শরীয়তপুর প্রতিনিধিশরীয়তপুরে জাজিরায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ ও শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় র্যাব ও পুলিশের অভিযানে প্রধান আসামী, বিলাশপুর ইউপি চেয়ারম্যান কুদ্দুস বেপারি সহ ৮ জন গ্রেফতার হয়েছে।
এজাহার নামীয় ৮৮ জনসহ ৮০০/১০০০ জনকে অজ্ঞাত নামা আসামি করে জাজিরা থানার উপপরিদর্শক সঞ্জয় কুমার দাস বাদী হয়ে জাজিরা থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
শনিবার সকালে উপজেলার বিলাসপুর ইউনিয়নের মুলাই বেপারী কান্দি ও দুর্বাডাংগা এলাকায় বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান কুদ্দুস বেপারী ও পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী জলিল মাদবর গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষর ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি দুলাল আকন্দ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, বিলাশপুরের গতকাল ২ গ্রুপের মধ্যে ককটেল বিস্ফোরণ ও সংঘর্ষর ঘটনায় পুলিশ ২ গ্রুপের ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে। আর পুলিশ বাদী হয়ে রবিবার সকালে জাজিরা থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আর র্যব এর একটি দল দিবাগত রাত ১ টার দিকে ঢাকা থেকে মামলার প্রধান আসামী কুদ্দুস বেপারিকে গ্রেফতার করেছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। আর বোমা ও বোমার উপকরণ এর উৎস নিয়ে পুলিশ ও গোয়েন্দা টিম কাজ করছে।মাদারীপুর র্যাব ৮ মাদারীপুর এর কোম্পানি কমান্ডার, পুলিশ সুপার মোঃ মনির হোসেন, কুদ্দুস বেপারী গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে মুঠোফোনে জানান, র্যাব ৮ ও র্যাব ৩ এর যৌথ অভিযানে ঢাকার মোমিনবাগ এলাকা থেকে দিবাগত রাত একটার দিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ, স্থানীয় ও গতকালের সংঘর্ষ ভিডিও ফুটেজ সুত্রে জানা যায়, কুদ্দুস বেপারী জাজিরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বিলাশপুর ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান, তিনি শরীয়তপুর ১ আসনের সংসদ সদস্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ইকবাল হোসেন অপুর সমর্থক। অন্যদিকে জলিল মাদবর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি ও বিলাশপুর ইউপির পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী, তিনি শরীয়তপুর ১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হকের সমর্থক )] এই দুই সংসদ সদস্যের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে শরীয়তপুর এক আসনে বেশ কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কুদ্দুস ও জলিল এই দুই সাবেক সাংসদ সদস্য সমর্থক হওয়ায় স্থানীয় আধিপত্য নিয়ে এই দুজনের মধ্যে পূর্বেও বেশ কয়েকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কুদ্দুস ও জলিলের বিরুদ্ধে বোমা বিস্ফোরণ, হত্যা মামলাসহ শরীয়তপুরে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। শনিবার সকালে উপজেলার বিলাসপুর ইউনিয়নের মুলাই বেপারী কান্দি ও দুর্বাডাঙ্গা এলাকায় কুদ্দুস বেপারী ও জলিল গ্রুপের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ঘটে। যার কিছু ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এই সময় সিনেমা কায়দায় অন্তত শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ককটেল বিস্ফোরণের প্লিন্টারের আঘাতে আনুমানিক ১৬ জন আহত হন। এর মধ্যে বেশিরভাগই গ্রেফতার এর ভয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চলে যান।অন্যদিকে ককটেলের আঘাতে দুইজন গুরুতর আহত হওয়ায় শনিবার রাতে তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে মো: মারুফ (২৫) নামে একজনের হাতের কজ্বি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং হাসান মুন্সি (৫৫) নামে একজনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে প্রিন্টারের আঘাত লেগেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ১৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফুটেজ ফেস দ্যা পিপল নিউজ-এর হাতে এসেছে। গোপনে ধারণ করা ১৫ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, লাল বালতি হাতে নিয়ে কয়েকজন ব্যক্তি এদিক-সেদিক দৌড়াচ্ছেন এবং সেই বালতি থেকে ককটেল বের করে ছুড়ে মারছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের মাথায় হেলমেট পরিহিত ছিল। অপর পক্ষ থেকেও তাদেরকে বোমা ছুঁড়ে মারতে দেখা গেছে। এ সময় একাধিক ককটেল বিস্ফোরিত হয়। ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাতে ঘটাতে দুইটি দলই বিভিন্ন সময় সামনে এগিয়ে আসে এবং পিছু হটে। এই পুরো ঘটনা সিনেমা কায়দায় ঘটতে দেখা যায়।এই বিষয়ে পুলিশ সুপার মো: নজরুল ইসলাম জানান, মূলত ঈদের সময় এই দুই গ্রুপের আত্মীয়-স্বজনরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রামে এসেছিলেন। এ সময় দলের লোকজন বেশি হওয়ায় তারা নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন এবং সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। তাছাড়া, পূর্বেও এই উপজেলায় এ ধরনের বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে এবং ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ এ মুহূর্তে অভিযান চালাচ্ছে, যাতে আর কোথাও ককটেল লুকানো না থাকে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।