লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:
লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদী থেকে ভেসে আসা অজ্ঞাত তরুণীর মরদেহটি ভোলা সরকারি কলেজের ছাত্রী সুকর্না আক্তার ইপ্সিতার (২১) বলে শনাক্ত করেছেন তার বাবা।
সোমবার (২৩ জুন) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করে লক্ষ্মীপুর সদর থানার ওসি আবদুল মোন্নাফ জানান,
এরআগে ২২ জুন বিকেলে জামাকাপড় ও ছবি দেখে মেয়েকে শনাক্ত করেন তার বাবা। মরদেহটি ২০ জুন রাত ১১টার দিকে সদর উপজেলার বুড়িরঘাট এলাকায় মেঘনা নদী থেকে উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ।
নৌ-পুলিশ জানায়, উদ্ধার করা মরদেহের নাম-পরিচয় না পাওয়ায় তা ময়নাতদন্ত শেষে আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলাম- লক্ষ্মীপুর এর কাছে দাফনের জন্য হস্তান্তর করা হয়।
নৌ-পুলিশ ফাড়ি সূত্র জানায়, এর আগে, ১৭ জুন ভোলা থেকে ঢাকাগামী কর্ণফুলী-৪ লঞ্চ থেকে নদীতে ঝাঁপ দেন ইপ্সিতা। পরিবারের দাবি, লঞ্চের কেবিনে ‘জসিম’ নামে এক ব্যক্তির বুকিংয়ে উঠেছিলেন তিনি। মোবাইলে কারও সঙ্গে উত্তেজিত কথোপকথনের পর নদীতে ঝাঁপ দেন, কিংবা তাকে ফেলে দেওয়া হয়—এ নিয়েও রয়েছে সন্দেহ।
লঞ্চের এক নারী যাত্রী ৯৯৯-এ কল দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ করেন। পরে মুন্সিগঞ্জে পুলিশ দু’জন লঞ্চ স্টাফ ও অভিযোগকারী নারীকে জিজ্ঞাসাবাদে নেয়, তবে প্রমাণের অভাবে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইপ্সিতার বাবা ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের নবীপুর গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ রানা লক্ষ্মীপুর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। পুলিশ ও নৌ-পুলিশ যৌথভাবে তদন্ত করছে।
মরদেহে আঘাতের চিহ্ন ছিল বলে জানিয়েছে লক্ষ্মীপুর মজুচৌধুরী ঘাট নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. আজিজুল হক ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মোন্নাফ।
ইস্পিতার বাবা জানান, তার মেয়ে বাড়ি থেকে টিউশনি করতে যাওয়ার কথা বলে বের হয়। এরপর লঞ্চে এক তরুণীর নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার খবর পেয়ে তিনি কর্ণফুলী লঞ্চের ভোলা অফিসে যান। সেখানে ছবির মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়, ঝাঁপ দেওয়া তরুণীই তার মেয়ে।
তিনি বলেন, মেয়েটি ‘জসিম’ নামে এক ব্যক্তির নামে বুকিং দেওয়া কেবিনে উঠেছিল। ভাড়া চাইলে সে জানায়, বুকিং দেওয়া ব্যক্তি পরিশোধ করবে। এরপর মোবাইল ফোনে কারও সঙ্গে উত্তেজিতভাবে কথা বলার পরই সে নদীতে ঝাঁপ দেয়।
মাসুদ রানা অভিযোগ করেন, “আমার মেয়ে কেন ঢাকাগামী লঞ্চে উঠল, তা তদন্তে বের করা দরকার। প্রশাসন মোবাইল ট্র্যাকিং ও কললিস্ট বিশ্লেষণ করলেই বিস্তারিত জানা যাবে।
কেউ তাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে থাকলে, বা হত্যা করে থাকলে তার বিচার চাই।”
কর্ণফুলী-৪ লঞ্চের সুপারভাইজার নান্টু বাবু জানান, ইলিশা ঘাট ছাড়ার পর কালিগঞ্জ অতিক্রম করে কিছু দূর গেলে খবর আসে এক তরুণী তৃতীয় তলা থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছেন। লঞ্চ ফিরে গিয়ে উদ্ধারচেষ্টা চালায়। একবার তরুণীকে নদীতে ভাসতে দেখা গেলেও কাছে যাওয়ার আগেই সে চোখের আড়াল হয়ে যায়। কোস্টগার্ডকে জানিয়ে লঞ্চ আবার ঢাকার পথে রওনা দেয়।
ব্রাদার্স নেভিগেশন কোম্পানির ব্যবস্থাপক আলাউদ্দিন জানান, ঘটনার পর লঞ্চে থাকা অন্য এক নারী ৯৯৯-এ ফোন করে জানান, ওই তরুণী ধর্ষণের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন। পরে মুন্সিগঞ্জে লঞ্চটি পৌঁছালে পুলিশ দুইজন স্টাফ ও অভিযোগকারী নারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয়। প্রাথমিকভাবে তাদের সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
লক্ষ্মীপুর মজুচৌধুরী ঘাট নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. আজিজুল হক জানান, উদ্ধারের সময় মরদেহে কালচে দাগ ছিল। নিহতের বাবা বাদী হয়ে লক্ষ্মীপুর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
লক্ষ্মীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মোন্নাফ বলেন, নৌ-পুলিশের পক্ষ থেকে একটি হত্যা মামলা নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি তদন্তাধীন।