রাজধানীর ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি এন্ডোস্কোপি করাতে গিয়ে অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে মৃত্যু হয়েছে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রাহিব রেজার (৩১)।
পরিবার বলছে, মারা যাওয়ার মতো অবস্থা নিয়ে ল্যাবএইড হাসপাতালে যায়নি রাহিব। অথচ বিশেষজ্ঞ কাউকে না ডেকে তার শারীরিক অবস্থা না বুঝেই অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে এন্ডোস্কোপি করা হয়েছিল তাকে। এসব হয়েছে হাসপাতালের অবহেলা আর চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসার কারণে। যার কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও কর্তব্যরত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আইনজীবীও নিয়োগ করা হয়েছে পরিবারের পক্ষ থেকে।
রাহিব রাজধানীর স্টার্টিক ইঞ্জিনিয়ারিং নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রোডাক্ট ম্যানেজার ও আইটি কনসালটেন্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সকালে ল্যাবএইড হাসপাতালের আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, পেটে গ্যাসজনিত সমস্যার কারণে রাজধানীর ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাবের (স্বপ্নীল) কাছে যান রাহিব রেজা। এরপর গত ১৫ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় ল্যাবএইডে এন্ডোস্কোপি করানোর পরামর্শ দেন ডা. স্বপ্নীল।
রাহিব রেজাকে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় খালিপেটে ল্যাবএইড হাসপাতালে আসতে বলা হয়। যথাসময়ে তিনি হাসপাতালে এলেও এন্ডোস্কোপি শুরু হয় রাত ১১টার দিকে। এর দেড় ঘণ্টা পরও রোগীকে বাইরে না আনা হলে একজন জোর করে এন্ডোস্কোপি রুমে ঢুকে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখতে পান। এরপর অবস্থা জটিল হলে রাহিব রেজাকে ল্যাবএইড হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়। সবশেষে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
এদিকে ধানমন্ডি ল্যাবএইড হাসপাতালে এন্ডোস্কোপি করাতে এসে রাহিব রেজার যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন।
এক বিবৃতিতে মন্ত্রী বলেন, রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে এন্ডোস্কোপি করাতে এসে একজনের মৃত্যুর ঘটনাটি আমাদের নজরে এসেছে। এরপর বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সেখানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পরিদর্শনের জন্য একটি টিম পাঠানো হয়েছে। টিমের দেওয়া রিপোর্ট দেখে আমরা সে বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
ডা. সামন্ত লাল বলেন, দোষী প্রমাণিত হলে শুধু হাসপাতাল বা ক্লিনিকের বিরুদ্ধেই কঠোর ব্যবস্থা নয়, বরং ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলাকারীদেরও কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। যাতে পরবর্তীতে আর কোনো প্রতিষ্ঠান এরকম গুরুদায়িত্বে অবহেলা করতে সাহস না পায়। চিকিৎসায় অবহেলা পাওয়া গেলে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।