যত দ্রুত সম্ভব নিজ দেশে ফিরে যেতে চায় এবং মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যার বিচার চায়।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া রোহিঙ্গাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে তিনি রোহিঙ্গাদের ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানান। তাদের বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে অবশ্যই মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিচারের মুখোমুখি করবে এবং এর বিচার অবশ্যই হবে। রোহিঙ্গারা যাতে নিজ দেশে সম্মান নিরাপত্তা ও অধিকার নিয়ে ফিরে যেতে পারে সে ব্যপারে যুক্তরাষ্ট্র সরকার সব সময় মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বের প্রতিনিধি দল বুধবার দুপুরে কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে ১১ নাম্বার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলের সাথে এই মতবিনিময় করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের এই কর্মকর্তা এ সময় রোহিঙ্গারা বর্তমানে কি অবস্থায় রয়েছেন তা জানতে চান। ক্যাম্পে বিদ্যমান সমস্যাগুলোর খোঁজখবর নেয়ার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাশার কথাও তারা শুনেন। মতবিনিময়কালে রোহিঙ্গাদের শিক্ষা কার্যক্রম, তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, স্বদেশে প্রত্যাবাসন এবং ক্যাম্পে বিদ্যমান নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে তিনি কথা বলেন। মতবিনিময়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১২ জন পুরুষ এবং ১০ জন নারী উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় রোহিঙ্গাদের জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান মাস্টার জুবায়ের একটি অনুরোধপত্র দেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়াকে। পরে মার্কিন প্রতিনিধি দলটি আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম পরিচালিত রোহিঙ্গা সাংস্কৃতিক স্মৃতি কেন্দ্র এবং ইউএনএফপিএ কর্তৃক পরিচালিত নারী ও মেয়েদের নিরাপদ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।

এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের বেসামরিক নিরাপত্তা গণতন্ত্র ও মানবাধিকার-বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া এবং দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু বুধবার সকালে কক্সবাজারে এসে পৌঁছান। উজরা জেয়ার নেতৃত্বে মার্কিন প্রতিনিধি দল বিশেষ বিমানে করে সকাল নয়টায় কক্সবাজারে এসে পৌঁছান। সকাল পৌনে এগারোটার দিকে প্রতিনিধি দল উখিয়া বালুখালী ৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আসেন। সেখানে ইউএনএইচসিআর পরিচালিত রোহিঙ্গাদের রেজিস্ট্রেশন সেন্টার পরিদর্শন করেন। পরে সেখানে জাতিসঙ্ঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি পরিচালিত রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন খাদ্য পণ্য সরবরাহ প্রতিষ্ঠান ই ভাউচার সেন্টার পরিদর্শন করেন। উজরা জেয়ার নেতৃত্বে মার্কিন হাই প্রোফাইলের এই প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গা কাম্পে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাথে সরাসরি আলাপচারিতার পাশাপাশি নিউট্রিশন সেন্টার, কালচারাল মেমোরি সেন্টার ঘুরে দেখেন ও কক্সবাজারে কর্মরত প্রায় সব আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করেন।

বিকেলে কক্সবাজারে সরকারের শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করেন আন্ডার-সেক্রেটারি উজরা জেয়া ও অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু। কক্সবাজার সফরে তাদের সাথে ছিলেন ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ও দক্ষিণ এশিয়ায় শরণার্থীবিষয়ক সমন্বয়কারী ম্যাককেঞ্জি রোয়েসহ ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল।

spot_img

সর্বশেষ

আরও সংবাদ